সিআরবিতে হাসপাতাল নয়, গ্রিনজোন গড়ে তোলা হোক

যিকরু হাবিবীল ওয়াহেদ
 | প্রকাশিত : ০২ আগস্ট ২০২১, ১৮:৪৪

চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণে রেলওয়ে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে তীব্র সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ তাতে অংশ নিচ্ছে। তাদের উদ্বেগের কথা জানাচ্ছে। বিতর্কিত সিদ্ধান্ত থেকে দ্রুত সরে আসার আহ্বান সবার মুখে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম মারফত জানতে পারি, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সিআরবি এলাকায় বহুতল হাসপাতাল নির্মাণের জন্য বেসরকারি ইউনাইটেড গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেছে রেলওয়ে। এই উদ্যোগ চট্টগ্রামের মানুষকে চরমভাবে ব্যথিত, উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ করেছে। তাদের শঙ্কা, হাসপাতাল হলে অসুস্থ ব্যক্তিসহ নানা শ্রেণির মানুষের আনাগোনা হবে, বিভিন্ন ধরনের দোকান, ফার্মেসি, খাবারের হোটেল গড়ে উঠবে, যা এলাকার পরিবেশকে চরমভাবে হুমকির মুখে ফেলবে। আর তাতে সাধারণের স্বাস্থ্য, প্রাতর্ভ্রমণ ও বৈকালিক ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।

বাংলা নববর্ষ উদযাপন, ফাগুন উৎসব এই সিআরবিতে হয়। সেই চিরায়ত উদযাপনের সুযোগ হারাবে চট্টগ্রামবাসী। তরুণদের খেলা, আড্ডাসহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক ইভেন্ট আয়োজনের স্থান সংকোচন হওয়ার পাশাপাশি প্রবীণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকারও ক্ষুণ্ন হবে যদি সিআরবিতে হাসপাতাল গড়ে ওঠে।

এ ছাড়া একজন রোগীকে কেন্দ্র করে বহুজনের আগমন ঘটবে, অ্যাম্বুলেন্সসহ অতিরিক্ত গাড়ি চলাচলের কারণে এলাকাটির নির্জনতাও উবে যাবে।

সিআরবি, সাত রাস্তার মোড় ও টাইগার পাস ঘিরে থাকা পাহাড় ও উপত্যকায় গাছপালা মণ্ডিত যে এলাকাটি রয়েছে, তা চট্টগ্রামের ফুসফুস হিসেবে গণ্য করা হয়। সমুদ্রবর্তী নদীবেষ্টিত এ পাহাড়ি নগরীটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য যুগ যুগ ধরে দেশি-বিদেশি পর্যটক, ঐতিহাসিক ও রাজনীতিকদের মনোযোগ ও প্রশংসা কুড়িয়ে আসছে। এ আকর্ষণের অন্যতম উৎস নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আধার সিআরবি এলাকাটি।

কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, এলাকাটি ঐতিহাসিক কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৩০ সালের ইতিহাস-প্রসিদ্ধ চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহীরা অর্থসংগ্রহের জন্য অভিযান চালিয়েছিল সিআরবিতে। এ ছাড়া সিআরবি ভবনটি ছাত্র-শিক্ষকের শিক্ষা ও গবেষণার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

এসব বিবেচনা করেই সিআরবি এলাকাকে ইতিপূর্বে ‘ঐতিহ্য ভবন’ঘোষণা দিয়ে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।

কর্তৃপক্ষের মনে রাখা দরকার, অবকাঠামোগতভাবে দ্রুত বর্ধমান আমাদের চট্টগ্রাম নগরে রাজধানী ঢাকার মতো রমনা পার্ক নেই, নেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা চন্দ্রিমা উদ্যান বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মতো সবুজে ঘেরা কোনো বড় অঞ্চল। নগরের মধ্যে অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র এই একটি এলাকা- সিআরবি।

সব দিক বিবেচনা করে দ্রুত সবুজবিধ্বংসী সিদ্ধান্ত থেকে সংশ্নিষ্টদের সরে আসার আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের প্রাণ-প্রকৃতির স্বর্গভূমি সিআরবি রক্ষার পাশাপাশি হাসপাতাল করার প্রস্তাবিত জায়গাটি গ্রিনজোন হিসেবে গড়ে তোলার জোরালো দাবি রাখছি।

লেখক: সমাজকর্মী ও সংগঠক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :