পড়িমরি ছুট ঢাকার পথে

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২১, ২১:৫১ | আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২১, ২১:৫৪

আল-আমিন রাজু, ঢাকাটাইমস

করোনাভাইরাসের অতি সংক্রমণ এবং মৃত্যু ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধ চলার মধ্যে রবিবার খুলছে রপ্তানিমুখী শিল্প-কল-কারখানা। ব্যবসায়ীদের অনুরোধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে শুক্রবার এই সিদ্ধান্ত আসার পরপরই রাজধানী ঢাকার দিকে ঢল নেমেছে শ্রমজীবী মানুষের। দুর্ভোগ আর বাড়তি ভাড়া মেনে নিয়েই তারা যে যেভাবে পারছেন কর্মস্থলে পৌঁছাতে পড়িমরি ছুটছেন রাজধানীতে।

ঢাকায় ফেরা মানুষের ঢলের পাশাপাশি রাজধানীর সড়কের চিত্রও আস্তে আস্তে বদলে যাচ্ছে। ঈদের পর দ্বিতীয় ধাপে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনের নবম দিনে শনিবার রিকশা, ভ্যান, মোটরবাইক ছাড়াও ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন যান চলাচল করছে নির্বিঘ্নে। এই কদিন সিএনজিচালিত অটোরিকশা দেখা না মিললেও প্রধান সড়কে শনিবার তাও চলতে দেখা গেছে। ফুটপাতে মানুষের চলাচলও বেড়েছে।

রাজধানীতে বন্ধ থাকা বিপণি বিতানগুলো দেখলেই মনে হবে লকডাউন চলছে। এছাড়া রাস্তা, অলিগলিতে মানুষ ও যান চলাচল, বাজার দোকানপাটে কোনাকাটার ভিড় দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রমণ ঘটার।

মানুষকে অবাধ চলাফেরায় বিধিনিষেধ মানাতে দিনরাত কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নাগরিকদের মধ্যে যারা সতর্কতা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তাদের প্রশ্ন এভাবে চললে লকডাউনের দরকারটা কী?

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ২৩ জুলাই ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণায় ঢাকা ছেড়েছিলেন শিল্পকারখানার শ্রমিক কর্মচারীরা। কিন্তু মালিকদের অনুরোধে সরকার পয়লা আগস্ট থেকে গার্মেন্টসসহ শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেয়।

এই ঘোষণার পর বিপাকে পড়েন শ্রমিক কর্মচারীরা। চাকরি বাঁচাতে শনিবার ভোর থেকে যে যেভাবে পারছেন ঢাকার পথে ছোটা শুরু করেন। হাজার হাজার মানুষ হেঁটে, ট্রাক, পিকআপ, রিকশা, সিএনজি অটোসহ বিভিন্ন বাহনে পথ ভেঙে ভেঙে ঢাকায় ফিরেন। এভাবে ঢাকা ফেরার পথে চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের প্রতিবেদকদের পাঠানো তথ্যে এমন চিত্রের দেখা মিলেছে। যদিও রাত আটটার দিকে আগামীকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া অন্যান্য গণপরিবহনের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে।

গাজীপুর: তৈরি পোশাকসহ শিল্প কারখানা খুলে দেওয়ার খবরে দলে দলে গাজীপুরের কর্মস্থলে ফিরছেন শ্রমিকরা। সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাক, পিকআপ ও অটোরিকশাসহ বিভিন্ন উপায়ে কর্মস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন তারা। এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। পেটের দায়ে চাকরি বাঁচাতে মরিয়া এসব শ্রমিকদের পথের ভোগান্তি যেমন বেড়েছে তেমনই দিতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়ার মাশুল।

পুলিশ জানিয়েছে, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পোশাক শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফিরতে চেকপোস্টে কিছুটা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তারা পিকআপ, ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহনের চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন।

মুন্সীগঞ্জ মানিকগঞ্জ: শনিবার ভোর থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকায় আসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পথ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া এবং শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে চলাচলকারী প্রতিটি ফেরিতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। গাদাগাদি করে মানুষ পদ্মা পার হচ্ছেন ফেরিতে করে। তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। যে যেভাবে পারছেন ফেরিতে করে পদ্মা পার হচ্ছেন।

ফেরি পার হওয়ার পরে আবারও গাড়ির সংকটে পড়ছে মানুষ। বিকল্প উপায়ে বিভিন্ন যানে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে ভেঙে ভেঙে কর্মস্থলে ফিরছেন মানুষ। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া ঘাট থেকে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও সিএনজিতে জনপ্রতি ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে যাত্রীদের। যেখানে গণপরিবহন থাকলে মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় ঢাকায় ফেরা যায়। অনেকে যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

রাজবাড়ী থেকে ঢাকার উদ্দেশে ফেরির জন্য অপেক্ষা করা নাজমা আক্তার জানান, রবিবার থেকে কারখানা খোলা। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে ঢাকায় যেতে হবে। কাজে জয়েন করতে হবে। তাই পথে পথে দুর্ভোগ নিয়ে তিনি ঢাকায় ফিরছেন। তার মতো হাজারো পোশাক শ্রমিক সকাল থেকে ভিড় করেছেন পাটুরিয়া ঘাটে। তাদের অনেকে যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা ঘাটের ডিজিএম জিল্লুর রহমান বলেন, কারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণায় শনিবার সকাল থেকে ঢাকায় ফেরা মানুষের ঢল পড়েছে। এই নৌ-রুটে সাতটি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। কালকের পর এই চাপ কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাটুরিয়ার মতো শিমুলিয়া ঘাটেও মানুষের ভিড় দেখা গেছে। করোনা মহামারির কারণে চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে লঞ্চ, স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের চাপ বেড়েছে ফেরিতে। বাংলাবাজার ঘাট থেকে যেসব ফেরি ঘাটে আসছে তাতে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই পারাপার হচ্ছেন ঢাকামুখী যাত্রীরা।

বিআইডব্লিটিসি শিমুলিয়া ঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বাংলাবাজার ঘাটে প্রচুর যানবাহন। সেখান থেকে যে ফেরিগুলো আসছে তাতে প্রচণ্ড যাত্রী চাপ রয়েছে। রবিবার থেকে গার্মেন্টস খোলা থাকার কারণে এই চাপ বেড়েছে। আমাদের ধারণা এমন চাপ দুই দিন থাকতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/০১আগস্ট/ডিএম/জেবি)