ফুসফুসে ক্যানসার হলে বুঝবেন যেভাবে

প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০২১, ০৯:৫০

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

অতিমারি করোনার জেরে বিপর্যস্ত সারাবিশ্বের জনজীবন। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, করোনা আতঙ্কের ফলে বহু মানুষের মধ্যে তাদের অন্যান্য অসুখ বা অসুখের লক্ষণ সম্পর্কে বেশ খানিকটা অসচেতনতাভাব দেখা দিয়েছে। এমন অনেক অসুখ রয়েছে যার লক্ষণগুলো তেমনভাবে আমাদের মনে প্রভাব ফেলে না। এর ফলে গোপনেই আমাদের শরীরে বাড়তে থাকে সেই সব অসুখ। যেমন ফুসফুসের ক্যানসার। ফুসফুস ক্যানসারের ৮৫% এর জন্য দায়ী দীর্ঘমেয়াদি তামাক সেবন। বাকি ১০-১৫% যারা কখনো ধূমপান করেননি তারাও আক্রান্ত হন। জেনেটিক ফ্যাক্টর, বায়ু দূষণ ইত্যাদি ফুসফুস ক্যানসারের অন্যতম প্রভাবক।

 

ফুসফুস ক্যানসারে ফুসফুসের টিস্যুগুলোতে অনিয়ন্ত্রিত কোষবৃদ্ধি ঘটে। এই বৃদ্ধির ফলে মেটাস্ট্যাসিস, প্রতিবেশী টিস্যু আক্রমণ এবং ফুসফুসের বাইরে সংক্রমণ ঘটতে পারে। প্রাথমিক ফুসুফুসের ক্যানসার অধিকাংশই ফুসফুসের কার্সিনোমা, যা ফুসফুসের এপিথেলিয়াল কোষগুলিতে ধরা পড়ে। ফুসফুসের ক্যানসারের কারণে প্রতি বছর বিশ্বে ১৩ লাখ লোক মারা যান। ফুসফুসের ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ শ্বাস নিতে সমস্যা, রক্তসহ কাশি এবং ওজন হ্রাস।

 

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বহু মানুষই ফুসফুসের ক্যানসার প্রথমদিকে বুঝতেই পারেন না। আমাদের অবশ্যই জেনে নেওয়া দরকার এই মারণ রোগের প্রথম লক্ষণগুলো কী কী-

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ফুসফুসে ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রথমেই যে লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তার মধ্যে অবশ্যই থাকছে কাশি। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ঠান্ডা লাগার কারণে কাশি হলে তা সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যে সেরে যাওয়ার কথা। কিন্তু এর থেকেও বেশি সময় ধরে কফ বা নাগাড়ে কাশির সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে তা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। এছাড়াও তারা জানাচ্ছেন, কাশির সময় কফের সঙ্গে যদি রক্তের ভাব দেখা দেয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন।

 

ফুসফুসে ক্যানসারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ সঠিকভাবে শ্বাস নিতে না পারা এবং শ্বাস নেওয়ার সময়ে যদি বাঁশির মতো শব্দ হয়, তাহলে তা চিন্তার অবশ্যই।

 

কাশি কিংবা শ্বাস নেওয়ার সমস্যার পাশাপাশি যদি কারও মধ্যে বুকে, কাঁধে কিংবা পিঠে ব্যথা অনুভব হয়, তাহলে তাকে হালকাভাবে নেওয়া মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। ফুসফুসে ক্যানসারের অন্যতম লক্ষণই হল বুকে ব্যথা। চিকিৎসকরা পাশাপাশি এমনও জানাচ্ছেন যে, কখনও কখনও ফুসফুসে ক্যানসার দেখা দিলে প্রথমাবস্থায় মাথায় যন্ত্রণাও দেখা দিতে পারে।

 

আপনার গলার স্বর কি বদলে গিয়েছে? কথা বলার সময় সামনের মানুষ কি এমনটা লক্ষ্য করে আপনাকে জানাচ্ছেন? তাহলে একদম ফেলে না রেখে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

 

হঠাৎ যদি দেখেন যে আপনার ওজন অনেকটা কমে গিয়েছে, তাহলে একেবারেই আনন্দ পাবেন না। শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমা জরুরি। কিন্তু আচমকা যদি ওজন কমে যায়, তাহলে তা চিন্তারও বটে। আচমকা ওজন কমে যাওয়া ফুসফুসে ক্যানসারেরও লক্ষণ বটে। তাই এই ধরনের কোনও লক্ষণ দেখলে একেবারে অবহেলা না করে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

 

বুকের এক্স-রে পরীক্ষা এবং কম্পিউটার টমোগ্রাফির মাধ্যমে ফুসফুসের ক্যানসার নির্ণয় করা হয়। পরবর্তীতে একটি বায়োপসির মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা সম্ভব। সার্জারি, কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপির মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা হয়। ৫ বছর চিকিৎসার পর রোগীর বেঁচে যাওয়ার হার ১৪% মাত্র। ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্ত করার সময় রোগ অনেক দূর ছড়িয়ে পড়লে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমে যায়। ওষুধ খেয়ে এই মারণ রোগের প্রতিকার না করে প্রাকৃতিক উপায়ও এই মারণ রোগ রোধ করা সম্ভব।

 

ফুসফুস ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম খাবার যেমন আপেল, রসুন, ব্রকোলি, লাল বেলপেপার, পালং শাক বেশি পরিমাণে খাওয়া দরকার। ধূমপান ও মদ্যপান না করা। অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাদ্য কম খাওয়া। নিয়মিত ব্যায়াম করা। পরিমাণমতো শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে ফুসফুসের ক্যানসার থেকে দূরে থাকা যায়।

 

(ঢাকাটাইমস/৪আগস্ট/আরজেড/এজেড)