টানা বর্ষণ: সাতক্ষীরায় মাছ-ফসলের ক্ষতি ইয়াসের চাইতে বেশি

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২১, ১২:১৭ | প্রকাশিত : ৩১ জুলাই ২০২১, ১২:০০

কয়েক দিনের টানা বর্ষণে সাতক্ষীরায় ভেসে গেছে অসংখ্য ফসলি জমি, পুকুর ও মাছের ঘের। পানিতে থৈ থৈ করছে সাত উপজেলার ৭৮টি ইউনিয়ন আর দুই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল। এর ফলে জেলায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের চাইতেও বেশি। ইয়াসের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে মাছ ও ফসলের ক্ষতি হয়েছিল ১৬ কোটি টাকার মতো। আর এবার তিন দিনে টানা বর্ষণে ক্ষতি হয়েছে ৫৩ কোটি টাকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরা পৌরসভার অধিকাংশ নিচু এলাকা এখনও পানির নিচে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছেন পৌরসভার অনেকে বাসিন্দা। পৌরসভার ইটাগাছা এলাকার বাসিন্দা ময়না বলেন, সামান্য বৃষ্টিতে আমাদের এলাকা তলিয়ে যায়। চারদিকে আটকানো। পানি বের হওয়ার সুযোগ নেই।

টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে পৌর এলাকার কমপক্ষে ২০টি বিল। বেতনা নদী তীরবর্তী এই বিলগুলোর পানি নদীতে নিষ্কাশিত হতে পারছে না। গ্রামাঞ্চলের সব পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। বেরিয়ে গেছে শত কোটি টাকার মাছ।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১৪৩ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেরর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম বলেন, ভারী বর্ষণে জেলার নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির রোপা আমন বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। ৮৬০ হেক্টর রোপা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ৫০০ হেক্টর জমির সবজির ক্ষতি হয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় আমপানে সাতক্ষীরায় মাছের ক্ষতি হয় ১৭৬ কোটি টাকা। ইয়াসের ফলে মাছের ক্ষতি হয় ১৬ কোটি টাকা। সবশেষ বৃহস্পতিবার ব্যাপক বর্ষণে ৫৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আশাশুনির শ্রীউলা এলাকার ঘের ব্যবসায়ী আলাউল ইসলাম জানান, বছরে তিন থেকে চারবার আমাদের মাছের ঘের ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নেই। ৫০ বিঘার একটি ঘেরে আমপানে আমার ক্ষতি হয়েছিল ২০ লাখ টাকা। ইয়াসে ক্ষতি ছিল ৫ লাখ টাকা। আর বৃহস্পতিবার অতি বর্ষণে আমার ঘের ভেসে ক্ষতির পরিমাণ দাড়িয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা।

শ্যামনগরের পদ্মপুকুর এলাকার ঘের ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান জানান,তার ১০০ বিঘার একটি ঘের রয়েছে। বৃহস্পতিবার সেই ঘের ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা। ব্যাংক সুদতো মাপ হয় না । বছরের কয়েকবার এমন ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, জেলার আশাশুনি, শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলার ১৯ হাজার ৪৫৯টি মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘেরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫ হেক্টর। মাছের ক্ষতির পরিমাণ ৫৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, ঘর-বাড়িসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের মাধ্যমে প্রাপ্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আজকের মধ্যে পেয়ে যাব। তখন কোথায় কেমন বরাদ্দ করতে হবে,নিরুপণ করব।

তিনি জানান, চলমান অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে জেলা ব্যাপী ঘেরের সকল অবৈধ নেট-পাটা স্থাপনকারীকে স্ব-উদ্যোগে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে নেট-পাটা অপসারণ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় নেট-পাটা স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/৩১জুলাই/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :