পিয়াসা-মৌদের ব্যবহার করে মিশুর বিলাসী গাড়ির বহর

প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০২১, ২০:৪১ | আপডেট: ০৪ আগস্ট ২০২১, ২৩:৪১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সম্প্রতি মাদকসহ আটক মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মৌসহ অর্ধশতাধিক মডেলকে অনৈতিক ও প্রতারণার কাজে ব্যবহার করতেন শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান। তাদের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। কিনেছেন নামি-দামি ব্রান্ডের বিলাসী সব গাড়ি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র‌্যাব জানায়, গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে বসানো হতো মাদকের আসর। আর এই পার্টিতে অংশ নেয়া অভিজাত শ্রেণির লোকদের সঙ্গে অনৈতিক কর্মের ছবি ও ভিডিও তুলে হাতিয়ে নেয়া হতো বিপুল পরিমাণ অর্থ। এসব কথিত মডেল ও টিভি কর্মীকে টাকার বিনিময়ে ব্যবহার করতেন শরিফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান।

বুধবার বিকাল পৌনে ছয়টায় সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকার গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানা যায়। র‌্যাব এ বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর অভিযানে মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান (৩১) ও সহযোগী মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসান (৩৯) কে আটক করা হয়।

এসময় উদ্ধার করা হয় একটি আগ্নেয়াস্ত্র, ছয় রাউন্ড গোলাবারুদ, ১৩ হাজার ৩০০ পিস ইয়াবা, একটি বিলাসবহুল ফেরারি মডেলের গাড়ি, শিশার সরঞ্জামাদি, দুইটি ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও এটিএম কার্ড, পাসপোর্ট এবং ভারতীয় জালমুদ্রা ৪৯ হাজার ৫০০ রুপি।

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, আটকরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। এই চক্রের সদস্য ১০ থেকে ১২ জন। তারা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকা বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা করে থাকেন। পার্টিতে তারা অংশগ্রহণকারীদের নিকট হতে বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকে। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য।

প্রতিটি পার্টিতে ১৫-২০ জন অংশগ্রহণ করতেন। এছাড়াও তারা বিদেশেও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করতেন। একইভাবে উচ্চবিত্তের প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরনের পার্টি আয়োজন করা হতো। তারা ক্লায়েন্টদের গোপন ছবি ধারণ করে অপব্যবহার করতেন।

 

পার্টি আয়োজনের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের চাহিদা/পছন্দের গুরুত্ব দিয়ে পার্টি আয়োজন করা হতো। এই অবৈধ আয় হতে অর্থ নামে-বেনামে গাড়ির ব্যবসা, আমদানি ও গরুর ফার্মের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন মিশু হাসান ও জিসান। এই ব্যবসায় তাদের গ্রুপের সদস্যদের অবৈধ আয়েরও বিনিয়োগ রয়েছে।

 

এসব ব্যবসায় অবৈধ অর্থের যোগানদাতাদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছে। আটকদের ব্যবসায়িক কাঠামোতে অস্বচ্ছতা রয়েছে বলেও দাবি এ র‌্যাব কর্মকর্তার।

 

আটক শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান বাংলাদেশে নামিদামি ব্রান্ডের বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবসা করে থাকেন। তিনি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে অনিয়ম ও ছলচাতুরির আশ্রয় নিতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। তিনি নিজেও দামি ব্রান্ডের গাড়ি ব্যবহার করতেন। তার ব্যক্তিগত দুটি রেঞ্জ রোভার, অ্যাকুয়া, ভক্স ওয়াগন ও ফেরারিসহ পাঁচটি গাড়ি রয়েছে। তিনি অত্যন্ত সুকৌশলে গাড়ির ট্যাক্স জালিয়াতি করেছেন বলে প্রমাণ মিলেছে।

 

আটক জিসানের এলাকায় একটি গরুর ফার্ম রয়েছে। যেখানে অননুমোদিত ব্রাহামা গরু লালন পালন করা হয়। আটক শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান ইতিপূর্বে বিভিন্ন মামলায় তিনবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার নামে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তার সঙ্গে বেশ কয়েকজন চিহ্নিত অপরাধীদের যোগাযোগ রয়েছে।

 

‘উচ্চবিত্ত শ্রেণির লোকদের টার্গেট করে আসর বসানো হতো। এই চক্রের ক্লাইয়েন্টের তালিকায় পিয়াসা-মৌ’সহ দেশি-বিদেশি ৫০ ক্লায়েন্টের নাম পেয়েছি। যাদেরকে বিদেশেও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করে পাঠানো হতো। একইভাবে উচ্চবিত্তের প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরনের পার্টি আয়োজন করে পিয়াসা-মৌদের মতো কথিত মডেলদের পাঠানো হতো।

 

আটকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে, মাদক আইনে, ভারতীয় জালমুদ্রার রাখা ও অননুমোদিত গাড়ি আমদানি ও ব্যবহারে বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ আলাদা আলাদা মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

 

ঢাকাটাইমস/০৪আগস্ট/এসএস/ইএস