প্রলোভন দেখিয়ে ২০০ তরুণীকে বিছানায় নেন রাজ, ভিডিও উদ্ধার

প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০২১, ০০:৪৮ | আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২১, ০২:১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নাটক কিংবা সিনেমায় কাজের সুযোগের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতেন চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ। এভাবে প্রায় দুই শতাধিক তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন তিনি। এসব তরুণী বেশিরভাগের বয়স ছিল ১৮-২০ এর মধ্যে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে এ নিয়ে স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন রাজ। তার বনানীর বাড়িতে অভিযানেও কম্পিউটার ও মোবাইলে মিলেছে অনেক অনৈতিক গোপন ভিডিও-ছবি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রাজ দাবি করেন, কম বয়সী তরুণীদের মধ্যে মিডিয়া সেলিব্রেটি হওয়ার শখ বেশি থাকে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি তরুণীদের সঙ্গে অনৈতিক কাজ করতেন। আবার অনেক সময় ব্লাকমেইলিংয়ের জন্য গোপনে ভিডিও ধারণ করে রাখতেন। এজন্য তিনি বনানীতে অবস্থিত তার বাসাকে বেশি কাজে লাগাতেন।

বৃহস্পতিবার রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একধিক সূত্র ঢাকাটাইমসকে এসব তথ্য জানায়।

সূত্র জানায়, রাজের বনানীর বাসাতে পর্নোগ্রাফি তৈরি কনটেন্ট পাওয়া গেছে। বিশেষ করে তার প্রডাক্শন হাউজের মাধ্যমে যারা মডেল বা অভিনেত্রী হতে ইচ্ছা প্রকাশ করতেন, তাদের সঙ্গে রাজ কোনো না কোনোভাবে শারীরিক সম্পর্ক করতেন। তাদের অনেককে তিনি বাধ্য করতেন। আবার স্বেচ্ছায়ও অনেকে তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতেন। এসব কাজের দৃশ্য গোপনে ভিডিও করে রাখতেন তিনি।

রাজ ব্যবসার পাশাপাশি দেশের বিনোদন জগতে বিচরণ করেন ২০১৪ সালে। এরপর তার সঙ্গে পরিচয় হয় পরীমনির। রাজের হাত ধরেই পরীমনি মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়েন। 'রাজ মাল্টিমিডিয়ার' কর্ণধার নজরুল ইসলাম রাজ শোবিজ জগতে ক্যারিয়ার শুরুর পর নাটক ও সিনেমা প্রযোজনা শুরু করেন। তার রাজ মাল্টিমিডিয়ার অফিসকে তিনি অনৈতিক কার্যক্রমে ব্যবহার করতেন। অভিযানে সেরকম অনেকগুলো পর্নোগ্রাফির কনটেন্ট জব্দ করেছে এলিট ফোর্স র‍্যাব।

সূত্র আরও জানায়, 'রাজ কম বয়সী তরুণীদের বেশি টার্গেটে নিতেন। যাদের বয়স ১৮-২০ এর মধ্যে থাকত। কারণ এসব তরুণীদের মিডিয়ায় কাজের আগ্রহ বেশি। অনেকে তার হাত ধরে মিডিয়ায় কাজের সুযোগও পেয়েছেন।'

কে এই রাজ?

১৯৮৯ সালে খুলনার একটি মাদ্রাসা হতে দাখিল পাশের পর গ্রাজুয়েশন করতে ঢাকায় আসেন রাজ। এরপর তিনি বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য ও ঠিকাদারি কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি শোবিজ জগতে বিভিন্ন সিনেমা ও নাটকে তিনি নানা চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি নামে-বেনামে প্রযোজনায় যুক্ত হন। 'রাজ মাল্টি মিডিয়া' নামে তার একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পর, ব্যবসায়িক জগত ও চিত্র জগতের দুই ক্ষেত্রে তার সংযোগ থাকায় অতিরিক্ত অর্থ লাভের আশায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নিজ অবস্থানের অপব্যবহার করেন।

রাজ সিন্ডিকেটে যারা

নজরুল ইসলাম রাজ ও সম্প্রতি র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং মাসুদুল ইসলাম জিসানের সহযোগিতায় ১০/১২ জনের একটি সিন্ডিকেট ছিল। যেই সিন্ডিকেটটি রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায়, বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানান অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা করতেন। পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে সিন্ডিকেট সদস্যরা বিপুল পরিমাণ অর্থ পেতেন। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত অভিজাত পরিবারের সদস্য ছিলেন। প্রতিটি পার্টিতে ১৫-২০ জন অংশগ্রহণ করতেন। এছাড়া সিন্ডিকেটটি বিদেশেও 'প্লেজার ট্রিপের' আয়োজন করতো।

পরীমনিকে মাদক সরবরাহ করতেন রাজ।

এদিকে রাজচক্রের ডিজে পার্টিতে বেশ ক’জন মডেলের নাম পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের তালিকাও যাচাইবাছাই করা হচ্ছে।

মাদক সরবরাহকারী ছিলেন রাজ:

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, রাজ নিজেই মাদকের সরবরাহকারী। তার বাসায় বিপুল পরিমাণ মাদক ছিল। রাজ ছাড়াও আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে মাদক সরবরাহকারী হিসেবে। তাদের বিষয়েও যাচাই-বাছাই চলছে।

রাজের বাসায় বিকৃত যৌনাচারের কক্ষ:

রাজের বাসায় একটি রুম পাওয়া যায়। যেখানে একাধিক নারী পুরুষের একসঙ্গে সমন্বিত বিকৃত যৌনাচারে ব্যবহার্য সরঞ্জামাদি ছিল। এটি নজরুল ইসলাম রাজের 'রাজ মাল্টিমিডিয়া প্রোডাকশন হাউজের' একটি কক্ষ বা বিশেষ বিছানা।

রাজের বিরুদ্ধে দুই মামলা:

বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিপুল বিদেশি মদ, সিসা সরঞ্জামসহ র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর চলচ্চিত্র প্রযোজক রাজের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে। এছাড়া বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধারের ঘটনায় মাদক আইনে আরেকটি মামলা করেছে র‍্যাব। ডিএমপির বনানী থানায় বৃহস্পতিবার র‍্যাব বাদী হয়ে মামলা দুটি করে। দুটি মামলায় রাজের সহযোগী সবুজ আলীকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। এদিকে মাদকের মামলাটি আদালতের নির্দেশে ডিবি পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে। এছাড়া তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

মুনিয়া ইস্যুতে প্রকাশ্যে আসেন রাজ: 

রাজধানীর গুলশানে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়া নামে এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধারের পর আলোচনায় আসেন চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ। তার সঙ্গে মুনিয়ার একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ছবিতে দেখা যায় মুনিয়ার পাশে বসে রাজ 'চুম্বন' দিচ্ছেন। 

মুনিয়া ও রাজ।

চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা তখন জানিয়েছিলেন, মুনিয়ার সঙ্গে রাজের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তিনিই মুনিয়াকে একটি নাটকে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। তবে সিডিউল ফাঁসানোর কারণে নাটকটি শেষ পর্যন্ত শেষ হয়নি।

এদিকে অন্তরঙ্গ ছবি ফাঁসের ঘটনায় নজরুল ইসলাম রাজ তখন ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছিলেন, মুনিয়ার পরিবারের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। তিনি প্রায় তাদের বাসায় যেতেন। সেখান থেকেই তাদের সম্পর্ক হয়। মুনিয়াকে তিনি মিডিয়ায় এনে কাজের সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মুনিয়া হঠাৎই তার সঙ্গে যোগযোগ বন্ধ করে দেন।

তখন রাজ দাবি করেন, 'তিনি চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেককে নায়িকা বানিয়েছেন। যেমন পরীমনিও তার সৃষ্টি।'

রাজের বাসায় পাওয়া যায় যেসব মাদক:

চলচ্চিত্র প্রযোজক রাজের বাড়িতে অভিযানে বিদেশি ১৪ বোতল মদ উদ্ধারের পাশাপাশি দুইটি সিসা সরঞ্জাম, ৯৭০ পিস ইয়াবা, বিকৃত যৌনাচারে ব্যবহৃত ১৪ সেট বিভিন্ন সরঞ্জাম, তিনটি মেমরি কার্ড জব্দ করে র‍্যাব।

পরীর বাসায় অভিযান দেখে পালানোর চেষ্টা করেন রাজ:

বুধবার বিকালে নায়িকা পরীমনির বনানীর ১৯ নম্বরের সড়কের বাড়িতে যখন অভিযান চলছিল, পাশেই ৭ নম্বর সড়কের বাসাতেই ছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ।  অভিযানের খবর পেয়ে রাজ তার বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে, তার বাড়ির সামনে র‍্যাব সদস্যদের উপস্থিতি থাকায় তিনি পালাতে পারেননি। রাজের সঙ্গে পরীমনির ঘনিষ্ঠতা ছিল। প্রায় পরীমনির বাসায় তারা মদের আড্ডা জমাতেন।

(ঢাকাটাইমস/০৬আগস্ট/এসএস/ইএস)