ভোগান্তি ঠেলে কর্মস্থলের পথে শ্রমিকরা

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২১, ১৭:১২

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর

তৈরি পোশাকসহ শিল্প কারখানা খুলে দেয়ার খবরে দলে দলে গাজীপুরের কর্মস্থলে ফিরছেন শ্রমিকরা। সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাক, পিকআপ ও অটোরিকশাসহ বিভিন্ন উপায়ে কর্মস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন তারা। এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব।

পেটের দায়ে চাকরি বাঁচাতে মরিয়া এসব শ্রমিকের পথের ভোগান্তি যেমন বেড়েছে তেমনই দিতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়ার মাশুল। পুলিশ জানিয়েছে, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পোশাক শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফিরতে চেকপোস্টে কিছুটা ছাড় দেয়া হচ্ছে। তারা পিক আপ, ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহনে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা লকডাউনের বিধিনিষেধের আওতায় থাকবে, সরকারি এমন ঘোষণা ও মালিক পক্ষের কাজে যোগদানের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে লাখো শ্রমিক তাদের কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। শনিবার সকাল থেকে ঢাকা টাঙ্গাইল ও ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে গাজীপুরে ফিরতে শুরু করেছেন তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন কারখানার এসব শ্রমিক।

ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও রিকশায় চড়ে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যাচ্ছেন তারা। অনেকে প্রয়োজনীয় মালপত্র মাথায় নিয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। জীবিকার প্রয়োজনে শ্রম আর ঘামকে পায়ে দলিয়ে কর্মস্থলে ফিরছেন শ্রমিকরা। পথের ক্লান্তি আর বাড়তি ভাড়ার তুলনায় কাজে ফেরার তাগাদা যেন শ্রমিকদের তাড়িয়ে নিচ্ছে কর্মস্থলে।

শ্রমিকদের অভিযোগ, গণপরিবহন না থাকায় নানা ভোগান্তি নিয়ে কর্মস্থলে ফিরছেন তারা। পথ ভেঙে গন্তব্যে পৌঁছাতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।

গাজীপুর এলাকায় এসবিএস কারখানার সুইং ইনচার্জ মামুন। গ্রামের বাড়ি পাবনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের কারখানার ছুটি ছিল ৭ আগস্ট  পর্যন্ত, সেজন্য নিশ্চিত ছিলাম। রাতে কারখানা কর্তৃপক্ষ ফোন দিয়ে আমার অধীনে যারা কাজ করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ দেন। যেকোন মূল্যে শ্রমিকদের হাজির হতে হবে। নয়তো তাদের অনুপস্থিত দেখানো হবে। এমন সিদ্ধান্তের পর দ্রুত শ্রমিকদের খবর পৌঁছে দিয়েছি কারখানায় যোগদানের জন্য।’

মামুন বলেন, ‘আমি অনেক কষ্ট ও ভোগান্তি সহ্য করে ভেঙে ভেঙে  পাবনা থেকে সিরাজগঞ্জ এসেছি। সেখান থেকে দুই হাজার টাকা মাইক্রোবাস ভাড়া করে চন্দ্রা ত্রিমোড় পর্যন্ত এসেছি। পরে চন্দ্রা থেকে অটোরিকশায় চড়ে কোনাবাড়ি পর্যন্ত এসেছি। এখন বাকিটা পথ একইভাবে যেতে হবে।’

পোশাক শ্রমিক সিয়াম জানান, গণপরিবহন বন্ধ, চন্দ্রা থেকে পল্লী বিদ্যুৎ পর্যন্ত পায়ে হেঁটে এসেছি। অফিস খোলা, এজন্য এই ভোগান্তি মেনে নিয়েই আমরা কর্মস্থলে ফিরছি।

একইভাবে ভোগান্তির কথা বলেছেন কোনাবাড়ি এলাকার পোশাক কারখানার শ্রমিক লিপি বেগম। লিপি বলেন, ‘সরকার ১ আগস্ট  কারখানা খোলার কথা বলছে। কিন্তু কেন গাড়ি খুলে দিলো না। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কেন এত ভোগান্তি! কেন আমাদের ১০০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে। এটা কোন আইনের মধ্যে আছে, আমাদের ভোগান্তি কে দেখবে। গাড়ি খোলার পর কারখানা খুললে আমাদের এত সমস্যা হতো না।’

পূর্বানী কারখানার শ্রমিক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্ট পর্যন্ত লকডাউন এবং পরের দিন শুক্রবার থাকায় আমাদের ছুটি ৭ আগস্ট  পর্যন্ত ছিল। কিন্তু শুক্রবার রাতে কারখানা থেকে ফোন করে আমাদের কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়। সকালে বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছি। কিন্তু কোনো গাড়িঘোড়া নাই। কড্ডার মোড় থেকে ১৮০০ টাকা ভাড়া করে মোটরসাইকেলে চন্দ্রা আসছি। সেখান থেকে স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে হেঁটে হেঁটে কোনাবাড়ি পর্যন্ত পৌঁছেছি। আমাদের কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া দিয়ে অনেক কষ্ট সহ্য করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরতে হয়েছে।’

আরেকজন নারী শ্রমিক বলেন, ‘আমরা যদি কারখানায় না ফিরি তবে আমাদের চাকরি থাকবে না। এই ভয়ে নৌকা, অটোরিকশায় চড়ে ভেঙে ভেঙে বেশি ভাড়া দিয়ে গাজীপুরে এসেছি।’

এদিকে শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো চেকপোস্টে শিথিলতা এনেছে পুলিশ। বেড়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, পিকআপ, ট্রাক ও অযান্ত্রিক যানবাহনের দাপট।

এ বিষয়ে কোনাবাড়ি হাইওয়ে থানার কর্মকর্তা (ওসি) মীর গোলাম ফারুক বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনার কারণে পোশাক শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার জন্য আমরা ছাড় দিচ্ছি। তারা বিভিন্ন পিকআপ ভ্যান, মাইক্রোবাস ও রিকশা করে আসছেন। তবে লকডাউন বাস্তবায়নে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে।  বিজিবি ও র‌্যাব এবং পুলিশের টহল অব্যাহত আছে।’ 

(ঢাকাটাইমস/৩১জুলাই/এসএ/কেএম)