হেলেনা জাহাঙ্গীর তিন দিনের রিমান্ডে

প্রকাশ | ৩০ জুলাই ২০২১, ২০:৩৮ | আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২১, ২২:২২

আদালত প্রতিবেদক
ঢাকাটাইমস

আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যপদ হারানো আলোচিত ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

গুলশান থানায় দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় শুক্রবার রাতে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীর অনলাইন ভার্চুয়াল জগতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সম্পর্কে মানহানিকর ও মিথ্যা তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের মাধ্যমে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। জানা যায়, আসামি গোপনে সরকারবিরোধী কার্যকলাপ ও পরিকল্পনায় লিপ্ত। আরও জানা যায়, আসামির সঙ্গে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং মহল দেশের শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। মামলার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তা স্বীকার করলেও তার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী দল,গোষ্ঠী, সংস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রদান করে নাই। তাই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, হেলেনা জাহাঙ্গীরের সাথে জড়িত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী দল, সংস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উদঘাটন, তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা প্রয়োজন।’

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ডের শুনানিতে বলেন, ‘আসামি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মন্ত্রী, এমপিদের নিয়ে কটূক্তি করেছেন। যারা ফেসবুক ব্যবহার করে তারা বিষয়টি শুনেছে। আসামি সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। এতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। একটা চক্র সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে। ৫ দিনের যে পুলিশ রিমান্ড চাওয়া হয়েছে যৌক্তিক কারণে তা মঞ্জুর  করা হোক।’

অন্যদিকে আসামির পক্ষে অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করে বলেন, ‘কাউকে নিয়ে অপমানজনক, মানহানিকর কিংবা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় এমন বক্তব্য হেলেনা জাহাঙ্গীর দেননি। আর আসামি যদি অপরাধ করে থাকে তাহলে তার বিচার হবে। এখানে রিমান্ডের কোনো যৌক্তিকতা নেই। ঈর্ষান্বিত হয়ে কেউ মামলা করিয়েছে। হেলেনা জাহাঙ্গীর সিআইপি। অযথা লাফ দিয়ে কেন তিনি বিপদে পড়বেন, হেরাজ হবেন। খ্যাতি, সুনাম নষ্ট করবেন। রিমান্ডের যৌক্তিকতা নেই। সরকারের ক্ষতি হবে এমন কোনো বক্তব্য নেই। তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন প্রার্থনা করছি।’

এরপর আদালত হেলেনা জাহাঙ্গীরের বক্তব্য শুনতে চান। হেলেনা জাহাঙ্গীর আদালতকে বলেন, ‘আমি সরকারের লোক। সরকারের সাথেই আছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করেই রাজনীতি করি। আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমি ২৫ টা দেশ সফর করেছি। আর আমাকে যে বহিষ্কার করা হয়েছে তার কাগজ আমি এখনো পায়নি। কাজেই আমি এখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গেই আছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলিনি। বরং কেউ যদি আমেরিকা, কানাডা থেকে সরকারের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালায়, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে আমি তার প্রতিবাদ করেছি। আমি সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা কখনো বলিনি।’

এরপর আদালত হেলেনা জাহাঙ্গীরের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে তাকে আদালতে তোলা হয়।

আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে হেলেনার বিরুদ্ধে র‌্যাব বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করে। তার আগে বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে র‌্যাবের গাড়িতে করে হেলেনাকে গুলশান থানায় নেয়া হয়।

র‌্যাব ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি ও অপরটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে চারটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। সেগুলো মধ্যে মাদক আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন আইনের ধারা দেয়া হয়েছে।

ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, র‌্যাবের করা দুটি মামলার মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলায় রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। পরবর্তীতে অন্য মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হবে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটা থেকে গুলশান-২ এর ৩৬ নম্বর সড়কে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাড়িতে অভিযান শুরু হয়। চার ঘণ্টার অভিযান শেষে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে র‌্যাব সদরদপ্তরে নেয়া হয়। উদ্ধার করা হয় বিদেশি মদ, ক্যাসিনো সরঞ্জাম, চাকু, ওয়াকিটকিসহ বিভিন্ন অবৈধ সরঞ্জাম। এরপর রাত দেড়টা থেকে চারটা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর-১১ নম্বরের এ ব্লকের তিন নম্বর রোডে জয়যাত্রা টেলিভিশনের কার্যালয়ে এই অভিযান শুরু করে র‌্যাব। অভিযানে বিভিন্ন অবৈধ সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/৩০জুলাই/এসএস/ইএস)