এক ঘণ্টার ক্লাসের পেছনে কত ঘণ্টার প্রস্তুতি থাকে সেটা কতজন জানে?

রেজাউল করিম
 | প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট ২০২১, ১৫:০৪

অনেকেরই ধারণা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা একটা ফাঁকিবাজি চাকরি। দিনে দু-একটা ক্লাস। আর এই করোনার সময়ে তো একদম বসে বসে বেতন খাচ্ছে আর পরের মাসের ১ তারিখের জন্য অপেক্ষা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার কাজকে মাপতে-জানতেও ন্যূনতম কিছু জ্ঞানবুদ্ধি লাগে। ক্রিস্টালের মধ্যে থাকা দুটো এটমের দূরত্ব মাপতে আমরা যেই স্কেল ব্যবহার করব পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব মাপতে নিশ্চয়ই একই স্কেল ব্যবহার করব না। এইটা বোঝারও ক্ষমতা থাকতে হয়। শিক্ষকতা পেশাটাকে বুঝতে-জানতে হয়।

বাইরের চোখে শিক্ষকতা পেশাকে যা দেখা যায় সেটাই সব না। যখন মানুষ ভাবে আমি অলস বসে আছি, কিছু করছি না। তখনই আসলে আমি সবচেয়ে বেশি কাজ করি। সেই সময়টাই হলো সৃষ্টিশীল কাজের ব্রিডিং গ্রাউন্ড। আমরা যদি এই আপাত অলস সময় না পাই আইডিয়া আসবে কীভাবে? যখন কাজের মধ্যে থাকি তখন কি কেউ সৃষ্টিশীল আইডিয়া পায়? আমি যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটি, টয়লেট করি, শাওয়ারের নিচে থাকি, এমনি আনমনে বসে থাকি সেই সময়গুলোতেই আমি আমার সকল গবেষণার আইডিয়াগুলো পেয়েছি।

যারা শিক্ষক-গবেষক তারা রাস্তাঘাট দিয়ে চলার সময় অন্যমনস্ক হয়ে যায় কারণ তারা ভাবে। এই ভাবনাগুলোই জরুরি। এমন তো হয়নি যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ বলে খুশিতে গদগদ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য দাবি জানিয়েছি। এই দাবির পক্ষে অনলাইনে সেমিনার করেছি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছি, বিভিন্ন পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে খোলার দাবি জানিয়েছি।

অনেকেই ১ ঘণ্টার একটি ক্লাসকে ১ ঘণ্টার কাজ মনে করে। ১ ঘণ্টার ক্লাসের পেছনে কত ঘণ্টার প্রস্তুতি থাকে সেটা কতজন জানে? আর অনলাইন ক্লাস প্রস্তুত করতে তো সময় আরো বেশি লাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা কেবল শ্রেণিকক্ষে পাঠদান নয়। গত ১৫ মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় বন্ধ ছিল। আসলে কি তাই? হ্যাঁ অধিকাংশ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্যাললি যেতে হয়নি। কিন্তু নিয়মিত ক্লাস নিয়েছি। তবে ল্যাব ক্লাস নেওয়া হয়নি কারণ সেটা অনলাইনে নেওয়া যায় না। আমি ইন কোর্স পরীক্ষা নিয়েছি। ফাইনাল পরীক্ষা দুই দুইবার তারিখ দিয়েছি, সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে নিতে পারিনি। এই ১৫ মাসেই আমি সবচেয়ে বেশি গবেষণা করতে পেরেছি। অনেকগুলো আর্টিকেল লিখেছি, ১টি বইয়ের চ্যাপ্টার লিখেছি, ৪ জন মাস্টার্সের ছাত্রের থিসিস supervise করছি। এইসব সকলের চোখে পড়বে না। সব কিছুই কি দেখিয়ে দেখিয়ে করতে হবে?

এই জন্যই যে শিক্ষক বেশি গবেষণা করে তার শ্রেণিকক্ষের লোড কমিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষে গবেষণা কেন সম্ভব না? কারণ অধিকাংশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ই শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সংখ্যক ক্লাস দিয়ে ডুবিয়ে রাখে। ক্লাস না থাকলে তাদের এডমিনিস্ট্রেটিভ কাজ দিয়ে রাখে। শিক্ষকরা যাতে অলস বসে না থাকে সেজন্য বছরে ৩টি সেমিস্টার চালু করেছে। আমি বিশ্বাস করি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যদি কম ক্লাস দিয়ে গবেষণায় মনোযোগ দিতে বলত তাহলে তারা গবেষণা করতে পারতো।

(কামরুল হাসান মামুন স্যারের পোস্ট থেকে নেওয়া)

ঢাকাটাইমস/৩আগস্ট/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :