ননস্টিক প্যানে রান্না করা খাবার খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি!

প্রকাশ | ০১ আগস্ট ২০২১, ০৯:২৩

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

ননস্টিকের বাসনে রান্না করতে আরাম আবার সময়ও লাগে কম। এজন্য বর্তমানে আধুনিক রান্নাঘরে ননস্টিক প্যান বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান। রান্নাঘরে থাকা হাঁড়ি, কড়া ও ফ্রাইং প্যান মোটেও নিরাপদ নয়। ননস্টিকের মধ্যেই লুকিয়ে আছে মারণ রোগ ক্যানসারের বিষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ননস্টিক বাসনে যে টেফলনের প্রলেপ থাকে তা থেকেই শরীরে বাসা বাঁধছে হাজারো রোগ। ননস্টিকের বাসন এজন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর।

 

ননস্টিক দিয়ে তৈরি রান্না করার জিনিসপত্রে যে ধরনের রাসায়নিক উপাদান থাকে সেগুলো রান্নার সময় খাবারের মধ্যে চলে যায়। রান্নার সময় তাপ এসব জিনিসপত্র থেকে বিষাক্ত পদার্থ নির্গত করে, যা খাবারকে বিষাক্ত করে তোলে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ননস্টিক পাত্রে রান্না করলে কম তাপে রান্না করা ভালো। তবে শুধু যে ননস্টিক পাত্র থেকেই আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে, তা কিন্তু নয়। রান্নার আরো অনেক জিনিস থেকেই এই ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

 

ননস্টিকের সমস্ত পাত্রই টেফলন দিয়ে তৈরি করা হয়। এই টেফলন আসলে ‘পলিটেট্রা ফ্লোরো ইথিলিনে’-এর কোটিং। কোটিং এর খরচ কমাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টেফলনের সঙ্গে ‘পারফ্লোরোঅক্টানয়েট’ অ্যাসিড’- পলিমার দিয়ে প্রসেস করা হয়। ফলে উচ্চ তাপমাত্রায় ননস্টিকের পাত্রে রান্না করা হলে কিংবা পাত্রটি খুব তেতে গেলে ধোঁয়া উঠতে থাকে। এই ধোঁয়া খুবই মারাত্মক। যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে রক্তের সঙ্গে মেশে। আর যা কার্সিনোজেনিক।

 

ননস্টিক পাত্রে বেশি তেল দিয়ে রান্না কিংবা কিছু ভাজলে, সেই তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। প্রায় ২০০-২৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রা হয়ে যায়, ঘি দিয়ে কিছু ভাজলে তাপমাত্রা ৪০০ ডিগ্রির বেশি উঠে যায়। তাপমাত্রার বৃদ্ধি বেশিরভাগ সময়ই আমরা বুঝতে পারি না। ফলে এই পাত্রের কোটিং বাষ্পীভূত হয়ে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করে। রান্নার উপাদান বা খাবারে এই গ্যাস মিশে যায়।

 

চিকিৎসকদের মতে, যাদের খুব চুল ওঠে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাদের পিএফওএ পজেটিভ, টেফলনের পাত্র ব্যবহার করেন যারা, তার ৬৫ শতাংশই হাই কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভোগেন, মহিলাদের ৭০ শতাংশ আশংকা থাকে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার।

 

ননস্টিকের পাত্রে তেল কমে বেশি ভাজা যায়- এই ভেবে বেশি ভাজাভুজি খাবার এই পাত্রে খেলে সবচেয়ে বেশি বিপদ বাড়ে। প্রয়োজনে অল্প তেলে সাধারণ কড়াইয়ে ভাজলে উপকার। খুব কড়া করে ভাজতে ও ননস্টিকের পাত্রে স্টিলের হাতা খুন্তি দিয়ে রান্না করলে বিপদ বাড়ে। এক্ষেত্রে পিএফওএ প্রলেপ খুব সহজেই খাবারে মেশে। দীর্ঘদিন ধরে এই পাত্রের ধোঁয়া ইনহেল করলে, হঠাৎ করে জ্বরের প্রবণতা বেড়ে যায়।

 

এটি ভয়ঙ্কর রোগের পূর্বাভাস। এই পলিমারের প্রলেপ এক ধরনের অর্গানিক অ্যাসিড। যা নার্ভের উপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। হঠাৎ করে মনসংযোগের অভাব, স্মৃতিশক্তি কমে যায়। ননস্টিকের পাত্র চার-পাঁচ বছর টানা ব্যবহার করলে ক্ষতি বেশি।

 

বেশিরভাগই জানেন ননস্টিক মানেই টেফলন কোটিং। তা কিন্ত একেবারেই নয়। পলিটেট্রাফ্লোরো ইথিলিন বা টেফলনের কোটিং থাকলে অল্প তাপমাত্রায় রান্না করলে বিপদ কম। গ্যাস লো-তে দিয়ে, জল দিয়ে ঝোল জাতীয় রান্না করলে ক্ষতি হয় না। বেশিক্ষণ ধরে ভাজাভুজি নয়। সাদা তেলে ভাজলে ধোঁয়া ওঠার আগে অবধি রান্না করলে নিরাপদ। ননস্টিকের পাত্র ধুতে স্কচবাইট ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে এই টেফলনের প্রলেপ ক্ষয়ে যায় দ্রুত, রান্না করলে সহজেই খাবারের সঙ্গে মেশে, কেনার সময় ভাল করে বুঝে নিন টেফলন বা পলিটেট্রাফ্লোরো ইথিলিনের কোটিং। লোহার ফ্রাইং প্যান ব্যবহার করা স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ।

 

ননস্টিক প্যানের চেয়ে লোহার পাত্র ব্যবহার করা নিরাপদ। এর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কম থাকে। এছাড়া চিনা সিরামক স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। সিরামিকের তৈরি কাপ, প্লেট ইত্যাদি জিনিসগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়। আপনি মাইক্রোওয়েভ ওভেনে সিরামিক কাপে চাও বানাতে পারেন।

 

(ঢাকাটাইমস/১আগস্ট/আরজেড/এজেড)