শাহেদের মতো ভয়ংকর আরেক প্রতারক ইশরাত

প্রকাশ | ০১ আগস্ট ২০২১, ১৪:০৯ | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২১, ১৭:০৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ইশরাত রফিক ঈশিতা। কমিউনিটি বেইজড হেল্থ কেয়ার (সিবিএইচসি) পড়াশোনা করে চিকিৎসক হন। কিন্তু নিজেকে পরিচয় দিতেন সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিসেবে। নিজের বাড়ির সাইনবোর্ডে চিকিৎসক পরিচয়ের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর পদও ব্যবহার করতেন।

গত বছর ইসরাত বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও গবেষক হিসেবে ‘বছর সেরা নারী বিজ্ঞানী’ পুরস্কার পান। এ পুরস্কারের নাম ইন্টারন্যাশনাল ইন্সপিরেশনাল ওমেন অ্যাওয়ার্ড (আইআইডব্লিউ ২০২০)। ভারতের উত্তর প্রদেশের হোটেল পার্ক অ্যাসেন্টে এক অনুষ্ঠানে ইশরাতের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সংবাদটি দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন ছাড়াও প্রিন্ট ও অনলাইন গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ পায়। কিন্তু ইশরাত এমনিতেই পুরস্কার পাননি; প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তিনি সবাইকে বোকা বানান।

ইশরাত টেলিভিশনের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সচেতনতা অনুষ্ঠানে হাজির হতেন। দিতেন টিপস। এভাবে তিনি সবার কাছে নিজেকে বিশ্বস্ত করে তোলেন। রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান শাহেদ করিমের মতো আরেক প্রতারক এই ইশরাত।

সেরা নারী চিকিৎসা বিজ্ঞানী পুরস্কারের বিষয়ে ইশরাত তখন গণমাধ্যমে জানান, জিআইএসআর ফাউন্ডেশনের এ পুরস্কার দেওয়া হয় ৩৫ বছরের বয়সী চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও গবেষকদের। এর আগেও তিনি ‘রিসার্চ অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ও জিতেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পার্ক রেজিস ক্রিস কিন হোটেল এক অনুষ্ঠানে তার হাতে এ অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়। বছরের সেরা নারী বিজ্ঞানীর অ্যাওয়ার্ড ছাড়াও আরও কয়েকটি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি।

যেমন- ভারতের ‘স্টেট জেম অ্যাওয়ার্ড ২০২০ ’ এবং থাইল্যান্ডে আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলনে অংশ নিয়ে ‘আউটস্ট্যান্ডিং সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড রিসার্চার অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। ২০১৮ সালে লিন্ডা ও নোবেল লরিয়েট মিট-মেডিসিনে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও গবেষক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বলেও দাবি করেন ইসরাত। 

এদিকে ইশরাতের এসব দাবির সবই ভুয়া বলে জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতরাতে র‌্যাবের অভিযানে সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এলিট ফোর্স র‌্যাব বলছে, তিনি নিজেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পরিচয় দিতেন। তাছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং দেশি ও বিদেশি সংস্থার ভুয়া প্রতিনিধি পরিচয়ে প্রতারণাও করেছেন। কথিত এই তরুণ চিকিৎসা বিজ্ঞানীর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আসছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

 

কী কারণে এমন প্রতারণা করতেন জানতে চাইলে র‌্যাবের এক কর্মকর্তা ঢাকাটামসকে বলেন, তিনি এগুলোকে পুঁজি করে বড় ধরনের প্রতারণা ফাঁদ পেতেছিলেন। বিশেষ করে বিদেশ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিতে চেয়েছিলেন। আমরা তার বিষয়ে আরও গভীর ভাবে খতিয়ে দেখছি।

অভিযানে অংশ নেয়া র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা কদিন ধরে তার গতিবিধি নজরদারিতে রেখেছিলাম। তখন দেখতে পাই তার বাড়ির সাইনবোর্ডে চিকিৎসকের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর পদ কর্নেল লেখা। কিন্তু নিজেকে ব্রিগেডিয়ার পরিচয় দিতেন। তখন ইশরাতকে প্রশ্ন করা হয়, আপনার সাইনবোর্ডে কর্নেল লেখা; কিন্তু পরিচয় দিচ্ছেন ব্রিগেডিয়ার? উত্তরে ইশরাত বলেন, প্রজ্ঞাপন হবে, কাগজপত্র রেডি হচ্ছে। তাই সাইনবোর্ড ঠিক করিনি। করে ফেলবো।  

অভিযানে তিনি র‌্যাবকে অনেকভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন।

এদিকে বিকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে ইশরাতের বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানাবে এলিট ফোর্সটি।

(ঢাকাটাইমস/১আগস্ট/এসএস/কেআর)