মেয়ে অপহরণের মামলা করায় কারাগারে ভুগছেন বাবা

শহর প্রতিনিধি, শেরপুর
 | প্রকাশিত : ০১ আগস্ট ২০২১, ২০:৫৫

মেয়ে অপহৃত হয়েছে। এরপর অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন মেয়ের বাবা। কেন তিনি আইনিব্যবস্থা নিলেন তার ‘খেসারত’ হিসেবে তাকেও মামলায় জড়িয়ে দেন আসামিরা। সেই মামলায় গত প্রায় এক মাস যাবৎ কারাভোগ করছেন অপহৃত মেয়ের বাবা।

ভুক্তভোগী শাহজাহান শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের জড়াকুড়া গ্রামের মৃত সিরাজুল হকের ছেলে। তার পরিবারের ভাষ্য, মেয়েকে অপহরণের মামলায় অভিযুক্ত ২ নম্বর আসামি আতিকুল ইসলাম ‘মিথ্যা মামলা’ করেছেন। সেই মামলায় শাহজাহান গ্রেপ্তার হয়ে এখন শেরপুর জেলা কারাগারে বন্দি।

অপহরণ মামলার আসামি আতিকুল ইসলাম ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার নিগুয়ারী গ্রামের মৃত আতাউর রহমানের ছেলে। একই মামলার প্রধান আসামি ছামিউল হক (২৮) উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের ছোট মালিঝিকান্দা গ্রামের মুন্তাজ আলীর ছেলে। সম্পর্কে শাহজাহান ছামিউল হকের মামা।

ছামিউল হক ঢাকার আশুলিয়ায় বসবাস করেন। অপহৃত মেয়ের বাবা শাহজাহানের করা অপহরণের মামলার সূত্রে জানা যায়, গত রমজান মাসে ছামিউল হক আশুলিয়া থেকে তার দুই বন্ধুকে নিয়ে জড়াকুড়া গ্রামে মামা শাহজাহানের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। গত ৪ মে ছামিউল হক তার মামাতবোন কিশোরী মেয়ে ও ছোট এক ভাইকে নিয়ে শপিংয়ের নাম করে কৌশলে বাড়ি থেকে বাজারের উদ্দেশ্যে বের হন। তারা সময় মতো বাড়িতে ফিরে না এলে বাড়ির লোকজন তাদের খোঁজাখুঁজি করতে থাকে।

এদিকে ছামিউল হক কৌশলে ওই কিশোরীকে নিয়ে আশুলিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। কিন্তু কিশোরীর আর্তচিৎকারে আশুলিয়ায় নিতে না পেরে শেরপুর জেলা সদরে ছামিউল হক বাধাগ্রস্ত হয়। পরে রাতে জেলা সদরের একটি বাড়িতে নেয়া হয় তাকে। সেই বাড়িতে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অবশেষে শেরপুরের খোয়ারপাড় মোড়ে ওই কিশোরী ও তার ছোটভাইকে রেখে কৌশলে গা-ঢাকা দিয়ে পালিয়ে যান ছামিউল হক এবং তার দুই বন্ধু।

এদিকে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে পরিবারের লোকজন খোয়ারপাড় মোড়ে এসে রাতে ওই কিশোরী ও তার ছোট ভাইকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে ওই কিশোরীর মা জরিনা বেগম বাদি হয়ে তিনজনকে আসামি করে এ বিষয়ে শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গত ৯ মে একটি মামলা করেন।

আদালত মামলাটি সাত কার্যদিবসের মধ্যে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। এরপর থানা পুলিশ মামলাটি আমলে নিলেও রবিবার এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

অন্যদিকে বাদীর অভিযোগ, পালিয়ে থাকা আসামিরা অপহরণের অভিযোগে করা মামলা তুলে নিতে বাদী ও তার পরিবারের লোকজনকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে। কিন্তু তাদের দাবি অনুযায়ী মামলা তুলে নিতে রাজি হননি বাদী পক্ষ। তাই গত ২০ জুন আশুলিয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ‘প্রতারণার অভিযোগে মিথ্যা মামলা’ করেন অপহরণ মামলার ২ নম্বর আসামি আতিকুল ইসলাম। এতে আসামি করা হয় অপহৃত কিশোরীর বাবা শাজাহান ও ভাই জামান মিয়াকে।

আতিকের করা প্রতারণা মামলায় বিচারক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ জুলাই ঝিনাইগাতী থানা পুলিশ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। এরপর আদালত তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর থেকে শাহজাহান গত প্রায় এক মাস যাবৎ জেলা কারাগারে আছেন।

অপহৃত কিশোরীর মা জরিনা বেগম জানান, মিথ্যা মামলায় তার স্বামী শাহজাহানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরপর তার করা অপহরণ মামলার আসামিরা মামলা তুলে নিতে তাকে ও তার পরিবারের সদস্যের নানাভাবে ভয় দেখাচ্ছে। এতে তার স্বামী শাহজাহান কারাবাসের পাশাপাশি পরিবারের অন্যরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

অপহরণ মামলার আসামিরা এলাকার বাইরে থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তাই অভিযোগের বিষয়ে তাদের বক্তব্যও জানা যায়নি।

ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান জানান, অপহরণ মামলার আসামিরা আত্মগোপনে থাকায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলেও অভিযান অব্যাহত আছে।

এ ব্যাপারে অপহরণ মামলার বাদী জরিনা বেগম মিথ্যা মামলায় কারাবান্দি তার স্বামীকে মুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/১আগস্ট/এসএ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :