মানুষ স্বপ্নের সমান বড়: আমেরিকা থেকে ভ্যাকসিন ও ভেন্টিলেটর পাওয়া প্রসঙ্গ

শাহাবুদ্দিন শুভ
 | প্রকাশিত : ৩১ জুলাই ২০২১, ১৬:৩২

মানুষ নাকি তার স্বপ্নের সমান বড় এ কথাটা অনেকবারই পড়েছি আবার বিভিন্নজনের কাছ থেকে কয়েকটি সেমিনারের বক্তব্যতে শুনেছি। যতবারই শুনেছি ততবার বিশ্বাস করিনি বা আমলে নেইনি। এর পেছনে কারণও ছিল। আমরা যা চাই বা যে পরিমাণ স্বপ্ন দেখি তা অনেকটাই আকাশ কুসুমের মতো। যার ফলে মানুষ যে তার স্বপ্নের সমান বড় তা বাস্তবায়িত হতে দেখি না বা সমাজে খুব একটু চোখেও পড়ে না। সম্প্রতি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আমেরিকান প্রবাসী নেফ্রলজিস্ট প্রফেসর ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ সাদেকসহ কয়েকজনের কর্মকাণ্ডে মনে হয় মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়।

অনেক দিন আগে থেকে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কথায় আমরা হতাশার কথা শুনেছি। আমেরিকা থেকে টিকা না পাওয়া নিয়ে হতাশ হয়ে তারা বলেছিলেন আমেরিকানরা বলেছে আক্রান্তের দিকে ও মৃত্যুর ঝুঁকি বিবেচনা করা হলে বাংলাদেশের অবস্থা ১৮তম স্থানে, তাই আমাদের টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রবাসীদের লবিং করার কথা বলেছিলেন অনেকে। বিভিন্ন ফোরামেও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারও আগে এগিয়ে আসলেন কার্ডিওলজিস্ট প্রফেসর ডা. চৌধুরী হাফিজ আহসান, নেফ্রলজিস্ট প্রফেসর ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ সাদেক, কার্ডিওলজিস্ট প্রফেসর ডা. মাসুদুল হাসান ও সাবেক সিনিয়র ইউএন অফিসিয়াল মাহমুদ উস শামস চৌধুরী ব্যক্তিগত উদ্যোগ নেন বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির।

এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকা থেকে কোভ্যাক্সের আওতায় মডার্নার ২৫ লাখ ও ফাইজারের এক লাখ ছয় হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৯ জুলাই সোমবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে আরও ৩০ লাখ ডোজ মডার্নার ভ্যাকসিন। এতে করে দেশের মানুষ টিকা না পাওয়ার যে অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলেন তা অনেকটাই দূর হলো। আমরা আশা করব আরও ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আসবে এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা এক্ষেত্রে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।

আমেরিকা থেকে যে ডাক্তারদের টিম বাংলাদেশে ভ্যাকসিন আনতে সহায়তা করেন তাদের অন্যতম অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ। তার নেতৃত্বে ২৫০ ভেন্টিলেটর প্রেরণ করা হয় দেশে। যা ২৪ জুলাই শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই পোর্টেবল ২৫০ ভেন্টিলেটর এসে পৌঁছায়। এবারের ২৫০টি ভেন্টিলেটর আমেরিকার এনজিও "অপশিনি”এর কর্ণধার ডা. অমিত চক্রবর্তী আমেরিকার বোস্টন সাইন্টিফিক কোম্পানি থেকে কয়েকশ ভেন্টিলেটর ভারতে পাঠান এবং তার থেকে ডা. জিয়াউদ্দিনের অনুরোধে ২৫০টি ভেন্টিলেটর বাংলাদেশকে প্রদান করেন।

বাংলাদেশে আসা ২৫০টি ভেন্টিলেটার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে এবং দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তায় বিমানযোগে ঢাকা পৌঁছায়। ঢাকায় প্রধান সমন্বয়কারী হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ভেন্টিলেটরগুলো গ্রহণ করেন। এক মাস পূর্বে ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ আরো ১২৭ ভেন্টিলেটর আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে বারডেম প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ডা. আজাদ খানের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলার নন প্রফিট হাসপাতালে বিতরণ করেন। এ নিয়ে তারা ৩৭৬ ভেন্টিলেটর বাংলাদেশে প্রেরণ করেছেন।

ডা. জিয়াউদ্দিন জানান অস্টিন টেক্সাসের আমেরিকান এক কোম্পানি এয়ারবুস্ট তৈরি করা ভেন্টিলেটরগুলো তরুণ প্রজন্ম শাহ তানভীরের সংযোগের জন্য এয়ারবুস্ট সরাসরি ডা. জিয়াউদ্দিনের দলকে তা প্রদান করে...বাংলাদেশে পাঠানোর যাবতীয় সব কাজে সহায়তা করেন লিয়াকত হুসাইন, ডা. ফাতেমা আহমেদ এবং অন্যরা। আমেরিকা থেকে ডাক্তারদের এই টিমের সদস্যরা হলেন অধ্যাপক ডা. মাসুদুল হাসান, অধ্যাপক ডা. চৌধুরী হাফিজ আহ্সান, মাহমুদ শামস বাপ্পী। কানাডার ডা. আরিফুর রহমান বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সারাক্ষণ এই সব চলমান কাজের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত। তিনি বলেন, বিতরণ শেষে এই ভেন্টিলেটরগুলোর ট্রেনিং জন্য তারা প্রস্তুত।

ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, অদূর ভবিষ্যতে তারা আরো সহায়তা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রবাসে থেকে এই রকম আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের মাধ্যমে অনেক কাজ করা যাবে বলে তারা বিশ্বাস করেন। তারা এবার প্রধানমন্ত্রীর এই সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে এই সব সহায়তায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সহায়তা কামনা করেন। দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের আরো কাজ করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।

অনেক প্রবাসী ও প্রবাসী সংগঠনের সাথে আমার প্রায়ই কথা হয় তারা চান দেশের ও দেশের মানুষের পাশে থাকার জন্য। সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার জন্য কিন্তু আমাদের দেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে অনেকে হতাশ হয়ে পড়েন বা কাজের প্রতি আগ্রহ হারান।এবার যত সহজে টিকা ও ভেন্টিলেটরগুলো পাঠানো গেল, এভাবে সব কিছু সহজ থাকলে তারা পাশে থাকতে চান দেশবাসীর। ডা. জিয়াউদ্দিনের সাথে আমাদের সিলেটপিডিয়া ও ডক্টরস এন মেডিসিন নিয়ে আলাপ হয়েছে অসংখ্যবার দেশের উন্নয়নে বিশেষ করে সিলেটের উন্নয়ন ও চিকিৎসা খাতের উন্নয়ন নিয়ে তিনি যে চিন্তা করেন বা স্বপ্ন দেখেন তা বাস্তবায়িত করে যাচ্ছেন দেখে কথাটি সত্যি মনে হচ্ছে মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। যে সব প্রবাসী দেশের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করতে চান তারা সবাই স্বপ্নের সমান বড় হোন।

লেখক: প্রধান সম্পাদক, সিলেটপিডিয়া

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :