পাঁচ বছর ধরে জনবলশূন্য ফরিদপুরের হাসপাতালটির আইসিইউ

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ জুলাই ২০২১, ১৮:১২

ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ (বিএসএমএমসি) হাসপাতালের ১৬ শয্যার অত্যাধুনিক ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) প্রথম শ্রেণির সবকয়টি পদই শূন্য।

২০১৬ সালে স্থাপিত এই আইসিইউতে অদ্যাবদি কোনো জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। বর্তমানে হাসপাতালের একজন সহকারী অধ্যাপক ও একজন রোস্টারের মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য কোনোমতে ইউনিটটি চালু রাখা হয়েছে।

নির্দিষ্ট জনবল না থাকায় এখানে চিকিৎসা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জীবনের বিনিময়ে এর খেসারত দিতে হচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদেরকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই আইসিইউতে একজন সহকারী অধ্যাপক, দুজন জুনিয়র কনসালটেন্ট, দুজন সহকারী রেজিস্ট্রার ও দুজন মেডিকেল অফিসার নিয়মানুযায়ী থাকার কথা। তবে প্রথম শ্রেণির এই সাতটি পদই এ যাবত পর্যন্ত শূন্য রয়েছে। নির্ধারিত জনবল না থাকায় বর্তমানে বিএসএমএমসি হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. অনন্ত কুমার বিশ্বাস অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এই আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ফরিদপুর সনাক সভাপতি ও নাগরিক মঞ্চের সহসভাপতি শিপ্রা গোস্বামী বলেন, ‘বিএসএমএমসি হাসপাতালের এই আইসিইউ বিভাগটি অত্যাধুনিক মানের। এখানে সেন্টাল অক্সিজেন সাপ্লাই, ভেন্টিলেটর, হাই ফ্লো, নজেল ক্যানোলাসহ অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অন্য কোনো হাসপাতালে এই অত্যাধুনিক সুবিধা না থাকায় পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও গুরুতর রোগীদের এখানে পাঠানো হচ্ছে।’

শিপ্রা গোস্বামী বলেন, ‘এই অঞ্চলের একমাত্র এই সম্বল আইসিইউতে সেবা পাওয়ায় বহু মানুষের জীবন রক্ষা পায়।’ তিনি জোর দাবি তুলে বলেন, ‘জরুরী ভিত্তিতে এই প্রতিষ্ঠানের আইসিইউ বিভাগে প্রয়োজনীয় জনবল দেয়া দরকার।’

কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ৫০০ শয্যার এই বিএসএমএমসি হাসপাতালের পুরোটাই করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিদিন এখানে ৫০০ করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থদের এই আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। ১৬ শয্যার এই আইসিইউতে কখনো খালি শয্যা থাকে না।

একটি বেড খালি হলে সেখানে নতুন রোগী আসেন। জনবল না থাকলেও বিশেষায়িত এই সুবিধার চিকিৎসা নিতে সবসময়েই রোগীদের ভিড় লেগেই থাকে। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬০০ জন রোগী এই আইসিইউতে চিকিৎসা সেবা পেয়েছে। তার মধ্যে ২৭০ জন রোগী মারা গেছেন। আর আইসিইউতে বেড খালি না থাকায় ৪৮ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

ডা. অনন্ত কুমার বিশ্বাস জানান, সারাদেশে ছয় হাজার মেডিকেল অফিসার নিয়োগ হলে সরকার সম্প্রতি চারজন মেডিকেল অফিসারকে এখানে নিয়োগ দেন। আর সিভিল সার্জনের কার্যালয় হতে উপজেলা পর্যায়ের চারজন মেডিকেল অফিসার কাজ করেন। এখানে যারা ডিউটি করেন তাদের নিয়মানুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের পরে কোয়ারেন্টাইনে যেতে হয়। এজন্য ইনচার্জের বাইরে একজন মাত্র রোস্টার (মেডিকেল অফিসার) দিয়েই কাজ চালাতে হয়। ফলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয় রোগী ও চিকিৎসকদের।

বিএসএমএমসি হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘রোগীদের কথা বিবেচনা করে অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপককে দিয়ে হাসপাতালের আইসিইউ চালু রাখা হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালের সবকটি আইসিইউ সচল রয়েছে। জনবল না থাকা সত্ত্বেও আমরা সীমিত জনবল দিয়ে জীবন বাজি রেখে সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছি। এই ক্রান্তিকালে জনবল পদায়ন হলে আরো বেশি সেবা দিয়ে জনগণের জীবন রক্ষা করা যেত।’

দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর তুলনায় এই আইসিইউ শয্যার সংখ্যা খুবই অপ্রতুল বলে উল্লেখ করে হাসপাতালের এই পরিচালক বলেন, ‘আরও আইসিইউ এবং জনবল থাকলে বহু মানুষের উপকার হতো। এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

(ঢাকাটাইমস/৩০জুলাই/এসএ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :