‘ভালো গান, নাটক বা মুভি আমাদের বদলে দিতে পারে’

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২১, ১৮:২২ | প্রকাশিত : ০১ আগস্ট ২০২১, ১৭:৪৩

আমি তখন শিপে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। সে সময়টা আমার সাগরভীতি ছিল প্রবল। সাগর উত্তাল হলে একটানা চার-পাঁচ দিন চলতো রোলিং-পিচিং। আমাকে তাই মাঝেমাঝে অনাহারেই থাকতে হতো। লবস্টার, রূপচাঁদা বা আইলা মাছের ফ্রাই শুধু দেখেই যেতাম, সাগরে থেকে খাওয়া হতো না কখনো।

একদিন ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে শিপের টপ ডেক-এ বসে মোবাইলের হেডফোনে গান শুনছিলাম। শ্রেয়া ঘোষালের ‘সাগর ডাকে আয়’ গানটা হঠাৎ বেজে উঠল। গানটা শোনার পর আমার ভেতর একটা ভাবান্তর ঘটল। মনে হল, এই যে সাগর দুলছে এটা আমাদের কষ্ট দেওয়ার জন্য নয়, ওটা ওর কিশোরী মেয়ের মতো দলবেঁধে গোল্লাছুট খেলার মুহূর্ত, তাতে আমাদের বরং রাগ না হয়ে তার খুশিতে খুশি হওয়ার কথা।

এরপর থেকে সাগর দুললে আমারও মন ভালো হয়ে যেত। কিন্তু দেখেন এই গানটি শোনার আগে পর্যন্ত এমন চিন্তা আমার মাথায় আসেনি।

ঢাকা ভার্সিটিতে মাস্টার্স করার সময় একবার বাড়িতে যাচ্ছিলাম। আমার ঠিক মনে আছে, ওটা গাবতলী বাস টার্মিনালই ছিল। দু-তিনজন হিজড়া বাসে উঠল এবং টাকা দাবি করল। আমি তাদের টাকা দিতে অস্বীকার করলাম। তারা আমার থেকে টাকা নিয়েই ছাড়বে আর আমি কিছুতেই দেব না। তারা অনেক খারাপ শব্দের অবতারনাও করল। আমার চোখের চশমা পর্যন্ত কেড়ে নিলো। অবশেষে আমারই জয় হলো এবং তাদের বাস থেকে বের করে দেওয়া হলে মনে একটা শান্তি বয়ে গেল।

ছুটি কাটিয়ে ভার্সিটিতে ফিরে আসার পর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট সাবজেক্ট -এর একটা কেস স্ট্যাডি করছিলাম, হিজড়াদেরই জীবনের উপরে। মনে হচ্ছিল তাদের সকল দুঃখ-কষ্ট-অভিমানকে, কে যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির জন্য পাওয়া সেই শান্তি আবার অশান্তিতে রুপ নিলো। ফলাফল: হিজড়াদের প্রতি আবেগ-ভালোবাসার স্থান তৈরি হলো। কিন্তু দেখুন ওদের নিয়ে কেস স্ট্যাডিটি পড়ার আগ পর্যন্ত এমন চিন্তা আমার মাথায় আসেনি।

অনেকেই আমরা কুকুরকে অপছন্দ করি। আমিও আপনাদেরই মতো। ‘হ্যাচি: এ ডগ’স টেল’ মুভিটা দেখার পর থেকে কুকুরের প্রতি ঘৃণা সরাসরি ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু দেখুন এই মুভিটি দেখার আগ পর্যন্ত এমন চিন্তা আমার মাথায় আসেনি।

একটা ভালো গান/ কবিতা/ গল্পের বই/ নাটক কিংবা মুভি আমাদের ভেতরের জেনেটিক্স ফরমেশনকেও পরিবর্তন করে দিতে পারে। অনেকেই দুঃখ-কষ্টের কন্টেন্ট দেখতে চান না। তাদের খোঁড়া অজুহাত, ওটা দেখলে আবার কান্না করতে হবে। বিষয়টা আদৌ সে রকম নয় বরং উল্টো।

চাইলেই আপনি ভিন্ন ভিন্ন সুখের সাগরে ভাসতে পারেন। ভালো-খারাপ সবটাই আপনার হাতে। কোনটা কীভাবে দেখছেন, সেটাই আপনার দৃষ্টিভঙ্গি।

লেখক: রথীন্দ্রনাথ রায়, অ্যাসিসটেন্ট অফিসার (টেকনিক্যাল), বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।

ঢাকাটাইমস/০১আগস্ট/এএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :