গিনেস বুকে বিশ্ব রেকর্ড করলো ঠাকুরগাঁওয়ের রাসেল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঠাকুরগাঁও
 | প্রকাশিত : ৩১ জুলাই ২০২১, ১৯:২৯

ঠাকুরগাঁও জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে রাসেল ইসলাম। মাত্র ১৮ বছর বয়সে এক পায়ে দড়ি লাফানো খেলায় (স্কিপিং রোপে) বিশ্বে প্রথম স্থান দখল করে গিনেস বুকে নাম লিখেছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার হরিহরপুর সিরাজপাড়া গ্রামের কৃষক বজলুর রহমানের ছেলে রাসেল। তিনি এক পায়ে ৩০ সেকেন্ডে ১৪৫ বার ও এক মিনিটে ২৫৮ বার দড়ি লাফিয়ে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এতে প্রশংসায় ভাসছে রাসেল। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে অনেকেই আসছে রাসেলকে একনজর দেখতে ও অভিনন্দন জানাতে।

এক পায়ে ৩০ সেকেন্ড স্কিপিং রোপে ১৪৪ বার লাফানোর বিশ্ব রেকর্ড থাকলেও রাসেল করেছে ১৪৫ বার। আর এক মিনিটে এক পায়ে ২৫৬ বার লাফানোর বিশ্ব রেকর্ড থাকলেও রাসেল সেই রেকর্ড ভেঙে করেছে ২৫৮ বার।

রাসেল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র।

স্কুলজীবনে ২০১৭ সাল থেকেই স্কিপিং রোপ খেলা শুরু করে রাসেল। এক সময় জেলা থেকে বিভাগ পর্যায়ে স্কিপিং রোপে প্রথম হয়। বিভাগ থেকে জাতীয় পর্যায়ে স্কিপিং রোপে অশং নিলেও অনাবশ্যক কারণে তাকে বাতিল করা হয়। তখন থেকেই রাসেল প্রতিজ্ঞা করে একদিন এই খেলা নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার। সেই থেকে বাসার আশেপাশে বিভিন্ন সড়কের ধারে যখন যেখানে সময় পেয়েছে সেখানেই স্কিপিং রোপের চর্চা করেছে।

অবশেষে নিজেকে এই খেলায় পরিপূর্ণ মনে হলে ২০১৯ সালে অনলাইনের মাধ্যমে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে আবেদন করে রাসেল। স্কিপিং রোপে এক পায়ের ওপর দুটি বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করে রাসেল। একটি ৩০ সেকেন্ডের, অন্যটি এক মিনিটের ওপর।

আবেদনের তিন মাস পর গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড থেকে কিছু গাইডলাইনসহ একটি রিপ্লাই পায় রাসেল। সেখানে তারা তাদের নিয়ম মতো কিছু ভিডিও চায় তার কাছে। সেই সঙ্গে কীভাবে সেগুলো করতে হবে তারও বিস্তারিত দেওয়া হয়।

এরপর কিছুদিন আরও মনোযোগ দিয়ে চর্চা করে সেই ভিডিওগুলো করে তাদের পাঠিয়ে দেয় রাসেল। অবশেষে বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে একটি নতুন রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশের এই কিশোর। প্রচেষ্টার ফল হিসেবে ডাকযোগের মাধ্যমে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডের দুটি সদনপত্র (সার্টিফিকেট) গত বৃহস্পতিবার পায় বলে জানায় রাসেল। তার লক্ষ্য এখন সাউথ এশিয়ান গেমসে ও আন্তর্জাতিকভাবে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে খেলায় অংশ নেয়া।

রাসেলের বাবা বজলুর রহমান বলেন, ‘নিতান্ত গরিব কৃষক হয়েও ছেলেকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করেছি। আমার ছেলে আজ দেশের সেরা থেকে বিশ্বের সেরা হয়েছে। ভাবতেও ভালো লাগছে।’

রাসেলের বড় ভাই আরিফ বলেন, ‘আমার ছোট ভাই রাসেল এতো বড় কিছু অর্জন করবে, আমরা বিশ্বাস করতেই পারিনি। আশা করি সে আরও ভালো কিছু করবে।’

রহিমানপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হাসান মেহেদী বলেন, ‘রাসেল একজন সাধারণ ছেলে হয়েও বিশ্বরেকর্ড করেছে, ভাবতেই ভালো লাগছে। তার এই সাফল্যে আমরা গ্রামবাসী আনন্দিত ও গর্বিত।’

রাসেলের সহপাঠীরা জানায়, ‘সে ছোটবেলা থেকেই খেলার প্রতি আগ্রহী ছিল। তার স্বপ্ন ছিল একদিন বড় কিছু করবে। তার সেই স্বপ্ন সফল হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান জানান, ‘গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড একটি সম্মানজনক অর্জন। আমাদের দেশের জন্য এটি গৌরবের। বিশেষ করে রাসেল ঠাকুরগাঁও জেলার হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং শুভ কামনা করছি। আগামীতেও সে নতুন নতুন রেকর্ড গড়ুক, এই কামনা করছি। এছাড়াও পৃষ্ঠপোষকতার জন্য তার কোনো প্রয়োজন হলে তাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’

(ঢাকাটাইমস/৩১জুলাই/এসএ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :