আমিনুল-রেশমাদের অবর্ণনীয় ভোগান্তির গল্প

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২১, ২২:২৫ | আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২১, ২২:২৭

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

শনিবার ভোর ৫টায় খুলনা থেকে প্রাইভেটকারে মাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন আমিনুল ইসলাম। এক হাজার টাকা ভাড়ায় মাওয়া এসে ৩০ টাকায় ফেরিতে মুন্সীগঞ্জের এপারে পৌঁছেন তিনি। পরে হেঁটে মাওয়া চৌরাস্তায় এসে পিকআপে করে ২৫০ টাকা ভাড়ায় কেরানীগঞ্জের কদমতলী মোড়ে নামেন এই গার্মেন্টস কর্মী। হেঁটে বাবুবাজার সেতু পার হয়ে ৫০ টাকায় গুলিস্তান মোড়ে এসে যখন পৌঁছান, তখন বিকাল সাড়ে চারটা।

বিমর্ষ চেহারায়, ক্লান্ত শরীরে দাঁড়িয়ে থাকা এই যুবকের মাথায় তখনও চিন্তার ভাঁজ। কারণ তাকে যে যেতে হবে গাজীপুরের কালিয়াকৈর। কিন্তু কীভাবে যাবেন, আরও কত টাকা খরচ করতে হবে তা অজানা। কারণ রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলে যে যেভাবে পারছেন কয়েকগুন বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে ছুটছেন।
ঢাকা টাইমসকে ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘গাড়ি বন্ধ রেখে কারখানা চালু করে দিলো কিন্তু মানুষগুলো কেমনে আসবে একবারও কেউ ভাবলো না। সত্যি বলতে কি শ্রমিকদের কেউ মানুষ বলে ভাবে না।’
ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই শুক্রবার সিদ্ধান্ত হয় গার্মেন্টসহ শিল্পকারখানা রবিবার থেকে চালু করার। রাতেই গ্রামে থাকা শ্রমিকদের কাছে গার্মেন্টস কারখানা থেকে ফোন চলে যায় দ্রুত ঢাকা আসতে হবে।


বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ১ আগস্ট থেকে কাজে যোগ না দিলে চাকরি যাবে না এমন আশ্বাস দেওয়া হলেও তাতে ভরসা রাখতে পারেননি লাখ লাখ শ্রমিক। তাই গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ভোগান্তি মাথায় নিয়ে কর্মস্থলে আসেন শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবার ভোগান্তির চিত্র ছিল একই রকম। বিশেষ করে মাওয়া এবং আরিচা ফেরি পার হয়ে যারা এসেছেন তাদের কয়েক দফায় ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে। গুনতে হয়েছে কয়েকগুন বেশি টাকা।
শরীয়তপুরের ঘোসেরহাট থেকে কীভাবে ঢাকায় এসেছেন তা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে সেলিম হোসেনের। সঙ্গে থাকা দুই ছোট সন্তানকে দেখিয়ে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সকালে ওদের কয়টা ভাত খাওয়াইয়া রওনা হইছি। বিকাল ৫টা বাজে এখনো কিছু খায়নি।’


কীভাবে এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘোসেরহাট থেকে ২০০ টাকা করে ট্রলারে চাঁদপুর। সেখান থেকে ৫০০ টাকা করে জনপ্রতি ট্রলারে সদরঘাট আসলাম। ঘাটে উঠে দেখি রিকশাও নাই। হাঁটতে হাঁটতে গুলিস্তান। এই জায়গা দিয়ে কেমনে গাজীপুর যাবো আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। কারণ পকেটে বেশি টাকাও নাই।’
এসময় তার সঙ্গে আরেক পোশাক শ্রমিক রেশমা বলেন, ‘গাড়ি বন্ধ রাইখা গার্মেন্টস খুললেন আমরা ঢাকায় কি হাইটা আসমু? যারা এই সিদ্ধান্ত নেয় তারা কি আমাগো কথা ভাবে?’

(ঢাকাটাইমস/৩১জুলাই/বিইউ/জেবি)