বিকন ফার্মার ইপিএস আহামরি নয়, শেয়ার দর বৃদ্ধির পেছনে কারসাজি হচ্ছে কি তবে?

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২১, ১৯:৫০ | প্রকাশিত : ০১ আগস্ট ২০২১, ১৯:২৫

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ওষুধ এবং রসায়ন খাতের কোম্পানি বিকন ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের শেয়ার দর বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। কোম্পানিটির ইপিএসও আহামরি নয়। শেয়ার দর বৃদ্ধির পেছেনে নেই কোনও সংবেধনশীল তথ্য। তবুও লাফিয়ে বাড়ছে কোম্পানিটির শেয়ার দর এক মাসে বেড়েছে ৬৪ শতাংশ বা ৭৯.৪০ টাকা। কোম্পানিটির শেয়ারের এমন উর্ধ্বমূখী প্রবণতা কোনও কারসাজি কি-না প্রশ্ন বিনিয়োগকারীদের।

গত ছয় মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১৯০ শতাংশ বা ১৩৩ টাকা। গত ২৬ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর ছিল ৭০ টাকা। জুলাই মাসের শেষে এসে তা দাড়ায় ২০৩ টাকায়। ডিএসইতে সবশেষ এ শেয়ারের দর দাড়ায় ২০৩ টাকা।

কোম্পানিটির বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা গেছে, সিরিয়ায় বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ওষুধ রপ্তানির বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তির হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সিরিয়া সরকারের একটি টেকনিক্যাল টিম গত ৮ মার্চ তাদের কারখানা পরিদর্শন করেছে। টিমের সদস্যরা কোম্পানিটির ওষুধ উৎপাদনের সার্বিক কার্যক্রমে সন্তোষও প্রকাশ করলেও এখন পর্যন্ত চুক্তির বিষয়ে কোন অগ্রগতি হয়নি।কবে নাগাদ চুক্তি হবে তারও কোন ঠিক নেই।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে চিঠির জবাবে কোম্পানিটি এ তথ্য জানিয়েছে। বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস সিরিয়ায় চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ ৫০ লাখ ডলারের ওষুধ রপ্তানি করতে প্রস্তুত থাকলেও এখন পর্যন্ত চুক্তি না হওয়ায় কোম্পানিটি এই রপ্তানি করতে পারছে না। চুক্তি হলে কোম্পানিটির এক বছরের মধ্যে রপ্তানি ১ কোটি ডলারে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে কোম্পানিটির আর্থিক পারফরম্যান্সে রপ্তানির ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এমন খবরকে পুঁজি করে কোম্পানিটির শেয়ার দর টেনে বাড়ানোর চেষ্টা করছে একটি পক্ষ। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি পুনরায় খারাপ হতে শুরু করায় এ চুক্তি কবে নাগাদ হতে পারে সে বিষয়েও নিশ্চিত নয় কোম্পানিটি। যদি চুক্তিটি না হয় তাহলে এতো বেশি দরে শেয়ার ক্রয় করে অনেক বেশি ক্ষতির মূখে পড়তে হবে বিনিয়োগকারীদের এমনটাই মনে করছে বাজার সংশ্লিষ্টরা।

কোম্পানিটির চুক্তির বিষয়ে এখন কোনও সম্ভাবনা না থাকলেও শেয়ার দর বাড়ছে হুহু করে। তাহলে কি কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে, প্রশ্ন বিনিয়োগকারীদের। জানতে চাইলে শাহ পরান নামে এক বিনিয়োগকারী ঢাকা টাইমসকে বলেন, কোম্পানিটির সিরিয়ার সরকারের সাথে যে চুক্তির কথা ছিলো তা কবে নাগাদ হবে তার কোন ঠিক নেই। তবুও কোম্পানিটির শেয়ারকে একটি পক্ষ টেনে ওপরে তুলেছে। তারা শেয়ারটিকে নিয়ে কারসাজিতে মেতেছে। এতে করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই বিকন ফার্মার শেয়ারের বিষয়টি বিএসইসির নজরে নেয়া প্রয়োজন।

এ বিষয়টি জানতে বিকন ফার্মাসিটিক্যালসের সচিব খলিলুর রহমানের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারের অস্বাভাবিক দর ও লেনদেন বৃদ্ধির নেপথ্যে অপ্রকাশিত কোনও মূল্যসংবেদনশীল তথ্য রয়েছে কিনা সে বিষয়ে জানতে চেয়েছিল ডিএসই। সেসময় কোম্পানিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, কী কারণে শেয়ারদর ও লেনদেন বাড়ছে, সে বিষয়ে কিছু জানে না তারা।

সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০-২১ হিসাব বছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ২৭ পয়সা। দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ১ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ১২ পয়সা। ৩১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ২২ টাকা ৭১ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ১২ টাকা ৭৯ পয়সা।

সর্বশেষ রেটিং অনুযায়ী, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের সার্ভিল্যান্স এনটিটি রেটিং ‘এ-টু’। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন, আলোচ্য সময় পর্যন্ত ব্যাংকের কাছে কোম্পানিটির দায়সহ আনুষঙ্গিক হালনাগাদ অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রত্যয়ন করেছে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিআরএবি)।

৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরে ৬ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছিলো ১ টাকা ৬৫ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৫১ পয়সা। ৩০ জুন কোম্পানিটির এনএভি ছিল ২০ টাকা ৪ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ১২ টাকা ৯০ পয়সা।

২০১০ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২৩১ কোটি টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ২৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ২৩ কোটি ১০ লাখ। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। এছাড়া ৩৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বাকি ৩৫ দশমিক ০১ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৩১জুলাই/এসআই/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :