স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ডা. এম এ কাদেরী

প্রকাশ | ২৯ জুলাই ২০২১, ২১:৩২

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ

আজ ২৯ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এম এ কাদেরীর ১৭তম মৃত্যুবাষির্কী। অধ্যাপক এম এ কাদেরীর পুরো নাম অধ্যাপক ডা. মাজহার আলী কাদেরী কিন্তু তিনি অধ্যাপক এম এ কাদেরী নামেই সর্বজন পরিচিত। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তৎকালীন আইপিজিএমআর এ মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ সালে আইপিজিএমআরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হলে তিনি প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।


অধ্যাপক ডা. এম এ কাদেরীর গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলার হাটহাজারী পৌরসভার ফটিকা গ্রামে। ১৯৪১ সালের ১ অক্টোবর চট্রগ্রাম মহানগরীর নবাব সিরাজদৌল্লা রোডস্থ পৈত্রিক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম শহরেই তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। ১৯৫৭ সালে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫৯ সালে কৃতিত্বের সাথে আইএসসি পাস করার পর চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তি হন।


১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষায় সারাদেশের মধ্যে স্বর্ণপদকসহ প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তা সত্ত্বেও সরকার বিরোধী ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে আইয়ুব-মোনায়েম সরকার তাকে স্কলারশিপ থেকে বঞ্চিত করেন এবং ৪ বছরের জন্য উচ্চশিক্ষায় বিদেশ যাওয়া বন্ধ করে দেয়। ১৯৬৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৬৮ সালের ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাউস সার্জন, সিনিয়র হাউস সার্জন ও ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উচ্চতর শিক্ষার জন্য ডা. এম এ কাদেরী বিলাত যান এবং গজঈচ ডিগ্রি অর্জন করেন।


অধ্যাপক এম এ কাদেরী ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় পাবনা-৫ (সদর উপজেলা) এর সাংসদ রফিকুল ইসলাম বকুল মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে উক্ত শূন্য আসনের উপনির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
আমি অত্যান্ত সৌভাগ্যবান যে, উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এম এ কাদেরীর সময় আমি ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) (ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার) হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। তার মতো একজন ব্যক্তির সান্নিধ্যে কাজ করে আমি কর্মজীবনে অনেক কিছু শিখেছি। আজ আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য। তাই আমি এই দিনে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি অধ্যাপক ডা. এম এ কাদেরী স্যারকে এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।


তিনি ছিলেন অত্যন্ত গুণী শিক্ষক, চিকিৎসক, রোগীর প্রতি অত্যন্ত দরদী মনের অধিকারী এবং দক্ষ প্রশাসক। শিক্ষক হিসেবে তিনি তার ছাত্র ছাত্রীদের অন্তর দিয়ে ভালবাসতেন, স্নেহ করতেন কিন্তু শিক্ষার মান ও নীতি আদর্শের কাছে কোনদিন আপোস করেননি। তিনি রোগীদের প্রতি অত্যন্ত দরদী ও যত্মবান ছিলেন। রাতেও তিনি হাসপাতালে নিয়মিত রাউন্ড দিতেন।
একজন ভালো শিক্ষকের যতো গুণ থাকা প্রয়োজন অধ্যাপক ডা. এম এ কাদেরীর মাঝে সবগুলো ছিলো। যার শিক্ষা দানের পদ্ধতি ছিলো অনুসরণীয় এবং অনুকরণীয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে বাস্তবে রূপ দিতে অধ্যাপক ডা. এম এ কাদেরীর অবদান অসামান্য। মানবিক গুণাবলীতেও তিনি ছিলেন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি শুধু কথায় নয় বাস্তবেই তিনি তার গুণগুলো ধারণ করতেন।


বহুগুণের অধিকারী অধ্যাপক এম এ কাদেরীর জীবনাদর্শ আগামী দিনের পথ চলতে সকলকে অনুপ্রাণিত করবে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রেসিডেন্সি কোর্স চালু করেন, এম ডি ও ডিএমডি কোর্স চালুর প্রচেষ্টা করেন এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিতসহ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সফল যাত্রায় অধ্যাপক ডা. এম এ কাদেরীর অবদান অপরিসীম। তিনি দিনরাত পরিশ্রম করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে গেছেন। তার নীতি এবং আদর্শকে অনুসরণ করে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাব, আজকের দিনে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।


লেখক: উপাচায, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়