আলোচনায় ‘মোমের পুতুল’, মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন শামীম

প্রকাশ | ০১ আগস্ট ২০২১, ১৮:৩৮

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বা হিজড়া হওয়ায় নয়নের উপর তার বোন ও বাবা বিরক্ত হয়ে উঠেন। মা ছাড়া কেউই তাকে ভালোবাসে না। একসময় পরিবারে অবহেলার পাত্রে পরিণত হয় নয়ন। বাধ্য হয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় সে। যোগদেয় হিজড়াদের গ্রুপে। আর তখন থেকে সবাই তাকে নেয়না বলে চিনে। এমন একটি গল্প নিয়ে পরিচালক মুহাম্মদ মিফতাহ্ আনান নিজের গল্প, চিত্রনাট্য ও সংলাপে নির্মাণ  করেছেন নাটক ‘মোমের পুতুল’।

মানবাধিকার বঞ্চিত, অন্ধকার জগতের বাসিন্দা ও সমাজের অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গ তথা হিজড়াদের জীবনযাত্রা এবং পরিবার থেকে পাওয়া অবহেলার উপর ভিত্তি করে এগিয়ে নাটকের গল্প।এতে ‘নেয়না’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন এ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেতা শামীম হাসান সরকার।

ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই নির্মিত হয় অধিক সংখ্যক নাটক।তার মধ্যে কিছু নাটক আসে আলোচনায়। এবারও সেরকম কিছু নাটক নির্মিত হয়েছে।তবে এরইমধ্যে আলোচনার তুঙ্গে চলেছেন ‘মোমের পুতুল’ নাটকটি।ব্যাপক সাড়া ফেলেছে দর্শক মহলে।পাশাপাশি অর্জন করছে ভূয়সী প্রশংসা। ইউটিউব থেকে নাটকটি দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে মন্তব্য করছেন হাজারো দর্শক।তারা তাদের অনুভূতি লিখছেন কমেন্ট বক্সে।আর অভিনয় দিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন ঈদের নাটকে শামীম হাসান সরকার।

নাটকটি প্রসঙ্গে শামীম হাসান সরকার বলেন, গল্পে আমি ছেলে হয়ে জন্মাই। আমার নাম থাকে নয়ন। একটা সময় জানা যায় আমি ছেলে নই, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। তখন নামটিও বদলে যায়।নয়ন থেকে হয়ে যাই নেয়না। নাটকটির মাধ্যমে বিনোদনের পাশাপাশি আমাদের সমাজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছি।জানিনা কতটুকু পেরেছি।

তার ভাষ্যমতে, নাটকটি ভিউয়ের জন্য করিনি আমরা একটা সোশ্যাল ম্যাসেজ দেওয়ার জন্য কাজটি করেছি। আমার শৈশব-কৈশোরের স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ জীবনের বন্ধুরা এবং সিনিয়র-জুনিয়র ভাইয়েরা।নাটকটি দেখার পর তাদের কাছে থেকে যে-লেভেলের ফিডব্যাক পাচ্ছি।তাদের প্রতিটি কথা আমার জন্য একেকটা অ্যাওয়ার্ডের মতো।তাদের প্রতি আমি বিশেষ কৃতজ্ঞতা। কারণ তারা এমন একটি ভিন্ন ঘরানার কাজ গ্রহণ করেছেন সেই জন্য। সবার কাছে আমাদের একটাই চাওয়া থাকবে নাটকটি ভালো লাগলে সবাই শেয়ার করবেন। তাহলে আমরা যে ম্যাসেজটা পৌঁছাতে চাচ্ছি সেই জায়গা থেকে কিছুটা হলেও সাকসেস হবো।

শামীম হাসান সরকার আরও বলেন, আরেকটি সুখের অভিজ্ঞতা,পরিবার নিয়ে অনেকেই কাজটি দেখছে।একে অন্যকে দেখতে সাজেস্টও করছে। নাটকটি দেখার পর মানুষ স্বেচ্ছায় শেয়ার করছে। আবেগ মিশ্রিত কথায় ক্যাপশন লিখছেন। সাধারণত দেখা যায় তরুণ-তরুণীরা আমাকে ফোন করেন বা এসএমএস এর মাধ্যমে কাজের ফিডব্যাক জানায়।সেই ক্ষেত্রে এই কাজটির বেলায় কিছুটা ভিন্নতা লক্ষ্য করেছি।নাটকটি দেখার পর অন্যদের বাবা-মা’রা আমার জন্য দোয়া করছেন নিজের বাবা-মায়ের মতো।এটা আমার জন্য অন্যরকম একটা ছিল পাওয়া। কারণ এমন রেসপন্স আমার আগের কাজগুলো থেকে পায়নি।তিন দিনের শুটিং কিভাবে শেষ করেছি,নিজেই জানি না।কারণ চরিত্রের মধ্যে ডুবে ছিলাম।নাটকটি যখন একা বসে দেখছিলাম।আর ভাবছিলাম এটা কি সত্যি আমি ছিলাম। এতদিন ধরে নাটকে কাজ করছি। কিন্তু কখনো নিজের নাটক দেখে নিজে এতোটা আবেগি হয়নি। ‘নেয়না’ দেখে ভিশন আবেগি হয়ে গিয়েছিলাম আমি।সেটা ভাষায় প্রকাশ করে বোঝানো সম্ভব না।আমার চোখে পানি চলে এসেছিল।আমার জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা নিজের নাটক দেখে,নিজের চোখে পানি চলে আশাটা, এটা এতোটা সহজ না কিন্তু।সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।যেনো ভবিষ্যতে আল্লাহ যেনো এমন আর ভালো কাজের সুযোগ দেন।

নাটকের নিজের কাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে শামীম হাসান সরকার আরও বলেন,‘মোমের পুতুল’ নাটকের আমার শিল্পী জুবায়ের জাহিদ,কেএম আমিন ও শাহবাজ সানী।এই তিন জন মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা।তারা না থাকলে কাজটি আমি এভাবে করতে পারতাম না।পাশাপাশি টিমকেও ধন্যবাদ। তারা আমাকে কাজটি ভালোভাবে শেষ করার জন্য ফুল সাপোর্ট দিয়েছেন।আর আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া ছিল। যখন আমি তেজগাঁও শেষ দিনের শুটিং করছিলাম। তখন ইমোশনাল সিকোয়েন্স তিনজন রিয়েল তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ আমাদের শুটিং দেখছিলেন। শুটিংয়ে শেষে তাদের যখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম।আপনাদের হয়ে কথা বলছি ঠিকঠাক আছে। তারা তখন হাত তালি দিয়ে দোয়া করছেন আমার জন্য এবং সেই মূহুর্তে তাদের মুখে যে হাসিটা আমি দেখছি, সেটা আপনাদের বলো বোঝানো সম্ভব না।

মোমের পুতুল’ নাটকটিতে শামীম হাসান সরকার ছাড়াও আরও অভিনয় করেছেন সাবেরী আলম, শহীদুজ্জামান সেলিম, ফরহাদ লিমন প্রমুখ।

‘মোমের পুতুল’ নাটকটি ঈদুল আজহা উপলক্ষে নির্মিত নাটকটি বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) গ্লোবাল টিভির ইউটিউবে প্রাচার হয়। এক দিনের মধ্যেই প্রায় পাচঁ লাখ ভিউ হয় নাটকটি। ‘মোমের পুতুল’ নাটকটির শুটিং হয় সাভার ও তেজগাঁওয়ে।

ঢাকাটাইমস/০১আগস্ট/এএইচ