গাজীপুরে করোনা রোগীর ভিড়, বারান্দাও খালি নেই

প্রকাশ | ৩০ জুলাই ২০২১, ১৮:৫৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর, ঢাকাটাইমস

সংক্রমণ রোধ করার জন্য ঘোষিত লকডাউনের মধ্যেও গাজীপুর বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। বাড়ছে মৃত্যু হারও। করোনা রোগীদের চাপ বেড়েছে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রতিদিন এই হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুক্রবার হাসপাতালটিতে করোনা ইউনিটে ধারণ ক্ষমতার দেড়গুণ রোগী ভর্তি করা হয়েছে। ইউনিটের ভিতরে জায়গা না হওয়ায় অনেক রোগীকে ফেরত না পাঠিয়ে জীবন বাঁচানোর জন্য ভর্তি করে বারান্দায় রাখা হয়েছে। বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জেলায় গত ২১ জুন থেকে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউন পরিস্থিতি চলমান রয়েছে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে জেলায় করোনার সংক্রমণের লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, সেনা, বিজিবি, র্যা ব, জেলা ও মহানগর পুলিশের টহল ও চেকপোস্ট, ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা, কোনো কিছুই তোয়াক্কা করছে না মানুষ।
নানা অজুহাতে জেলাবাসী ঘরের বাইরে আসছে। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। ফলে জেলায় করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস।
এছাড়া প্রতিদিন বিনোদনের আশায় বিপুল সংখ্যক পোশাক শ্রমিকসহ নানা পেশার মানুষ নদী, বিলের পাড়, খোলা মাঠ, রেললাইনসহ আঞ্চলিক সড়কে জটলা করছেন। ফলে লকডাউনের সুফল মিলছে না গাজীপুরে।
গাজীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায়  জেলায় নতুন করে আরও ২৪৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের জন্য মোট ৫৮১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ৪২ দশমিক ৫২ শতাংশ। তার আগে গত ২৪ ঘন্টায় অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার সংক্রমণের হার ছিল ৪২ দশমিক ২৭ শতাংশ। ওই দিন করোনা শনাক্তের জন্য ৬৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষার পর ২৬৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
গাজীপুর শহীদ তাজ্উদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিসক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে করোনা রোগীর বিছানা আছে ১০০ জনের। আইসিইউ আছে আটটি। গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে করোনা পজিটিভ ৫৬ জন এবং উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে ভর্তি হন ১০৩ জন রোগী।
ডা. রফিক জানান, শুক্রবার ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন ৩৭ জন। শুক্রবার এই হাসাপাতালে করোনা রোগী ভর্তি হন ১৬৭ জন। এদের মধ্যে আটজনকে আইসিইউ এবং ৯৬ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এদিন ১০০ জনের জায়গায় ভর্তি আছেন ১৬৭ জন রোগী। ফলে বাড়তি রোগীদের জীবন বাঁচাতে বারান্দায় জায়গা করে দিতে হচ্ছে।
রোগীর চাপ আরও বাড়লে পরিস্থিতি খারাপের আশঙ্কা করে এই চিকিৎসক বলেন, ‘এমনিতে শয্যার অনুপাতে রোগী বেশি। এখন আরও চাপ বাড়লে তাদের চিকিৎসা দেয়াটা একটু মুশকিলই হবে। তবে যেহেতু অনেক রোগী ভালো হচ্ছে, ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় যাচ্ছে তাই চাপ থাকলেও চিকিৎসা দেয়ায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, গত বুধবার হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট ১৪৭ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে ৪৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী হিসেবে ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে আটজন ছিলেন আইসিইউতে। এছাড়াও করোনার উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে ছিলেন ১০৩ জন রোগী।
তাদের মধ্যে বৃহস্পতিবার মারা গেছেন আটজন। মারা যাওয়াদের মধ্যে এক জন করোনা পজিটিভ ও সাতজন আইসোলেশনে ছিলেন। শুক্রবার আইসিইউতে একজন এবং আইসোলেশনে চারজন মারা গেছেন।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. হাফিজ উদ্দিন জানান, হাসপাতালে ১০০ করোনা রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করার মতো সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। সেখানে আমাদের দেড় গুণের বেশি রোগী ভর্তি করা হয়েছে। অনেক রোগীকে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থার মাধ্যমে অক্সিজেন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাদের আমরা অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। সক্ষমতার বেশী রোগী নিয়ে আমরা তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
ডা. হাফিজ বলেন, আমাদের সবার স্বাস্থ্যবিধি মানা উচিত। করোনার উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
করোনা আক্রান্তের চেয়ে উপসর্গ নিয়ে বেশি রোগী কেন মারা যাচ্ছে জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, ‘উপসর্গ নিয়ে রোগীরা বাড়িতে বসে থাকেন। যখন শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, অবস্থা বেশি খারাপ হয়, তখন তারা হাসপাতোলে আসেন। হাসপাতালে আসার পর কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরুর জন্য আমরা বেশি সময় পাই না। এ জন্য তিনি উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়ার এবং প্রাথমিক অবস্থায় প্রয়োজন হলে হাসপাতালে আসার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
ডা. হাফিজ বলেন, ‘এ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ছয় হাজার লিটারের একটি কেন্দ্রীয় অক্সিজেন প্লান্টের ব্যবস্থা রয়েছে, যা দিয়ে ১০০ জন করোনা রোগীর অক্সিজেন চাহিদা মেটানো সম্ভব। তাছাড়া ৪৫৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে, যার তিনভাগের একভাগ রোগীদের সেবায় ব্যবহার করা যায়। বাকি দুভাগের একভাগ রিফিল করতে ও আনা-নেওয়ার জন্য হাসপাতালের বাইরে থাকে। প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। রোগীর চাপ আরো বাড়লে পরিস্থিতি কী হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
(ঢাকাটাইমস/৩০জুলাই/এসএ/কেএম)