সংকটে মানুষের পাশে না থেকে মিথ্যাচার করছে বিএনপি: হানিফ

প্রকাশ | ০২ আগস্ট ২০২১, ১৪:৫৬ | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২১, ১৪:৫৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

করোনা সংকটকালে মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে বিএনপি মিথ্যাচার করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।

সরকারের সমালোচনা করা ছাড়া করোনায় বিএনপির কোনো কাজ নেই মন্তব্য করে হানিফ বলেন, ব্যর্থতা, অযোগ্যতা আর দুর্নীতির কারণে বিএনপি দেশের উন্নয়ন করতে পারেনি। বিএনপি না পারলেও দেশের জন্য আমরা কাজ করছি, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন করছি। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি মানতে বিএনপির কষ্ট হয়।

সোমবার সকালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির উদ্যোগে মিরপুর গার্লস আইডিয়াল কলেজে শোকাবহ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে পরিস্থিতির শিকার মানুষদের কাছে উপহারসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হানিফ বলেন, করোনার এই সংকটে মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে বিএনপি জাতির সামনে মিথ্যাচার করছে, বিভ্রান্ত করছে। আমরা প্রত্যাশা করি বিএনপি নেতারা আমাদের সহায়তা না করলেও অন্তত নির্লজ্জ, বেহায়াপনা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না।

আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, বিএনপি এ যাবতকাল বলে আসছিল সরকারের কোনো উন্নয়ন নাই, অগ্রগতি নাই, আমরা বলেছিলাম উন্নয়ন হচ্ছে। আজকে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, ঢাকা মেট্রোরেল চালু হচ্ছে। পদ্মাসেতু, পায়রাবন্দর হচ্ছে। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন চার হাজার মেগাওয়াট থেকে ২৪ হাজার মেগাওয়াট হচ্ছে, কর্ণফুলী টানেল হচ্ছে, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে- এমন অজস্র উন্নয়নের প্রজেক্ট চলছে এবং শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এগুলো কোনোটাই বিএনপির চোখে পড়ে না। তারা কোনো উন্নয়নই চোখে দেখে না।

উপহারসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে আগামী সাত দিনে এক কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ দেশের অধিকাংশ জনগণের টিকা দেয়া হবে দ্রুত। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই যেন ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে পারেন সে লক্ষ্য নিয়ে তিনি কাজ করছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ১ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। সে অনুসারে সারাদেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখানেও বিএনপি মিথ্যাচার করছে। তারা বলে এক সপ্তাহে কী এক কোটি লোককে টিকা দেয়া যায়? এক সপ্তাহে এক কোটি লোককে টিকা দেয়া যাবে না কেন? আমাদের সে সক্ষমতা আছে। আমাদের টিকা মজুত আছে এবং টিকা দেয়ার মতো সে সক্ষমতা আছে। প্রত্যেকটা ইউনিয়নে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই ৫ হাজার করে টিকার আওতায় আনা হবে। সে হিসাবে আমাদের ১ কোটিরও বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনা যাবে।

হানিফ আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা বারবার দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করছেন এই করোনাভাইরাস রোগটা ভয়াবহ রোগ। এটা থেকে একমাত্র বাঁচার উপায় হলো সংক্রমণ রোধ করা। সরকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলার জন্য বারবার অনুরোধ করছে। আমরা এখনো বলছি লকডাউন করোনা সংক্রমণ রোধের একমাত্র উপায় নয়। করোনারোধ করতে হলে ভ্যাকসিন নিতে হবে, শরীরে এন্টিবডি তৈরি করতে হবে।

ঘরের বাইরে বের হলে মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, মাস্ক পরিধানের কোনো বিকল্প নেই। সবাইকে মাস্ক পড়তে হবে। হাত পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে করে হাতের মধ্য দিয়ে ভাইরাসটা শরীরে প্রবেশ না করে।

সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, করোনা থেকে বাঁচতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। দেশবাসীর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি প্রধানমন্ত্রী যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন সেগুলো সবাই মেনে চলুন। এ সংক্রমণ রোধ করে আমরা সবাই যাতে ভয়াবহ রোগ থেকে জাতিকে রক্ষা করতে পারি। নিজেরা বাঁচতে পারি, পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করতে পারি।

করোনা সংকটকালে আওয়ামী লীগের ত্রাণ কার্যক্রম কাজ চলমান থাকবে জানিয়ে দলটির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ একমাত্র দল যারা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বাংলাদেশের দুর্যোগে, বিপদে-আপদে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। যারা বিত্তবান আছেন আপনাদের অনুরোধ করবো আপনারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। এই ক্রান্তিকাল, কঠিন সময় করোনা মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি প্রত্যেকে বেসরকারিভাবেও যার যেটুকু সামর্থ্য আছে সেটুকু দিয়েই অসহায় মানুষের পাশে, নিম্নআয়ের মানুষকে যারা ঠিকমতো খেতে পারে না এমন মানুষের সাহায্যের হাত পারিয়ে দিন। মানবতা প্রকাশ করার এটাই সর্বোচ্চ সময়। মানবতা প্রকাশের চেয়ে এর চেয়ে ভাল কাজ আর হতে পারে না।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শোকাবহ বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন। এছাড়াও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার পরিবারের শহীদ সদস্য ও জাতীয় চার নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

প্রতিরক্ষা ও ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা আজম এমপি, উপদেষ্টা একেএম রহমতুল্লাহ এমপি, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, ওয়েস্ট হেলথ এন্ড এডুকেশন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন ও ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জি. সৈয়দ কুদরত উল্লাহ।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগসহ সভাপতি ও কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক। উপহার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলো ওয়েস্ট হেলথ এন্ড এডুকেশন ফাউন্ডেশন।

ঢাকাটাইমস/২আগস্ট/এমআর