কী নেই ফিরোজা বেগমের ডিজিটাল আর্কাইভে!

প্রকাশ | ২৯ জুলাই ২০২১, ১২:২১

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

১১-১২ বছরের মেয়ে। কলকাতার এইচএমভি স্টুডিওতে ভাই এবং মামার সঙ্গে গেছেন গানের অডিশন দিতে। রিহার্সাল রুমে ঢুকে সে দেখে ঘিয়ে রঙের পাজামা-পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি, চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা পরা এক ব্যক্তি বসে আছেন। সেই ব্যক্তি মন দিয়ে মেয়েটির গান শুনলেন। সেদিন বালিকার নিবেদনে ছিল, ‘যদি পরাণে না জাগে আকুল পিয়াসা’, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘কালো পাখিটা মোরে কেন করে জ্বালাতন’।

রিহার্সাল রুমের সেই ব্যক্তি মেয়েটির গান সেদিন শুনে তারিফ করে বলেছিলেন, ‘তোমরা দেখো, এই মেয়ে একদিন খুব ভালো শিল্পী হবে’। সেদিনের সেই ছোট্ট মেয়েটি ছিলেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি নজরুলসংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগম। মেয়েটির মামা পরে তাকে জানিয়েছিলেন, রিহার্সাল রুমে বসে যে ব্যক্তি তার গান মনোযোগ সহকারে শুনেছিলেন এবং তারিফ করেছিলেন, তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন!

বুধবার ছিল সেই প্রয়াত কিংবদন্তি শিল্পী ফিরোজা বেগমের জন্মদিন। ১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই জন্ম ফিরোজার। বাঙালির সংগীত, সংস্কৃতির অন্যতম বিশিষ্ট মুখ তিনি। সব ধরনের গান গাইলেও মূলত নজরুলগীতির শিল্পী হিসেবেই গণমনে তিনি সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন। সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশেই তিনি নজরুলসংগীতের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন।

নজরুলগানের কিংবদন্তি এই শিল্পীর জন্মদিনে তার উপর এক অসাধারণ ডিজিটাল আর্কাইভেরও সূচনা হয়েছে। বিশেষ দিনেই আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করল ‘ফিরোজা বেগম আর্কইভ’ (www.ferozabegum.com)। এই বিশিষ্ট ও ব্যাপক আয়োজনের নেপথ্যে রয়েছেন শিল্পীরই ভাইঝি তথা বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী সুস্মিতা আনিস এবং তার পরিবার।

কী কী থাকছে এই ডিজিটাল আর্কাইভে? থাকছে শিল্পীর জীবনী, তাঁর প্রাপ্ত পুরস্কারের তালিকা, থাকছে তাঁর সমগ্র গানভাণ্ডার- নজরুলগান, রবীন্দ্রসংগীত, আধুনিক বাংলা গান, কাব্যগীতি, গীত ও গজল। শ্রোতারা এখানে শুনতে পাবেন তাঁর সব গান। রয়েছে গানের যাবতীয় তথ্যও। রিলিজের সাল, সুরকার-গীতিকারের নাম, প্রকাশক কোম্পানির নাম। রয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দুর্লভ সংগ্রহ। টেলিভিশন থেকে রেডিও, মঞ্চের অনুষ্ঠান থেকে সাক্ষাৎকার। সবই মিলবে এক ক্লিকে। থাকছে বিভিন্ন বাংলা-ইংরেজি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর সাক্ষাৎকার, অনুষ্ঠান সমালোচনা, প্রতিবেদন।

আর্কাইভে থাকছে ফিরোজা বেগমের ফোটোগ্যালারিও। থাকছে এমন ছবিও, যাতে ধরা রয়েছে তাঁর পারিবারিক জীবন, সংগীতজীবন। থাকছে বিভিন্ন দিকপালদের সঙ্গে শিল্পীর ছবি। থাকছে বিভিন্ন প্রজন্মের শিল্পীর তাঁকে ঘিরে স্মৃতিকথা। পাশাপাশি রয়েছে শিল্পীর হাতে লেখা নোটবুকের কপি, চিঠিপত্র। আছে তাঁর স্বামী প্রখ্যাত সুরকার কমল দাশগুপ্তের জীবনী, তাঁর গানের খাতার প্রতিলিপি, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন, গান এবং ছবি।  

ফিরোজা বেগমের নামাঙ্কিত এই আর্কাইভের নির্মাণ প্রসঙ্গে তাঁর ভাইঝি সুস্মিতা আনিস জানান, এই কাজ আমাদের কাছে খুব সম্মানের, গর্বের। এমন একজন কিংবদন্তি শিল্পীকে পরিবারের একজন হিসেবে পাওয়া সৌভাগ্যের। কাছ থেকে তাঁকে পেয়েছি, তাঁর কাছে গান শিখেছি। এই কাজ আমার গুরুদক্ষিণাও বলতে পারেন। খুবই যত্ন নিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তোলা স্বপ্নের এই ডিজিটাল আর্কাইভ।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক ছাদের নীচে ওঁনার কাজগুলোকে নথিভুক্ত করা সত্যিই খুবই দুঃসাধ্য কাজ ছিল। পরিবারের সহযোগিতায় তা সম্ভব হল। আগামী দিনে আরও অনেক কিছু সংযোজিত হবে। ভবিষ্যতে কোনো গুণগ্রাহীর কাছে থেকে পাওয়া কোনো তথ্য, ভিডিও বা গান এই আর্কইভে সংযোজনের পরিকল্পনাও রয়েছে। ভবিষ্যতে যারা ওঁনার গান নিয়ে চর্চাসহ পড়াশোনা করবেন, তাঁদের জন্য এই আর্কাইভ এক সোনার ভাণ্ডার হয়ে রইল।’

প্রসঙ্গত, বুধবার ফিরোজা বেগমের স্বামী তথা প্রখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব কমল দাশগুপ্তেরও জন্মদিন ছিল। কমল দাশগুপ্তের জন্ম ১৯১২ সালের ২৮ জুলাই। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রথিতযশা সংগীতশিল্পী, প্রসিদ্ধ সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন তিনি। নজরুল ইসলামের বহু গানেও তিনি সুরারোপ করেছেন।

ঢাকাটাইমস/২৯জুলাই/এএইচ