মৃদু হাওয়ায় দোল খাওয়া পদ্মফুলে প্রাণ জুড়ানো আলতাদিঘি

প্রকাশ | ০১ আগস্ট ২০২১, ১০:৪৮ | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২১, ১১:২৪

অরিন্দম মাহমুদ, ধামইরহাট (নওগাঁ)

নওগাঁ জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ধামইরহাট উপজেলার আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যান। বর্ষা এলেই এই দিঘিতে ফুটে ওঠে অফুরন্ত পদ্মফুল। মৃদু হাওয়ায় দোল খাওয়া পদ্মফুল মুগ্ধ করে ভ্রমণপিপাসুদের প্রাণ। এছাড়াও দিঘির পুরো এলাকা জুড়ে রাজ সরালি, পাতি সরালি, বালিহাঁস, রাজহাঁস, চকাচকি, বুনো হাঁস, জলপিপি, ডুবুরী পাখি, হরিয়াল পাখি, রামঘূঘুসহ নানা রকম পরিযায়ী পাখিদের ওড়াউড়ি আরেক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।

শালবনে ঘেরা আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যান রাজশাহী সামাজিক বনবিভাগের আওতায় নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার পাইকবান্দা রেঞ্জের অধীনে ধামইরহাট বিটে অবস্থিত। জেলা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার উত্তর ভারতীয় সীমান্তের কোল ঘেঁষে এবং জয়পুরহাট জেলা শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার পশ্চিমে, ধামইরহাট উপজেলা বাজার থেকে উত্তরে প্রায় পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার গেলেই দেখা মেলবে দৈর্ঘ্যে ১১০০ মিটার এবং প্রস্থে ৫০০ মিটারের উদ্যানটি। যার মোট আয়তন ২৬৪ দশমিক ১২ (৬৫২.৩৭ একর)  হেক্টর। এই বনভূমির মাঝখানে ৪৩ একর আয়তনে গড়ে ওঠেছে এক বিশাল দিঘী। দিঘির দক্ষিণ পাড়ে তাকালেই দেখতে পাওয়া যাবে বাংলাদেশ-ভারতের শেষ সীমানার পিলার।

প্রাচীন দিঘিগুলোর মধ্যে এটিই বোধ হয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সচল দিঘী। পরিবেশ ও বনমন্ত্রণালয় ২০১১ সালে ১৪ ডিসেম্বর আলতাদিঘিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করেছে।

লোকমুখে শোনা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চলে একসময় প্রবল খরায় মাঠ-ঘাট পুড়ছিল। খরায় রাজ্যে খাবার পানির চরম সংকট দেখা দেয়। একদিন রানী স্বপ্নে দেখলেন তাকে হেটে যেতে হবে বহুদূর। যতদূর তিনি হাটবেন ততদূর পর্যন্ত একটি দিঘি খনন করে দিলেই রাজ্যে পানির অভাব মোচন হবে। রানীর দাবির কারণে স্থানীয় জগদল বিহারের (১০৭৭-১১২০ খ্রিষ্টাব্দে) রাজা রামপাল ও সদর পালের রাজ্য শাসনের সময় রানী রাজার কাছে বর চাইলেন। তা হলো, সকালে ঘুম থেকে ওঠে তিনি যতদূর পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যেতে পারব, ততদূর পর্যন্ত একটি দিঘি খনন করে দিতে হবে। রাণী তার কথামতো হেঁটে চলেছেন। রাজা, উজির, নাজির পড়লেন বেকায়দায়। এত লম্বা দিঘি খনন করবেন কী করে? তাই কৌশলে পায়ে আলতা ঢেলে দিয়ে পা কেটে গেছে বলে রাণীর চলার পথ বন্ধ করে দেন। সেই থেকে এই দিঘির নামকরণ করা হয় আলতাদিঘী।

জয়পুরহাট জেলা থেকে বনে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী রোকছানা ও আব্দুল গফুর দম্পতি বলেন, আলতাদিঘি অনেক ভালো একটা জায়গা। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ইতিহাস সমৃদ্ধ দিঘিসহ এমন শালবন আর কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই।

আব্দুল গফুর বলেন, দিঘির বুকচিড়ে বেড়ে ওঠা পদ্ম ফুল, অচেনা পাখির মন মাতানো কিচিরমিচির শব্দ আর গহীন শালবনে উঁই পোকার ঢিবি এক কথায় অসাধারণ।

তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এখানে নিরাপত্তার অনেক অভাব রয়েছে। নেই কোনো নিরাপত্তাকর্মী। তা ছাড়া দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য নেই কোনো বিশ্রামাগার। তিনি ছাড়াও বনে ঘুরতে আসা অধিকাংশ দর্শনার্থীর মুখে শোনা গেছে এমন অভিযোগ।

এ বিষয়ে বনবিট কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, আগামী বছরে আলতাদিঘির অবকাঠামে উন্নয়নে বিভিন্ন কর্ম পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব অবকাঠামো দৃশ্যমান হলে পর্যটকদের থাকার ব্যাবস্থাসহ সকল সমস্যার সমাধান হবে।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় উদ্যান ঘোষণার পর ধামইরহাট উপজেলা সদর থেকে শালবন বনাঞ্চল ও আলতাদিঘি পর্যন্ত পাকা রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে বাস, মাইক্রোবাস, ভটভটি ও রিকশা-ভ্যানযোগে ধামইরহাট থেকে আলতাদিঘি পর্যন্ত চার-পাঁচ কিলোমিটার পথ অনায়াসে পাড়ি জমানো সম্ভব। শালবাগানে বনবিভাগের উদ্যোগে ইতোমধ্যে ওষুধিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা, বাঁশ ও বেত লাগিয়ে বন্যপ্রাণী ও পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এ বনাঞ্চলে অজগর, হুনুমান, বানর, গন্ধগোকুল, বেজি, সজারু, মেছোবাঘ, বনবিড়াল, শিয়ালসহ প্রায় ২০ প্রজাতির পাখি অবমুক্ত করা হয়েছে। একদিকে পর্যটক ও দর্শকদের আনন্দ-বিনোদনের পাশাপাশি এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজার রাখার জন্য এ বনাঞ্চল যথেষ্ট অবদান রাখছে।

(ঢাকাটাইমস/১আগস্ট/পিএল)