নয়টি পরিবারের সামনে শুধুই অন্ধকার
মহামারী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চলমান লকডাউনে কর্মহীন হয়ে বিপাকে পড়েছে আখাউড়ার উপজেলার আজমপুরে আশ্রয় নেওয়া বেদে সম্প্রদায়ের নয়টি পরিবার। কাজে বের হতে না পারায় উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে, জমানো টাকা-পয়সা যা কিছু ছিল তাও শেষ। খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে দিন কাটছে পরিবারগুলোর অন্তত ৩০ জন মানুষের। কিন্তু সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই তাদের। এর মধ্যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ওষুধ কিনে খাওয়ারও সামর্থ নেই বেশিরভাগের। এই অবস্থায় খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি নগদ অর্থ সহায়তাও দরকার পরিবারগুলোর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের আজমপুর স্টেশনের পাশে রেলওয়ের একটি জায়গায় পলিথিন দিয়ে ঘেরা নয়টি তাঁবু। ছয় হাত দৈর্ঘ্য আর চার হাত প্রস্থ্যের এক একটি তাঁবুতে একেকটা পরিবারের সংসার।
কথা হয় শামীম খান নামে এক বেদের সঙ্গে। তিনি জানান, তাদের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলায়। ১০-১২ দিন আগে তারা আজমপুরে এসেছেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিন জনের সংসার। শিংগা লাগানো, ঝাড়ফুক, তাবিজ-কবজ বিক্রি, হারানো গয়না খোঁজা, সাপ ধরা ও সাপ খেলা দেখিয়ে যে আয় হয় সেই টাকা দিয়ে সংসার চলে তাদের। কিন্তু কঠোর লকডাউনে কোনো কাজকর্ম না থাকায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। জমানো কিছু টাকা ছিল, তাও শেষ। এখন খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। সামনের দিনগুলো কিভাবে চলবে জানেন না তিনি।
শামীম বলেন, ‘এখন আর সাপের খেলার তেমন চাহিদা নাই। আগে দৈনিক হাজার টাকা রোজি করা যেত। এখন ৫০০ টাকা রোজি করা কঠিন হয়ে গেছে। তারওপর আবার লকডাউন। বাপ দাদার পেশা, তাই ছাড়তেও পারি না। অন্য কোন কর্ম শিখি নাই। কি করে খাবো সেই চিন্তায় ঘুম আসে না।’
পিংকি নামে এক বেদেনি বলেন, কয়েক দিন আগে উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে কিছু চাল-ডাল, পেঁয়াজ পেয়েছি। এগুলো দিয়ে কয়েকদিন চলতে পারব। কিন্তু হাতে তো টাকা নাই। জরুরি কিছু জিনিসপত্র কেনা বা কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসা করানোর টাকাও নাই। সরকার যদি আমাদেরকে কিছু খাদ্য সামগ্রী আর সঙ্গে কিছু টাকা দেয় তাহলে খুবই উপকার হতো।’
জীবনের এই কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ২ ছেলের মা পিংকি বললেন, তিনি যে পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন ছেলেদের যেনো তার মুখোমুখি হতে না হয় সে জন্য তাদের অন্যকাজ শেখাবেন।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার বলেন, বেদে সম্প্রদায়কে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে পাওয়া কিছু খাদ্য সহায়তা করা হয়েছে। এছাড়া পৌর মেয়র এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানও তাদেরকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি তাদের খুব বেশি সমস্যা হবে না।
(ঢাকাটাইমস/২ আগস্ট/পিএল)