জটিল হচ্ছে ময়মনসিংহের করোনা পরিস্থিতি

প্রকাশ | ০২ আগস্ট ২০২১, ১৪:১৩ | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২১, ১৪:৪৯

আজহারুল হক, ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহে ক্রমশ জটিল রূপ নিচ্ছে প্রাণসংহারী করোনাভাইরাস। জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিনই গড়ে প্রায় ৭৩ জন করে নতুন রোগী আসছেন। গত ৭ দিনে ময়মনসিংহ মেডিকেলের করোনা ইউনিটে ৫২৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। কঠোর লকডাউনেও ঠেকানো যাচ্ছে না সংক্রমণ। লকডাউনের মধ্যেও গত এক সপ্তাহ ধরে মৃত্যু ও শনাক্তের হার ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী।

মমেক হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, গত ১ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত করোনা ইউনিটে করোনায় ও উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪৬৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। করোনায় আক্রান্তদের চেয়ে উপসর্গেই প্রাণ যাচ্ছে তুলনামূলক অনেক বেশি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত বছর ২১০টি সাধারণ শয্যা ও ১০টি আইসিইউ শয্যা নিয়ে ডেডিকেটেড করোনা ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়। রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শয্যা সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ৪৭৫টি শয্যা রয়েছে। আইসিইউর সংখ্যা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২২টি। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয়টি জেলাসহ সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম ও গাজীপুর জেলার করোনায় আক্রান্ত রোগীদের উন্নত চিকিৎসার ভরসাস্থল এখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত করোনা ইউনিটের সাধারণ ওয়ার্ডে কোভিড ও নন–কোভিড মিলে ৪৯০ জন এবং আইসিইউতে ২২ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নতুন ভর্তি হয়েছেন ৮৫ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৩ জন।

এছাড়া ওয়ানস্টপ ফ্লু কর্নারে প্রতিদিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা রোগীরা সেবা পাচ্ছেন। টেলিমেডিসিনেও সেবা নিচ্ছন গড়ে অর্ধশতাধিক রোগী।

করোনা ইউনিটের চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুস্থ হয়ে দুদিন আগে বাড়ি ফেরা গফরগাঁওয়ের এক প্রাথমিক শিক্ষক বলেন, ৫ দিন ময়মনসিংহ মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্সদের পাশাপাশি ওয়ার্ড বয়/গার্লরা খুবই আন্তরিক ছিলেন। দেখেছি প্রতিটি রোগীর বেড গুছিয়ে দেওয়া, অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দেয়া, সিরিয়াস রোগীদের বিভিন্ন টেস্ট করাতে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।

আরেক রোগীর আত্মীয় রাজন ইসলাম জানান, দুই দিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে তার ভাইকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার কথা ভাবছিলেন। কিন্তু এখানে ভালো চিকিৎসা পাওয়ায় তিনি খুশি।

করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. মহিউদ্দিন খান মুন জানান, অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। সে অনুযায়ী নিয়মিতভাবেই চিকিৎসক নিয়োজিত রয়েছেন। এ জন্য প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট, যেমন অক্সিজেন ও ওষুধের মজুত বাড়ানো হয়েছে। হাসপাতালের ১৩টি অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর, ২৯টি হাই ফ্লো নেসাল ক্যানুলা, ২২টি ভেন্টিলেটর এবং ৮৪৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এর বাইরেও সংকট মোকাবিলায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ১ হাজার ৯২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়েছেন। ১৩ জন ইন্টার্ন চিকিৎসকের তিন মাসের বেতন বাবদ নগদ চার লাখ টাকাও দিয়েছেন। এ ছাড়া ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র একরামুল হক টিটু ও তার ভাই চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আমিনুল হক শামীম ৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছেন। তাছাড়াও ময়মনসিংহ ক্লাবসহ অনেক ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ওষুধ সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক জাকিউল ইসলাম জানান, করোনায় চার শতাধিক রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে প্রায় ১০০ চিকিৎসক ও ৩ শতাধিক নার্সসহ কর্মচারী নিয়োজিত। চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের আন্তরিকতায় সাধ্যমতো চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলুল কবীর বলেন, প্রতিদিনই করোনা রোগীর চাপ বাড়ছে। সে অনুযায়ী করোনা ইউনিটে শয্যাসংখ্যাও চাহিদা অনুযায়ী বৃদ্ধি করা হচ্ছে। হাসপাতালে বিনামূল্যে ওষুধ প্রদানসহ ১০ হাজার লিটারের কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। তিনি জানান, আইসিইউর সংখ্যা সীমিত হওয়ায় বেশির ভাগ রোগীকে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২ আগস্ট/পিএল)