দ্যা লিডার উইদাউট বিয়ার্ড

আব্দুল্লাহ আল হাদী
 | প্রকাশিত : ০৭ আগস্ট ২০২১, ২০:১৪

(৫-৯) সেপ্টেম্বর ১৯৭৩, তখন আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে ন্যাম এর চতুর্থ সম্মেলন চলে। ৭৩টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান সে সম্মেলনে অংশ নেন।

উপস্থিত বিশ্ব নেতাদের মধ্যে সৌদি বাদশাহ ফয়সাল, যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো, কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ত্রো, মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত, লিবিয়ার নেতা গাদ্দাফি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী, ফিলিস্তিনের ইয়াসির আরাফাত, সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট আর্চবিশপ ম্যাকারিওস, গিনির প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস নায়ারে, কম্বোডিয়ার প্রিন্স নরোদম সিহানুক, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুহার্ত, নাইজেরিয়ার জোমো কেনিয়াত্তা, উগান্ডার ইদি আমিন, নেপালের রাজা বীরেন্দ্র, শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েকসহ অনেক বিশ্ব বরেণ্য বিশ্বনেতারা উপস্থিত ছিলেন সেখানে।

সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথমবারের মতো অংশ নেওয়া সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমান। আলজিয়ার্স বিমানবন্দরে আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বুমেদিন বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান ও লাল গালিচা সংবর্ধনা দেন। পরে মূল সম্মেলন অনুষ্ঠানে আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বুমেদিন একে একে সব দেশের সরকার ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে সকলকে পরিচয় করিয়ে দিতে থাকেন। একে একে একেক দেশের নেতারা মঞ্চে এলে উপস্থিত সবাই তাঁদের করতালি দিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাচ্ছিলেন। ফিলিস্তিনের ইয়াসির আরাফাত মঞ্চে এলে সবার করতালির জোর যেন বেশ বেড়ে গেল।

বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমান মঞ্চে আসা মাত্রই নিমিষেই ঘটে গেল এক অভূতপূর্ব ঘটনা। প্রেসিডেন্ট বুমেদিন যখন বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরতে শুরু করলেন, তখন সবাই নিজেদের অজান্তেই যেন নিজেদের আসন ছেড়ে আবেগে দাঁড়িয়ে পড়লেন। মুহুর্মুহু করতালিতে ভেসে যেতে থাকল সম্মেলন কক্ষ।

বঙ্গবন্ধু সেখানে তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে দারিদ্র ও ক্ষুধা, বৈষম্যহীন বিশ্ব গড়ে তোলার ডাক দিয়ে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি কাড়েন। এবং ৯ সেপ্টেম্বর সমাপনী ভাষণে তিনি একপর্যায়ে বলেন 'বিশ্ব আজ দুইভাগে বিভক্ত। এক পক্ষে শোষক, আরেক পক্ষে শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।' বঙ্গবন্ধু বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও পারস্পারিক সহযোগিতার ওপরও জোর দাবি জানান, যেকোনো সমস্যার সমাধান খুঁজতে মানবিক সমাধান খোঁজার তাগিদ দেন তিনি সে সম্মেলনে।

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য এ সম্মেলনটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের সদস্য পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে এ সম্মেলন শেষে যৌথ ঘোষণাপত্রে জোট নিরেপেক্ষ দেশগুলো সমর্থন দেয় বাংলাদেশকে। বিশ্বব্যাপী খাদ্য সমস্যা, সমন্বয়, প্রযুক্তির বিনিময়, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর সাথে কোপারেশন, আই.এম.এফ, উন্নত দেশগুলোর সাথে অনুন্নত দেশগুলোর যোগাযোগ জোরদার করা, খরা পরিস্থিতি, ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ, আরব-ইজরায়েল সম্পর্ক, কম্বোডিয়া, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, নামিবিয়া, ফিলিস্তিন ইস্যু, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যসহ প্রায় ১৫টি বিষয়ে সেখানে রেজুলেশন গ্রহণ করা হয়।

এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর প্রজ্ঞা, ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এগিয়ে যায় অনেক খানি।

এ সম্মেলনকে ঘিরে সেখানকার পত্রিকায় তখন নানা ধরনের উৎসুক প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছিল একের পর এক, উপস্থিত বিশ্ব নেতাদের মতোই সাংবাদিকদেরও উৎসাহের শেষ ছিল না সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু মুজিবকে ঘিরে।

অসংখ্য নাইটক্লাব আর ক্যাবারের নগরী আলজিয়ার্স। বঙ্গবন্ধু কটেজে ওঠার সময়ই তাঁর দোভাষীকে বলেছিলেন, ‘এই কটেজে একমাত্র কোকাকোলা-সেভেন আপ ছাড়া বিয়ার, হুইস্কি, ভদকা, জিন, রাম, রেডওয়াইন কিছুই ডেলিভারি হবে না।’ পরেরদিন সেখানকার তখন একমাত্র ইংরেজি পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পৃষ্ঠা জুড়ে প্রতিবেদন ছেপে ছিল। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘দ্যা লিডার উইদাউট বিয়ার্ড; নাইদার ভিজিটেড অ্যানি নাইটক্লাব নর টাচড ড্রিংকস ইন লাইফ।’

এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু অনেক বিশ্বনেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও করেছিলেন যেমন সৌদি বাদসা ফয়সাল, কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ত্রে, যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীসহ আরও অনেকের সাথে।

তথ্যসূত্র- ইন্টারনেট, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ - শেখ ফজলুল করিম সেলিম। ছবি - ফটো আর্কাইভ- মুজিব হান্ড্রেড ইয়ার্স।

লেখক: কবি ও গবেষক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :