মেয়রের ডেঙ্গু দমন অভিযানে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২১, ১৮:৫৭ | প্রকাশিত : ২৮ জুলাই ২০২১, ১৭:২২

চলতি বর্ষা মৌসুমে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ইতোমধ্যে রাজধানীতে এক দিনে দেড় শতাধিক আক্রান্তের রেকর্ড হয়েছে। এ অবস্থায় ডেঙ্গু দমনে অভিযানে নেমেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। কিন্তু ডেঙ্গুদমন অভিযানে উপক্ষিত ছিল করোনা মহামারি ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা।

কোভিড-১৯- এর (করোনাভাইরাস) সংক্রমণ যখন ভয়ানক আকার ধারণ করেছে, তখন ট্রাকের মধ্যে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে জনগণকে ডেঙ্গুর বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করছে সিটি করপোরেশন। অথচ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনার নির্দেশনা অনুযায়ী দুজন ব্যক্তির মাঝে অন্তত তিন থেকে ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বিষয়টি হতাশ করেছে নাগরিকদের। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে এ ধরনের কাজ অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দাযোগ্য।

বুধবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে করপোরেশনের মশক নিধন অভিযানে নামে উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ।

আয়োজনে উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। তার নেতৃত্বে করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন। যুক্ত হন, সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

ডেঙ্গু দমন অভিযানের অংশ হিসেবে জনগণকে সচেতন করতে চায় উত্তর সিটি। তারই অংশ হিসেবে জনগণের দোড়গোড়ায় গিয়ে তাদের কাছে ডেঙ্গুর বিষয়ে সতর্কতা জরুরি বলে মনে করছে করপোরেশন।

আয়োজনের অংশ হিসেবে ট্রাকে করে জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন সতর্ক বার্তা প্রচার করছেন। এ সময় তাদের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও ছিল না কোনো সামাজিক দূরত্ব। একেকটি ট্রাকে ২০ জন পর্যন্ত মানুষ ছিলেন, যা সামাজিক দূরত্বে সংজ্ঞা ভঙ্গ করে।

আবার জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এ আয়োজনে সম্পৃক্ত করা হয় অভিনেতা মোশাররফ করিমকে। নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এই অভিনেতাকে আয়োজনে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

এখানেও ঘটেছে বিপত্তি। মোশাররফ করিমকে দেখতে লকডাউন ভেঙে সড়কে ছিল উপচে পড়া ভিড়।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ যেখানে ভয়াবহ অবস্থানে, সে অবস্থায় এ ধরনের আয়োজন কতটা যৌক্তিক- এ বিষয়ে জানতে উত্তর সিটি মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

তবে উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিমের ভাষ্য, জনগণের ডেঙ্গুর মতো বিপদ থেকে রক্ষা করতে তারা নিজেরা ঝুঁকি নিচ্ছেন।

সেলিম রেজা বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এটা করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকা শহরে আপনি যদি এখন ঘোরেন তাহলে দেখবেন, সব জায়গাতেই মানুষ বিভিন্ন কারণে বের হয়ে আসছেন। করোনার এই সময় ডেঙ্গু আমাদের জন্য একটা বিশাল বিপদ। আসলে এই বিপদের সময় আমরা যদি সচেতন না হই তাহলে গোটা নগরবাসী আরও বিপদে পড়ে যাবে। করোনা যোদ্ধা হিসেবে এবং ডেঙ্গু যোদ্ধা হিসেবে কাউকে না কাউকে রাস্তায় আসতে হবে।’

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দাবি, আয়োজনে থাকা সকলেই মাস্ক পরা অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসান নূর ইসলাম রাস্টন যখন ট্রাকে চরে জনগণকে এডিস মশার বিষয়ে সতর্ক করছিলেন, তখন ওই কাউন্সিলরের মুখেই মাস্ক ছিল না।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ‘ওখানে সবাই মাস্ক পরা আছে। চেষ্টা করছি, যতটা সম্ভব একটু দূরে দূরে থাকার। কিন্তু কোনো কোনো আয়োজনে মানুষজন একটু জড়ো হয়ে যায়। ডেঙ্গুর ব্যাপারে সবাই সচেতন করাটাও জরুরি।’

‘একটা আয়োজন করতে গেলে সেখানে কিছু কিছু মানুষের কিন্তু সম্পৃক্ততা চলে আসে। সেই সম্পৃক্ততায় স্বাস্থ্যবিধি ১৬ আনা হয়ত রক্ষা হয় না। কিন্তু প্রত্যেকেই মাস্ক পরা ছিল। ট্রাকে ঘুরে বেড়াইছে। এটা কাজের জন্য ঘুরে বেড়ানো। মানুষকে রক্ষা করার জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা যদি এই বিষয়টাকে (স্বাস্থ্যবিধি) বেশি হাইলাইটস করেন তাহলে ডেঙ্গুর বিষয়ে আমাদেরকে ঘরে বসে যাইতে হবে। তাহলে ডেঙ্গুর ব্যাপারে আমাদের কাজ করা বন্ধ করে দিতে হবে।’

এ ধরনের কার্যক্রম অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. লেলিন চৌধুরী।

ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘যে নামে, যারাই স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করবে, সেটি অগ্রহণযোগ্য। দায়িত্বশীল লোকরা যদি করে থাকে তাহলে তা আরও অগ্রহণযোগ্য। আমরা প্রত্যাশা করব, দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক, যারা দায়িত্বশীল জায়গায় রয়েছেন, তারা স্বাথ্যবিধি মানার ব্যাপারে জনগণের অনুকরণীয় হবে। কিন্তু তাদের কার্যকলাপে জনগণের মধ্যে স্বাথ্যবিধি মানার ব্যাপারে বা মাস্ক না পরার ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা আছে, তাহলে সেটি কিন্তু কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য না। এটি নিন্দাযোগ্য।’

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড ১৫৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যার মধ্যে একজন ছাড়া সবাই রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

বুধবার দুপুর ২টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম এ তথ্য জানান। এর আগে মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) একদিনে সর্বোচ্চ ১৪৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

ডা. নাজমুল ইসলাম আরও জানান, বর্তমানে সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে সর্বমোট ৫০৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে গতকালের হিসাব মতে সর্বমোট ৫০০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঢাকার বাইরে সবগুলো বিভাগ ও জেলা মিলে ৯ জন রোগী ভর্তি আছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৮জুলাই/কারই/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

রাজধানীতে দুই যুবকের আত্মহত্যা

কামরাঙ্গীরচর নাগরিক পরিষদ প্রতিনিধিদের সঙ্গে মেয়র তাপসের মতবিনিময়

মতিঝিলের ফুটপাতে পড়েছিল বৃদ্ধার মরদেহ

মিরপুর বিআরটিএ’তে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, ৪ দালালকে সাজা

খিলক্ষেতে ৬০ কোটি টাকার খাসজমি উদ্ধার

রাজারবাগের পুকুরে ডুবে পুলিশ সদস্যের মর্মান্তিক মৃত্যু, ধরা পড়ল সিসি ক্যামেরায়

চার নারী একসঙ্গে ওয়াশরুমে! সেই রাতে গুলশানে কী হয়েছিল, জানালেন ভুক্তভোগী

রাজধানীতে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নারীর আত্মহত্যা

সংসদ এলাকায় ড্রোন উড়িয়ে আটক সাবেক এমপিপুত্র, ছাড়া পেলেন মুচলেকায়

গুলশানে ‘মাতাল’ হয়ে মারামারিতে জড়ানো তিন তরুণী গ্রেপ্তার, বারের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :