সাইবার পুলিশ বগুড়ার যত সাফল্য

প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০২১, ২০:১৪

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

বগুড়ার শেরপুরে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীর সঙ্গে একই এলাকার কলেজছাত্র সুমনের (ছদ্মনাম) প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কের গভীরতার কারণে ভিডিও কলের মাধ্যমে তারা একে অপরের শরীর দেখা এবং নিজেদের নগ্ন ছবি দেয়া নেয়া করতো। কিন্তু এক সময় পড়াশোনার জন্য সুমনকে ভারতে যেতে হয়। এরপর তাদের মাঝে যোগাযোগ অনেকটাই বন্ধ যায়।

দীর্ঘদিন পর সুমন বাড়ি ফিরে জানতে পারে তার প্রেমিকা অন্য কারো সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে সুমন তার মোবাইলে সংরক্ষণ করা ওই ছাত্রীর নগ্ন শরীরের ছবি তার বন্ধুদের মোবাইলে দেয়। পরে মুহূর্তের মধ্যে এলাকায় ঘটনাটি জানাজানি হয়। এতে মেয়েটি অপমানে এবং লজ্জায় আত্মহত্যার জন্য বিষপান করে।

বিষপানের বিষয়টি জানতে পেরে তার পরিবার হাসপাতালে নিয়ে গেলে সে রক্ষা পায়। এরপর বিষয়টি সাইবার পুলিশের নজরে এলে অভিযুক্ত প্রেমিক এবং যাদের মোবাইলে নগ্ন ছবি দেয়া হয়েছিল তাদের প্রত্যেককে আটক করা হয়। কিন্তু সামাজিকভাবে আরও হেয় হওয়ার ভয় এবং মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ঘটনার শিকার ছাত্রীর পরিবার মামলা করেনি। এই পরিস্থিতিতে মেয়ের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রত্যেককে তাদের অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেয় সাইবার পুলিশ বগুড়া।

এদিকে বগুড়ার চকসূত্রাপুর এলাকার সুস্মিতা হক (ছদ্মনাম) নামের এক কলেজছাত্রীকে গভীর রাতে মোবাইল করে কু-প্রস্তাব এবং অশ্লীল ভাষায় ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে উত্যক্ত করা হতো অপরিচিত নাম্বার থেকে। এক মাস যাবৎ তাকে এভাবে অপরিচিত নাম্বার থেকে কুপ্রস্তাব এবং অশ্লীল ক্ষুদে বার্তা দেয়া হয়। এ কারণে সুস্মিতা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করে।

কিন্তু তার এক বান্ধবী তাকে নিয়ে ২০১৯ সালের ০৮ মার্চ সদর থানায় এ বিষয়ে জিডি করেন। এরপর সাইবার পুলিশ বগুড়া টিম মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতার করে। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সুস্মিতা।

 

সাইবার অপরাধের শিকারদের সহায়তা এবং অপরাধ দমনে এভাবেই কাজ করে যাচ্ছে সাইবার পুলিশ বগুড়া। এ কারণে সাইবার অপরাধীদের শিকার ব্যক্তিদের কাছে আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে জেলা পুলিশের এই ইউনিটটি।

এর আগে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁঞার উদ্যোগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বগুড়ায় পরীক্ষামূলক সাইবার পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়। পরীক্ষামূলক ভালো সাড়া পাওয়ায় ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি রাজশাহী রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেন বগুড়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ‘সাইবার পুলিশ বগুড়া’ ইউনিটের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

এরপর থেকে বগুড়াসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার সাইবার অপরাধ দমন এবং অপরাধীদের ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে ‘সাইবার পুলিশ বগুড়া’। কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ২২০টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছে ইউনিটটি। এছাড়া ইন্টারনেটে রাষ্ট্রবিরোধী, সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক মন্তব্য, জঙ্গি তৎপরতা এবং গুজব সৃষ্টিকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন সাইবার পুলিশের কর্মকর্তারা।

সাইবার পুলিশ বগুড়া ইউনিট থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত সাইবার পুলিশে যে অভিযোগগুলো এসেছে এর মধ্যে অধিকাংশ অভিযোগই ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জার অ্যাপ কেন্দ্রিক। প্রেম-পরকীয়া এবং নগ্নতাকে পুঁজি করে এই অপরাধগুলো ঘটছিল।

নিষ্পত্তি হওয়া ২২০টি অভিযোগের মধ্যে মামলা হয়েছে-৩৫টির। বাকি ১৮৫টির অভিযোগকারীরা মামলা না করায় বিকল্পভাবে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এই ১৮৫টি অভিযোগের অধিকাংশেরেই ভুক্তভোগী স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী, গৃহবধূ রয়েছেন।

যেগুলোর মামলা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক, ক্রিপ্টোকারেন্সি, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসভার নামে অপপ্রচার, পদ্মা সেতু নিয়ে গুজব ও রাষ্ট্র বিরোধী প্রচারনা, প্রতারণা মূলক অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, কলেজ ছাত্রীর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ইউটিউবে ছবি ও ভিডিও প্রকাশ, পুলিশ বাহিনীকে গালিগালাজ করে ফেসবুকে লাইভ, সেনাবাহিনীর নামে ফেসবুক আইডি খুলে ব্যবহার, ব্যাংক লোন দেয়ার নামে প্রতারণা, মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি।

বগুড়া পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁঞা জানান, প্রতারণা বা ফাঁদে পড়ে যারা সাইবার পুলিশের কাছে সহায়তার জন্য আসে তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়। যদি কেউ না চায় তাদের পরিবারকেও জানানো হয়না। আমাদের চেষ্টা থাকে তারা পরিবারিক এবং সামাজিক অবস্থান ঠিক থাকে। এটি সাইবার পুলিশ বগুড়ার গুরুত্বের সঙ্গেই করছে। এছাড়া ফেসবুকে গুজব রটানো, রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার ও জঙ্গী তৎপরতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সব সময় তৎপর রয়েছে এই ইউনিট।

(ঢাকাটাইমস/৪আগস্ট/কেএম)