নাজমার অবুঝ সন্তানদের কী বলবেন মমতাজ?

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২১, ১৯:৩১ | প্রকাশিত : ০৪ আগস্ট ২০২১, ১৪:৩৪

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সেজান সুজের কারখানায় পুড়ে ভস্ম হয়ে যাওয়া নাজমা খাতুনের মরদেহ নিতে ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন তার ভাই হাবিব ও বোন মমতাজ। বাসায় রেখে এসেছেন আদরের বোনের ১৩ বছরের ছেলে নাজমুল ও ৬ বছরের মেয়ে পাখিকে।

সিআইডি পুলিশের এক কর্মকর্তার ফোন পেয়ে ভুলতা থেকে বোনের পুড়ে যাওয়া দেহের অংশ বিশেষ নিতে এসেছেন তারা। এতদিন পর বোনকে অন্তত দাফন করতে পারবেন সেই সান্ত্বনা নিয়ে যখন ঢাকা মেডিকেলের সামনে অপেক্ষা করছেন তখন নতুন দুশ্চিন্তা তাদের মাথায়।

কারণ নাজমার ছেলে-মেয়েকে বাসায় গিয়ে কী জবাব দেবেন তারা? ওরা জানে তার মা ছোট খালার বাসায় বেড়াতে গেছেন। বুধবার সকালে যখন ঢাকা মেডিকেলের উদ্দেশ্যে দুই ভাই-বোন রওনা হন তখনও নাজমার সন্তানরা জানতে চেয়েছে, ‌মামা তোমরা কোথায় যাও? আমার মা আসবে না?

ঢাকাটাইমসকে এভাবেই কথাগুলো জানিয়ে নাজমার ভাই বলেন, জানেন আজকে ওদের বলে আসছি, তোদের মাকে আনতে যাইতেছি। ছোট খালার বাড়ি আছে সেখান থেকে। কথাগুলো বলতেই কণ্ঠ ধরে আসে তার। বলেন, পোড়া দেহটা নিয়ে গিয়ে ওদের কী বলবো?

নাজমার ভাই জানান, তাদের বাড়ি নোয়াখালী হলেও খুব একটা যাওয়া-আসা নেই। গাউছিয়া এলাকায় তারা থাকেন। দেড় বছর ধরে তার বোন সেজান জুসের কারখানায় কাজ করতেন। গত ৮ জুলাই অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা যান তার বোন। ওই অগ্নিকাণ্ডে ৫১ জনের মৃত্যু হয়।

ওই ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা করেন ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজিম উদ্দিন। পরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি।

ওই মামলায় পুলিশ সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হাসেম, হাসীব বিন হাসেম, তারেক ইব্রাহীম, তাওসীব ইব্রাহীম, তানজীম ইব্রাহীম, সিইও শাহেন শান আজাদ, উপ-মহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে।

তাদের চার দিন করে রিমান্ডে নেয়া হয়। এরইমধ্যে ১৪ জুলাই চেয়ারম্যান হাসেমের দুই ছেলে তাওসীব ইব্রাহীম ও তানজীম ইব্রাহীম আদালত থেকে জামিন পান। আর বাকি ৬ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফুডস ফ্যাক্টরির ওই অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৮ জনের মধ্যে ৪৫ জনের মরদেহ শনাক্ত করেছে সিআইডি। এদের মধ্যে ২৪ জনের মরদেহ আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গ থেকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জীবন কান্তি সরকার।

তিনি বলেন, জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৮ জনের ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করেছিল সিআইডি। এদের মধ্যে ৪৫ জনের ডিএনএ তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলেছে। আজ ২৪ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোও হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে নাজমার মতো অন্য নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরাও মর্গে এসেছেন। সবাই হারানো স্বজনের কথা স্মরণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

নাজমার ভাই বলেন, যে চলে গেছে তাকে তো আর পাবো না। কিন্তু আমার বোনের মতো আরো অনেকের ছোট বাচ্চা আছে ওরা কেমনে বাঁচবে।

তিনি জানান, বোনের বাচ্চারা জানে ওদের মা কোথাও বেড়াতে গেছে। আজকে আসার সময় খালাকে (নাজমার বড় বোন) বলেছে, ওদের মাকে নিয়ে আসতেই হবে।

যে ২৪ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে-

মো. আয়াত হোসেন, মো. নাঈম ইসলাম, নুসরাত জাহান টুকটুকি, হিমা আক্তার, মোসা. সাগরিকা শায়লা, খাদেজা আক্তার, মোহাম্মদ আলী, তাকিয়া আক্তার, মোসা. শাহানা আক্তার, মোসা. মিতু আক্তার, জাহানারা, মোসা.ফারজানা, মোসা. ফাতেমা আক্তার, মোসা. নাজমা খাতুন, ইসরাত জাহান তুলি, মোসা. নাজমা বেগম, রাশেদ, মো. রাকিব হোসেন, ফিরোজা, মো. তারেক জিয়া, মো. রিপন মিয়া, মোসা. শাহানা আক্তার, মো. মুন্না ও রিয়া আক্তার।

(ঢাকাটাইমস/৪আগস্ট/বিইউ/কেআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :