জয়পুরহাটে আরও ৬০০ পরিবার পেল বসুন্ধরার ত্রাণ

প্রকাশ | ০২ আগস্ট ২০২১, ১৯:১৫

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গাড়ির একটি গ্যারেজে কাজ করতেন আল আমিন। করোনায় দুই মাস ধরে কাজ হারিয়েছেন। বৃদ্ধ বাবা আর স্ত্রী নিয়েই তার সংসার। ছেলের উপার্জনে এতদিন হেসে-খেলেই চলছিল ছোট্ট পরিবার। কিন্তু করোনা এসে বাগড়া দেয় তার সুখী পরিবারেও। দেখা দেয় অভাব-অনটনের। বাবার চিকিৎসা আর সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে ওঠে তার জন্য। চক্ষুলজ্জায় মানবেতর জীবনের কথা কাউকে না বললেও তার খোঁজ করেছেন কালের কণ্ঠ শুভসংঘের সদস্যরা। আল আমিনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্যসামগ্রী।

সহায়তা পেয়ে আবেগতাড়িত হয়ে তিনি বলেন, 'অনেক দিন ধইরা কোন কামকাজ করবা পারছি না। বাজার করার টাকা পয়সা নাই। শরমে কারো কাছে হাত পাততে পারি না। আজকে আপনারা হামার খোঁজ নিলেন। এতগুলা খাবার দিলেন। খুব উপকার হইলো। আপনাদের জন্য দোয়া করি। সুস্থ্য থাকেন।'

পত্রিকার হকারি করেন আব্দুল জলিল। করোনা তার উপার্জনের পথেও রাশ টেনেছে। শুভসংঘের খাদ্যসামগ্রী পেয়ে তিনি বলেন, প্রাণ ভরে দোয়া করি। আল্লায় তাকে বেহেস্ত নসিব করবে। তার ভালো করবে।

আজ সোমবার জয়পুরহাট জেলার সদর উপজেলায় তাদের মতো ৬০০ কর্মহীন, পত্রিকা হকার, মটর শ্রমিক, দর্জি শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, ডেকোরেটর শ্রমিক ও অসহায় পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে কালের কণ্ঠ শুভসংঘ। এছাড়া সকলের মাঝে মাস্ক বিতরণ ও করোনা সুরক্ষায় সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে জয়পুরহাট জেলা ক্রীড়া সংস্থা মাঠে ৩০০ ও রামদেও বাজলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৩০০ অসহায় পরিবারকে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় এই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে শুভসংঘের সদস্যরা।

খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত হয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেন বলেন, এই প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যানকে। তিনি সারা বাংলাদেশে প্রায় দুই লাখ অসহায় পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে। আজ আমাদের জয়পুরহাট জেলায় দুই হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কালের কণ্ঠ শুভসংঘ সদস্যদেরও ধন্যবাদ জানাতে চাই, তারা এই মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। তাদের এই কার্যক্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করি। তাদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি। বর্তমানে মহামারি পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হলে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। কারণ আমাদের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাসটি একজন থেকে অন্যজনের কাছে সংক্রমিত হয়। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। কেউ ঘর থেকে বের হবেন না।

সহকারী পুলিশ সুপার মাসুম আহাম্মেদ ভূইয়া বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপ দেশব্যাপী যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে, এরজন্য গ্রুপের চেয়ারম্যানকে আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। পাশাপাশি কালের কণ্ঠ শুভসংঘকেও ধন্যবাদ জানাই এই মানবিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য। বিপদের সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ প্রমাণ করেছে তারা সাধারণ মানুষের বন্ধু।

ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে আরও উপস্থিত ছিলেন জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, জয়পুরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি এড. নিপেন্দ্রনাথ মন্ডল পিপি, সাধারণ সম্পাদক খ. ক. মো. আব্দুর রহমান রনি, স্থানীয় সমাজসেবক নন্দলাল পার্শী, জেলা ক্রিড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোরশেদুল আলম লেবু, শুভসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরীফ মাহ্দী আশরাফ জীবন, জয়পুরহাট জেলার সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব, উত্তরা ইউনিভার্সিটির সাবেক সভাপতি আলমগীর হোসেন রনি, জেলা রোবার প্রতিনিধি সালেহর রহমান সজিবসহ জয়পুরহাট জেলার শুভসংঘের সেচ্ছাসেবী নূর-ই-আলম হোসেন, মোস্তাকিম বিল্লাহ, তরিকুল ইসলাম, ফিরোজ হোসেন, আবু তালহা সাঈদ, সানজিদ আহমেদ, সাইদুল ইসলাম, রাকিব হোসেব, কাউসার আহমেদ, ইশতিয়াক আহমেদ, মো. নাছিম, শিমুল ও স্কাউটের অন্যান্য সদস্যরা।

(ঢাকাটাইমস/০২আগস্ট/এসকেএস/জেবি)