বয়স কমিয়ে পদ বাগানোর চেষ্টায় ছাত্রলীগ নেতা

প্রকাশ | ২৯ জুলাই ২০২১, ২০:৩৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গাজীপুরের টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোশিউর রহমান সরকার বাবুর বিরুদ্ধে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং শিক্ষা সনদ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী। বয়স পার হয়ে যাওয়ায় সনদপত্র ও এনআইডি জালিয়াতির মাধ্যমে ছাত্রলীগের সভাপতির পদ বাগিয়ে নেওয়ার জন্য মাঠে নেমেছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের পর গত সাড়ে তিন বছর ধরে গাজীপুর মহানগর কমিটি দেয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

সম্প্রতি গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠনের নেতৃত্বে আসতে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৯ বছর। সংগঠনটির চর্চা হলো সম্মেলনের তারিখ থেকে বয়স গণনা করা হয়। 

২০০৩ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় অংশ নেন বাবু। অথচ বাবুর মাধ্যমিক পরীক্ষার সনদে দেখা যায় তার জন্ম ১৯৮৮ সালের ১ নভেম্বর। একই জন্মতারিখ ব্যবহার করা হয় তার প্রথম এনআইডিতে। এই এনআইডি ও শিক্ষা সনদ অনুযায়ী সম্মেলনের দিনে বাবুর বয়স ছিল ২৯ বছর তিন মাস চার দিন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাবুর বয়সসীমা পার হয়ে যাওয়ায় সভাপতি হতে জালিয়াতির আশ্রয় নেন। পরে জালিয়াতির মাধ্যমে আরেকটি এনআইডি কার্ড তৈরি করেন তিনি। এতে আগের শিক্ষা সনদ ও এনআইডিতে থাকা জন্মসাল এক বছর কমিয়ে ১ নভেম্বর ১৯৮৯ সাল করা হয়। এভাবেই জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেকে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন তিনি।

এছাড়া ২০১৮ সালে গাজীপুর মহানগর পুলিশের একটি মাদক তালিকায় নাম উঠে আসে ছাত্রলীগ নেতা বাবুর। ওই তালিকার পাঁচ নম্বরে ছিলেন টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোশিউর রহমান বাবু। এ নিয়ে তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।

টঙ্গীর একাধিক সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতা জানান, ২০০৯ সালে সাবেক টঙ্গী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন আউচপাড়ার মোশিউর রহমান সরকার বাবু। তার বাবা নুরুল ইসলাম বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা টঙ্গীর হাসানউদ্দিন সরকারের কাছের লোক হওয়ায় তখন পদবঞ্চিত হন বাবু।

কিন্তু ২০১৫ সালে ভাগ্য খুলে যায় তার। মোশিউর রহমান সরকার বাবুকে টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পদ পাওয়ার পরই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বাবু। নিজেকে আড়ালে রেখে ঘনিষ্ঠদের দিয়ে শুরু করেন মাদক কারবার। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে মাদকসহ গ্রেপ্তার হন বাবুর একাধিক কর্মী।

এছাড়াও থানা ছাত্রলীগের পদ পেয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের কমিটিতে স্থান দিয়েছেন সাবেক ছাত্রদল কর্মী, হত্যা মামলার আসামি, মাদক ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারীসহ নানা অপরাধে জড়িতদের। তার বিরুদ্ধে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগও রয়েছে। সম্প্রতি টঙ্গীর আলোচিত কিশোর গ্যাং ‘ডি- কোম্পানি’র ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ডি-কোম্পানির প্রধান সজীব চৌধুরী পাপ্পু সরকার বাবুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মাদক, অস্ত্র ও মারামারিসহ একাধিক মামলায় কারাগারে রয়েছেন সজীব চৌধুরী পাপ্পু। 

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোশিউর রহমান সরকার বাবু বলেন, ‘আমার আসল বয়স ১ নভেম্বর ১৯৮৮। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে বয়স সীমা ২৯ বছর। গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলনের সময় আমার বয়স তিন মাস বেশি ছিল। আমি চাই না তিন মাসের জন্য কোনো ঝামেলা হোক। তাই এটা সংশোধনের জন্য গাজীপুর আদালতে একটি আবেদন করি। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি রায়ের কপি ইসিতে জমা দিয়ে বয়স এক বছর কমিয়ে নতুন করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করি।’

বাবু বলেন, ‘আমি তো জালিয়াতি করিনি। আদালতের রায়ের মাধ্যমে বয়স পরিবর্তন করেছি।’

মাদক কারবারি ও কিশোর গ্যাং সদস্যদের পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা।’

(ঢাকাটাইমস/২৯জুলাই/কেএম)