রোগীর স্বজনের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মামলা প্রত্যাহার দাবি

প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০২১, ১৯:২৪

গাইবান্ধা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ তোলার পর হাসপাতালে ভাঙচুরের অভিযোগ এনে রোগীর স্বজনের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।

বৃহস্পতিবার দুপুরে গাইবান্ধা জেলা শহরের আসাদুজ্জামান মার্কেটের সামনে বোয়ালী ইউনিয়নবাসীর ব্যানারে এই কর্মসূচি হয়। মানববন্ধনে অংশ নেয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী ছাড়াও শত শত এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করে।

জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহম্মেদ রনজু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ আকন্দ, ‍জেলা জাসদ নেতা নূর মোহাম্মদ বাবু, রোগী জাহেদা বেগমের পুত্রবধূ রিনা আক্তার প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গত ১৮ জুন দুপুরে সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের পশ্চিম বাটিকামারী গ্রামের আলতাফ হোসেনের অসুস্থ স্ত্রী জাহেদা বেগমকে জেলা হাসপাতালে নেয়া হয়। সে সময় হাসপাতালের ল্যাব বন্ধ থাকায় বাইর থেকে রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। রক্ত পরীক্ষা করার পর বিকালে রিপোর্টসহ রোগীকে আবার হাসপাতালে আনা হয়। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তারা অভিযোগ করে বলেন, দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত জাহেদা বেগমকে কোনো ধরনের চিকিৎসা সেবা দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেষমেষ বিনা চিকিৎসা ও ডাক্তারের অবহেলার কারণে মারা যান জাহেদা বেগম। পরে রোগীর ছেলে জাহিদুল ইসলাম জাহিদসহ তাদের স্বজনরা বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ তোলায় তাদের উপর হামলা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় রোগীর স্বজন বোয়ালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জাহিদের নাম উল্লেখসহ আট-নয়জনের বিরুদ্ধে পরদিন গাইবান্ধা সদর থানায় উল্টো হাসপাতালে ভাঙচুর ও চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগে মামলা করে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হারুন অর রশিদ। কিন্তু রোগীর স্বজনদের পক্ষ থেকে সদর থানায় এজাহার দেয়া হলেও মামলা নেয়নি পুলিশ।

বক্তারা বলেন, অবিলম্বে এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর বিচারের দাবিতে মামলা গ্রহণ ও এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন তারা।

মানববন্ধনে জাহেদা বেগমের পূত্রবধু রিনা আক্তার বলেন, ‘আমার শাশুড়ি অসুস্থ ছিল। তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেছি। তারপর ডাক্তার ব্লাড টেস্ট করতে দিছে। ব্লাড টেস্ট করে নিয়ে আসার পর ডাক্তার সুজন পাল বলেন, আপনার শাশুড়ি সুস্থ আছে; ভালো আছে। আপনারা তাকে বাসায় নিয়ে যান।’

‘এরপর সুজন পালের দুই ঘণ্টা হাত ধরছি, পাও ধরছি তবুও ভর্তি করায় নাই। তারপর শাশুড়ি বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালে মারা গেলে তারা নিজের দোষ ঢাকার জন্য হাসপাতালে ভাঙচুর করে। পরে আমাদেরকে বের করে দিছে।’

রিনা আক্তার বলেন, ‘এখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উল্টো আমার স্বামীর নামে হাসপাতালে ভাঙচুরের মামলা দিছে। সেখানে বলা হয়েছে, আমরা নাকি মৃত্যু রোগী হাসপাতালে নিয়ে গেছি। তাহলে আমার প্রশ্ন হল, ওনারা তাহলে কাকে দুই মাসের ওষুধ লিখে দিল। কাকে রিপোর্ট করতে দিলো।’

রিনা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা মৃত্যুর এই ঘটনার পর সদর থানায় মামলা করতে গেলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের মামলা নেয়নি। আমার স্বামীর নামে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করছি।’

এর আগে, গত ২৪ জুলাই বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর বিচার ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের পশ্চিম বাটিকামারী গ্রামের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মৃতের পুত্রবধূ রিনা আক্তার।

(ঢাকাটাইমস/৫আগস্ট/এসএ/কেএম)