ভালো নেই ত্রিশালের বাঁশ-বেতের কারিগররা

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২১, ১৭:৩২

মেহেদি জামান লিজন, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ)

বাঁশ আর বেতকেই জীবিকার প্রধান বাহক হিসাবে আঁকড়ে রেখেছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার গুটি কয়েক পরিবার। কিন্তু দিন দিন বাঁশ-বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত এ জেলার কারিগররা।

বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ত্রিশাল উপজেলায় বাঁশ ও বেত শিল্পের তৈরি মনকারা বিভিন্ন জিনিসের জায়গা করে নিয়েছে স্বল্প দামের প্লাস্টিক ও লোহার তৈরি পণ্য। তাই বাঁশ-বেতের পণ্য এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। গ্রামগঞ্জেও ঐতিহ্যবাহী বাঁশের তৈরি বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় আকর্ষনীয় আসবাবপত্রের কদর কমে যাচ্ছে। অভাবের তাড়নায় এই শিল্পের কারিগররা দীর্ঘদিনের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে আজ অনেকে অন্য পেশার দিকে ছুটছে। তবে শত অভাব অনটনের মাঝেও উপজেলায় হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার আজও পৈতৃক এই পেশাটি ধরে রেখেছেন।

ত্রিশাল পৌরসভা সংলগ্ন গোহাটা মাঠ, ত্রিশাল কোর্ট বিল্ডিং সংলগ্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাত্র ১০-১৫টি পরিবার এই শিল্পটি ধরে রেখেছেন। একদিকে বাঁশের মূল্য বৃদ্ধি, অন্যদিকে তাদের তৈরি পণ্যের কদর কমে যাওয়ায় জীবন সংসারে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

কয়েক দশক আগে ময়মনসিংহ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হতো এসব বাঁশ ও বেতের পণ্য। অপ্রতুল ব্যবহার আর বাঁশের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় শিল্পটি আজ হুমকির মুখে। বাঁশ ও বেত থেকে তৈরি সামগ্রী বাচ্চাদের দোলনা, তালায়, র‌্যাগ, পাখা, ঝাড়ু, টোপা, ডালী, মাছ ধরার পলি,বেড়া, খলিশানসহ বিভিন্ন প্রকার আসবাবপত্র গ্রামঞ্চলের সর্বত্র বিস্তার ছিল।

এক সময় যে বাঁশ ২০ থেকে ৩০ টাকায় পাওয়া যেত সেই বাঁশ বর্তমান বাজারে কিনতে হচ্ছে দুইশত থেকে আড়াইশ টাকা। সেই তুলনায় বাড়েনি এসব পণ্যের দাম।

স্থানীয় কারিগর মকবুল, আকরাম, আতিকুলসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ত্রিশালে আমরা হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার আজও এ কাজে নিয়োজিত আছি। একটি বাঁশ থেকে ১০-১২টি ডালি তৈরি হয়। সকল খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটি পণ্য থেকে ১০-২০ টাকা করে লাভ থাকে। তবে আগের মতো আর লাভ হয় না। সীমিত লাভ দিয়েই পরিবার চালানো অতি কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

তারা আরও বলেন, খেয়ে-না খেয়ে অতিকষ্টে ধার দেনা ও বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে কোনরকম বাপ-দাদার এই পেশাকে আকঁড়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। আমাদের এই শিল্পটির উন্নতিকল্পে যদি সরকারিভাবে অল্প লাভে ঋণ দেওয়া হয় তাহলে আমরা হারিয়ে যাওয়া শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবো।

(ঢাকাটাইমস/৩১জুলাই/পিএল)