অপারেটরদের তদারকে টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম কিনছে সরকার

প্রকাশ | ০৩ আগস্ট ২০২১, ১০:৪৮ | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২১, ১০:৫০

তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

কানাডা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান টিকেসি টেলিকমের সাথে বিটিআরসির টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম ক্রয় সংক্রান্ত একটি চুক্তি সোমবার সম্পাদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটিকে চুক্তি স্বাক্ষরের ১৮০ দিনের মধ্যে টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। ঢাকায় বিটিআরসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার  প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, টেলিকম মনিটরিং চুক্তির মধ্যদিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অগ্রযাত্রায় আরও একটি মাইলফলক স্থাপিত হলো। এই টেলিকম  মনিটরিং সিস্টেম টেলিকম সেবার মনিটরিং ও মানোন্নয়নে অনন্য সাধারণ অবদান রাখবে। 

তিনি বলেন, মোবাইল অপারেটদের সেবার গুণগত মান নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আছে। গুণগত মান রক্ষার কথা ছিল, আমরা সেগুলো মনিটরিং করে আসছি। কিন্তু প্রযুক্তির সহায়তা ছাড়া এই কাজটি সম্পাদন করা অসম্ভব। সেজন্য আমরা এক্ষেত্রেও প্রযুক্তিকে অবলম্বন করছি।

বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধন ও ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার চালুর মাধ্যমে পৃথিবীতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, নতুন টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সিস্টেম  চালুর ফলে টেলিকম খাতের দুর্বলতা খুজে বের করতে সম্ভব হবো। কলড্রপ, ডাটা নেটওয়ার্ক না পাওয়া, ডাটার মেয়াদ  ব্যবহারকারীদের কমন যেসব সমস্যা আছে সেগুলো দ্রুত সমাধানের জন্যও মন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

মোস্তাফা জব্বার গ্রাহক সাধারণের স্বার্থ বিবেচনা করে ডাটা প্যাকেজের মেয়াদ অতি সংক্ষিপ্তভাবে নির্দিষ্ট না করার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতি  নির্দেশনা দেন। 

একই সাথে তিনি মেয়াদের পরের উদ্বৃত্ত ডাটা ব্যবহারকারীকে পরে ব্যবহার করার সুযোগ দিতেও নির্দেশ দেন। টিএমএস প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সারাবিশ্বে এটি হবে একটি প্রশংসিত ও দৃষ্টান্ত স্থাপনকারি উদ্যোগ বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, সিস্টেমটি বাস্তবায়িত হলে মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং রিপোর্টিং প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় হবে। একইসাথে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য বাস্তব সময়ে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। এতে ভয়েস ও ডাটা ট্রাফিক, নেটওয়ার্ক ব্যবহার এবং মান সম্পর্কিত তথ্য সর্বোপরি বিটিআরসি’র প্রাপ্য রাজস্ব সম্পর্কে নিয়মিত ও নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে। ফলে বিটিআরসি’র নীতিনির্ধারণী ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হবে এবং সরকারের নিকট প্রতিবেদন পেশ ব্যবস্থা আরও দক্ষ এবং দ্রুত হবে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বে  ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাংলাদেশকে পাল্টে দিয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে ঘোষিত  ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বিশ্বে আজ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। তিনি ২০৭১ এবং ২১০০ সালের বাংলাদেশ কী হবে সেই ভিশন নিয়েও এগুচ্ছেন।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান  শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন, বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ এবং টিকেসি টেলিকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা  সামির তালহামি  বক্তৃতা করেন।।

বিটিআরসির পক্ষে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের পরিচালক মো. গোলাম রাজ্জাক ও টিকেসি টেলিকমের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামির তালহামি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।  ৭৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম প্রকল্পটির প্রাক্করিত ব্যয় ধরা হয়েছে।

সভায় জানানো হয়,এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গ্রামাঞ্চল, দ্বীপ, হাওড়-বাওড়, উপকূলীয় অঞ্চল ও দূর্গম এলাকার টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক এর প্রকৃত অবস্থা তাৎক্ষনিক যাচাই করা সম্ভব হবে। অপারেটরদের নেটওয়ার্কের লাইভ মনিটরিং এর মাধ্যমে নেটওয়ার্কের সেবার মান আরো সুচারুভাবে যাচাই করা যাবে এবং গ্রাহকসেবার প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে। 

অপারেটররা বাস্তবে যেসকল ট্যারিফ বাস্তবায়ন করছে এবং এসকল ট্যারিফ প্যাকেজ বিটিআরসি কর্তৃক অনুমোদিত কি না অথবা গ্রাহকেরা অন্যায্যভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কি না তা যাচাই করা সম্ভব হবে এবং এ বিষয়ক অভিযোগসমুহের নিষ্পত্তি কার্যকরভাবে করা সম্ভব হবে। প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্থ হলে তা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। সরকারের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নানাবিধ অবকাঠামোগত ব্যবস্থা ও সেবার সঠিক মান উন্নয়নে সিস্টেমটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। 

(ঢাকাটাইমস/৩আগস্ট/এজেড)