কর্মসৃজনের ৩৫ লাখ টাকা হরিলুটের অভিযোগ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০১ আগস্ট ২০২১, ২১:২৪

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় ব্রহ্মপূত্র নদবেষ্টিত দ্বীপ ইউনিয়ন সাহেবের আলগায় কর্মসৃজনের ৮৮৬ শ্রমিকের ৩৫ লাখ টাকা হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শ্রমিকরা প্রতিবাদ করলে সেখানে উপস্থিত উলিপুর থানা ও নামাজের চর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সদস্যরা উভয়কে শান্ত করে।

অভিযোগ উঠেছে শ্রমিকদের বিতরণের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আয়োজন করা হয় ভূরিভোজের। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (৩১ জুলাই) সকালে ইউনিয়নের চরদুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে।

উলিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নে ২০২০-২১ অর্থ বছরে কর্মসৃজন কর্মসূচি (মঙ্গা) প্রকল্পে ৮৮৬ জন শ্রমিক রাস্তাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক মাটির কাজ করেন। শ্রমিকরা দুই দফায় ৮০ দিন কাজ করেন। ২০০ টাকা করে ৮৮৬ জন শ্রমিকের ৮০ দিনের পাওনা হিসেবে এক কোটি ৪১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়।

প্রতি শ্রমিকের জন্য ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ তোলা হলেও বিভিন্ন খরচের কথা বলে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা প্রত্যেকের কাছ থেকে চার হাজার টাকা করে কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানালে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়। ফলে সকাল ৮টায় বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হলেও কয়েকদফায় বিতরণ বন্ধ হয়ে যায়। এসময় শ্রমিকরা প্রতিবাদ করলে ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিক আলী মন্ডল, পরিষদের মেম্বারগণ ও তাদের লোকজনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এ সময় সেখানে উপস্থিত উলিপুর থানা থেকে আগত আটজন পুলিশ সদস্য ও ওই চরে অবস্থিত নামাজের চর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সদস্যরা শ্রমিকদের শান্ত করে। এরই মাঝে অগ্রণী ব্যাংকের লোকজনেরা দুপুর ১২টার দিকে বিতরণ শুরু করে। তারা ১৬ হাজার টাকা করে চেয়ারম্যান মেম্বারদের হাতে তুলে দিলেও জনপ্রতিনিধিরা কৌশলে চার হাজার টাকা করে কেটে নেয়।

অভিযোগ উঠেছে বিতরণকারে পিআইও সিরাজুদৌলা পাশের একটি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। বিতরণ শেষে চেয়ারম্যান, মেম্বারগণ, বিতরণকারীরা, পুলিশ সদস্যরা ও দলীয় লোকজন শ্রমিকদের অর্থে ভুরিভোজ করেন।

শ্রমিক কানচু মিয়া, পরীভানু, আমিরজান, সোনাভানু অভিযোগ করে বলেন, আমগো ৮০ দিন কামকাজ করছি। মেম্বর-চেয়ারম্যান ১৬ হাজার টেকা না দিয়া ১২ হাজার টেকা দিসে। আমাগো হের বিচার চাই।

উপকারভোগী ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জবেদা খাতুন বলেন, চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা আমাকে জোর করে ১২ হাজার টাকা দিলো। আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি।

চার হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সাহেবের আলগা ইউপি সদস্য কামাল হোসেন জানান, বিভিন্ন খরচ বাবদ এই টাকা নেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে সাহেবের আলগা ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিক মন্ডল বলেন, অগ্রণী ব্যাংকের লোকজন ও পিআইও টাকা বিতরণ করেছেন। টাকা কম দেওয়ার বিষয় আমি কিছুই জানি না।

অভিযোগ প্রসঙ্গে উলিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজুদৌলা বলেন, ‘ওই টাকা বিতরণের জন্য ইউএনও সাহেব আমাকে এবং ব্যাংকের ম্যানেজারকে (অগ্রণী) ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলেন। টাকার অংক বেশি থাকায় পুলিশ বিভাগের সহযোগিতা নেয়া হয়। শ্রমিকদের টাকা কেটে নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।’

সিরাজুদৌলা বলেন, ‘আমরা সরাসরি উপকারভোগীদের হাতে টাকা তুলে দিয়েছি তাই যারা সুবিধা করতে পারেনি তারাই টাকা আত্মসাতের বিষয় অপপ্রচার করছে।’ ভুরিভোজের বিষয়ে বলেন, ‘দুর্গম এলাকায় নিজস্ব ব্যাস্থাপনায় আমাদের খেতে হয়েছে।’

এ ব্যাপারে নামাজের চর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রাজ্জাক জানান, সেখানে বিশৃংখলা সৃষ্টি হলে উলিপুর থানা পুলিশ ও তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থেকে বিতরণ কার্যক্রমে সহযোগিতা করেন।

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরে জান্নাত রুমি বলেন, ‘শ্রমিকদের হাতে টাকা তুলে দিয়েছে। এরপর তারা কী করেছে সেটা আমি জানি না। চার হাজার টাকা কর্তনের বিষয়ে কোনো উপকারভোগী আমার কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১আগস্ট/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :