শত্রুতায় কুপিয়ে শরীর থেকে পা বিচ্ছিন্ন

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ জুলাই ২০২১, ২১:২৩

মাদারীপুরের কালকিনিতে পূর্বশত্রুতার জেরে মিরাজ খাঁন (৪১) নামে একজনকে কুপিয়ে শরীর থেকে পা বিছিন্ন করেছে তার প্রতিপক্ষ। এই ঘটনায় মিরাজ খানের ছেলে নাজমুল খাঁনকেও (২২) মারাত্মক আহত করা হয়। বুধবার রাত পৌনে ৩টার দিকে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার পূর্ব এনায়েতনগর ইউনিয়নের কালাই সরদারেরচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা আহতদের রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে চিকিৎসক মিরাজ খান ও নাজমুল খানকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরণ করেন। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মিরাজ খাঁনের পা উদ্ধার করে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় ভুক্তভোগী পরিবার।

পুলিশ, পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি উপজেলার পূর্ব এনায়েতনগর ইউনিয়নের কালাই সরদারেরচর এলাকার মিরাজ খাঁ (৫০) ও তার ছেলে নাজমুল খাঁ (২২) দু’জনে বুধবার বিকালে একই ইউনিয়নের মৌলভীকান্দি গ্রামে নাজমুলের শ^শুরবাড়ি আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে বেড়াতে আসে। রাতের খাবার খেয়ে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। রাত পৌনে ৩টার দিকে দরজা ভেঙে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে একদল দুর্বৃত্তরা। পরে বাধা দিতে এলে পিটিয়ে আহত করা হয় নারীসহ ৫ জনকে। এ সময় মিরাজ ও তার ছেলেকে দুর্বৃত্তরা এলোপাথারি কোপাতে থাকে। মিরাজের বাম পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা গুরুতর অবস্থায় দুজনকে প্রথমে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাবা ও ছেলেকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে মিরাজ খাঁনের লোকজন ভোরে ক্ষিপ্ত হয়ে সমিতির হাট এলাকার কাসেম তালুকদারের ছেলে তাইজুল তালুকদারকে কুপিয়ে আহত করে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, আগামীতে পূর্ব এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কবির খান ও আফান কাজী গ্রুপের মধ্যে স্থানীয় প্রভাব বিস্তার নিয়ে রেষারেষি চলে আসছে। গত নির্বাচনেও এই দুই গ্রুপের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ও হামলা-মামলার ঘটনা ঘটেছে। আফান কাজী গ্রুপের সাথে একাট্ট করেছে স্থানীয় বাদল তালুকদার। যিনি গতবার পূর্ব এনায়েতনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন। আর কবির খানের স্ত্রীও চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন। পা বিচ্ছিন্ন হওয়া মিরাজ খান ও তার ছেলে নাজমুল খান কবির খান গ্রুপের সমর্থক বলেও জানা গেছে।

এ ব্যাপারে কাসেম তালুকদার বলেন, ‘আমরা এ ঘটনার সাথে জড়িত না। ফযরের নামাজ মসজিদে আদায় করে ছেলে নিয়ে ঘরে আসা মাত্র, ওরা দা দিয়ে কুপিয়েছে। এসময় ঘরে ডুকে দুইটি স্বর্ণের চেইন, তিন লাখ নগদ টাকা ও চারটি গরু নিয়ে যায়।’

এ ব্যাপারে কবির খান বলেন, ‘আফান কাজী, জামাল কাজীর লোকজন আমাদের লোকজনের উপর হামলা করেছে। রাতের আঘারে ঘুমন্ত মিরাজের পা আলাদা করে ফেলছে। এই ঘটনার সাথে আরো রাঘব-বোয়লরাও আছে। দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা হলে গ্রেপ্তার করতে হবে। এমন নির্মম ঘটনার বিচার চাই।’

আহত মিরাজের ছেলে নাজমুলের শাশুড়ি রেভা বেগম বলেন, ‘ঘরে ঢুকে মিরাজের পা কেটে বিছিন্ন করেছে এবং তাদের হামলায় আমরা সবাই আহত হয়েছি। তবে কারা এ হামলা চালিয়েছে স্পষ্ট করে বলতে পারব না। কারণ ওই সময় আমরা তাদের ক্লিয়ার করে কাউকে চিনি নাই।’

তবে আফান কাজী ও জামাল কাজী ঘটনার পর থেকে তাদের এলাকায় পাওয়া যায়নি। তাদের বাড়িতে গিয়েও অনেক খোঁজা-খুঁজি করা হয়েছে। কালকিনি থানার ওসি ইশতিয়াক আশফাক রাসেল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং মিরাজ খাঁনের বিছিন্ন পা উদ্ধার করেন।

এ ব্যাপারে কালকিনি থানার ওসি ইশতিয়াক আশফাক রাসেল বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরে দুই গ্রুপের বিরাজমান প্রভাব বিস্তার রয়েছে। তারই জেরে ঘটনা ঘটেছে। আমরা রাতেই ঘটনাস্থল থেকে মিরাজের পা উদ্ধার করি এবং আসামিদের ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যদি মিরাজ খানের পরিবার মামলা দেয়, তাহলে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৯জুলাই/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :