বঙ্গবন্ধুর জীবনে ‘শক্তিঘর’ ছিলেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব

ফারাজী আজমল হোসেন
| আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২১, ১১:২৬ | প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট ২০২১, ১১:২১

বাংলাদেশের আকাশে স্বাধীনতার সূর্যোদয় হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। বাংলাদেশের জন্য নিজের সবকিছু বিসর্জন দেয়া এই মহাপুরুষের ‘শক্তিঘর’ ছিলেন তার সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় চেতনাকে আরও শাণিত করেছিলেন এই মহীয়সী নারী একজন রাজনৈতিক জীবনসঙ্গী হয়ে। রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে পালন করেছেন দিশারীর ভূমিকা।

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্টজনের কথা উঠে এসেছে। তাঁদের মধ্যে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নাম অগ্রগণ্য।

বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের পারিবারিক নাম রেণু। বঙ্গবন্ধুর বাল্যকালে বাবা-মা হারানো চাচাতো বোন রেণুর (বয়স মাত্র ৩ বছর) সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়। মিশনারি স্কুল থেকে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অল্প বিস্তর প্রাথমকি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর আর পড়ালেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু তিনি ছিলেন একজন জ্ঞানী, বুদ্ধিদীপ্ত, বিচক্ষণ, দায়িত্ববান ও ধৈর্যশীল নারী। বঙ্গবন্ধুর জীবনে তাঁর প্রভাব ছিল অপরিসীম। এত দিন বিভিন্ন সূত্র থেকে তা জানা গেলেও এখন বঙ্গবন্ধুর নিজের কথা থেকে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব সম্বন্ধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও অজানা তথ্য জানা যায়। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী লেখার পেছনেও মূল প্রেরণা ও উৎসাহ তাঁরই।

এ সম্বন্ধে বঙ্গবন্ধু বলেন

আমার সহধর্মিণী একদিন জেলগেটে বসে বলল, ‘বসেই তো আছ, লেখ তোমার জীবনের কাহিনী।’ বললাম, ‘লিখতে যে পারি না; আর এমন কি করেছি যা লেখা যায়! ...আমার জীবনের ঘটনাগুলো জেনে জনসাধারণের কি কোনো কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না ... আমার স্ত্রী যার ডাক নাম রেণু- আমাকে কয়েকটা খাতাও কিনে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিল। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কয়টা আমাকে দিয়েছেন। রেণু আরও একদিন জেলগেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। তাই আজ লিখতে শুরু করলাম।'

বঙ্গবন্ধুর জীবনের বড় একটি অংশ কাটিয়েছেন কারাগারে বন্দি অবস্থায়। এ সময় বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পার্টির কর্মীদের খোঁজখবর নেওয়া, দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সংসারের খরচের টাকা থেকে সঞ্চয় করে তা কর্মীদের দেওয়া, আগরতলা মামলায় (১৯৬৮-৬৯) বিচারাধীন থাকাকালীন নিঃশর্ত মুক্তি ছাড়া প্যারোলে মুক্তিতে সম্মতি জ্ঞাপন না করার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর নিকট খবর পাঠানোসহ আরও অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন ঘটনার আলোকে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ভূমিকা বর্ণনা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু ৭২, ১২৬, ১৪৬, ১৬৪, ১৬৫, ১৯১, ২০৫, ২০৭, ২১০, ২১১, ২৬২, ২৭০, ২৭১, ২৮৫ পৃষ্ঠায় তার কথা উল্লেখ করেছেন। এসবের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে চলার জন্য টাকা জোগাড় করে গোপনে তাঁকে দেওয়া, সম্মেলনের অতিথিদের খাবারের বন্দোবস্ত করার জন্য টুঙ্গিপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ আসা, বঙ্গবন্ধুর বিএ পরীক্ষার সময় উৎসাহ যোগান ও যত্ন নিতে কলকাতা ছুটে যাওয়া, ঢাকায় অতি কষ্টে বাড়ি ভাড়া করে বসবাস, বঙ্গবন্ধু বন্দি থাকা অবস্থায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চালানোসহ সংসারের হাল ধরা, বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে তাঁর প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় ও অন্য জিনিসপত্র স্যুটকেসে প্রস্তুত করে দেওয়া ইত্যাদি রয়েছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘রেণু খুব কষ্ট করত, কিন্তু কিছুই বলত না। নিজে কষ্ট করে আমার জন্য টাকাপয়সা জোগাড় করে রাখত যাতে আমার কষ্ট না হয়।’ আর এক জায়গায় লিখেছেন, ‘সে [রেণু] তো নীরবে সকল কষ্ট সহ্য করে, কিন্তু কিছু বলে না। কিছু বলে না বা বলতে চায় না, সেই জন্য আমার আরও বেশি ব্যথা লাগে।’

একবার একনাগাড়ে ১৭-১৮ মাস বঙ্গবন্ধু জেলে কাটান। এক জেল থেকে অন্য জেলে। মামলায় হাজিরা দিতে বঙ্গবন্ধুর গোপালগঞ্জে আসা। জেলের মধ্যে তাঁর স্বাস্থ্য খুবই খারাপ হয়ে পড়ে। অবশেষে জামিনে মুক্তি দেয়া হলেও পরক্ষণে নিরাপত্তা আইনে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়। গোপালগঞ্জ থানায় বসে স্ত্রী রেণু বঙ্গবন্ধুকে একাকী পেয়ে যে কথাগুলো বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু তা তাঁর আত্মজীবনীতে এভাবে লিপিবদ্ধ করেন:

‘রেণু আমাকে যখন একাকী পেল, বলল, ‘জেলে থাক আপত্তি নাই, তবে স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখ। তোমাকে দেখে আমার মন খুব খারাপ হয়ে গেছে। তোমার বোঝা উচিত আমার দুনিয়ায় কেউ নাই। ছোটবেলায় বাবা-মা মারা গেছেন ... তোমার কিছু হলে বাঁচব কী করে?' ... আমি বললাম ‘খোদা যা করেন, তাই হবে, চিন্তা করে লাভ কী?’

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় ফরিদপুর জেলে বন্দি অবস্থায় (১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফরিদপুর কারাগারে স্থানান্তরিত হন) বঙ্গবন্ধু ও মহিউদ্দিন আহমেদ ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন। ২৬-২৭ মাস বিনা বিচারে কারাগারে বন্দি। দীর্ঘ কারাভোগের কারণে বঙ্গবন্ধুর শরীর অতিশয় দুর্বল হয়ে পড়ে। হার্টের অবস্থাও খারাপ। বঙ্গবন্ধু ভেবেছিলেন, অনশনেই মৃত্য ঘটবে। তাই তিনি অনশন শুরুর পূর্বে চিরকুটে চারখানা চিঠি লিখেন। এর একখানা ছিল স্ত্রী রেণুর উদ্দেশে। ১২ দিন অনশন করার পর ২৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়া হয়। মুক্তি পেয়ে বাড়ি পৌঁছার পর রেণু বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘তোমার চিঠি পেয়ে আমি বুঝেছিলাম, তুমি কিছু একটা করে ফেলবা। আমি তোমাকে দেখবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কাকে বলব নিয়ে যেতে, আব্বাকে বলতে পারি না লজ্জায়। নাসের ভাই বাড়ি নাই। যখন খবর পেলাম খবরের কাগজে, তখন লজ্জা শরম ত্যাগ করে আব্বাকে বললাম ... রওয়ানা করলাম ঢাকায়, সোজা আমাদের বড় নৌকায় তিনজন মাল্লা নিয়ে। কেন তুমি অনশন করতে গিয়েছিলে? কিছু একটা হলে কী উপায় হত? আমি এই দুইটা দুধের বাচ্চা নিয়ে কী করে বাঁচতাম? হাসিনা, কামালের অবস্থা কী হত? তুমি বলবা, খাওয়া-দাওয়ার কষ্ট তো হত না? মানুষ কি শুধু খাওয়া পরা নিয়েই বেঁচে থাকতে চায়? আর মরে গেলে দেশের কাজই বা কিভাবে করতা?’ আমি তাকে কিছুই বললাম না। তাকে বলতে দিলাম, কারণ মনের কথা প্রকাশ করতে পারলে ব্যথাটা কিছু কমে যায়। রেণু খুব চাপা, আজ যেন কথার বাঁধ ভেঙে গেছে। শুধু বললাম, উপায় ছিল না।’

মা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের বিচক্ষণ আচরণের কথা জানাতে গিয়ে তার মেয়ে (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বাসায় ফ্রিজ ছিল, আব্বা আমেরিকা যখন গিয়েছেন ফ্রিজ নিয়ে এসেছেন। সেই ফ্রিজটা বিক্রি করে দিলেন। আমাদের বললেন, ঠাণ্ডা পানি খেলে সর্দি কাশি হয়, গলা ব্যথা হয়, ঠাণ্ডা পানি খাওয়া ঠিক না। কাজেই এটা বিক্রি করে দিই। কিন্তু এটা কখনো বলেননি যে আমার টাকার অভাব। সংসার চালাতে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতাদের সাহায্য করতে হচ্ছে। কে অসুস্থ তাকে টাকা দিতে হচ্ছে। কখনো অভাব কথাটা মায়ের কাছ থেকে শুনিনি। এমনও দিন গেছে বাজার করতে পারেননি। আমাদের কিন্তু কোনো দিন বলেননি আমার টাকা নাই, বাজার করতে পারলাম না। চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করেছেন, আচার দিয়ে বলেছেন প্রতিদিন ভাত ভালো লাগে নাকি? আজকে আমরা গরিব খিচুড়ি খাব। এটা খেতে খুব মজা। আমাদের সেভাবে তিনি খাবার দিয়েছেন। একজন মানুষ তার চরিত্র দৃঢ় থাকলে যে কোনো অবস্থা মোকাবিলা করার মতো ক্ষমতা ধারণ করতে পারে। অভাব-অনটনের কথা, হা-হুতাশ কখনো আমার মা’র মুখে শুনিনি। আমি তাঁর বড় মেয়ে। আমার সঙ্গে আমার মায়ের বয়সের তফাৎ খুব বেশি ছিল না। তার মা নাই, বাবা নাই কেউ নাই। বড় মেয়ে হিসেবে আমিই ছিলাম মা, আমিই বাবা, আমিই বন্ধু। কাজেই ঘটনাগুলো আমি যতটা জানতাম আর কেউ জানত না। আমি বুঝতে পারতাম। ভাইবোন ছোট ছোট তারা বুঝতে পারত না। প্রতিটি পদে পদে তিনি সংগঠনকে, আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করেছেন। তবে প্রকাশ্যে আসতেন না। তিনি ঠাট্টা করে বলতেন আমি আইয়ুব খানকে ধন্যবাদ দেই, কেন?’

বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের এই কোমলমতি, স্নেহময়ী আচরণের বাহিরে ছিল এক কঠিন রূপ। বিচক্ষণতার সঙ্গে তিনি কখনো কঠোর আবার কখনো কোমলমতি, স্নেহময়ী হয়ে উঠতেন। এরূপ একটি রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণ ছিল ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের বক্তব্য কী হবে, সে সম্বন্ধে এর পূর্বে নানাজন তাঁকে লিখিত-অলিখিত নানা পরামর্শ দিতে থাকেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিও একটানা ৩৬ ঘণ্টার এক বৈঠকে মিলিত হয় মর্মে জানা যায়। কিন্তু বৈঠকে কোনো স্থির সিদ্ধান্ত না হওয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় যা বলা আবশ্যক তাই বলবেন বলে বঙ্গবন্ধু নিজের উপর দায়িত্ব তুলে নেন। এক্ষেত্রে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সমগ্র দেশের মানুষ তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সবার ভাগ্য আজ তোমার ওপর নির্ভর করছে ... অনেকে অনেক কথা বলতে বলেছে ... তুমি নিজে যে ভাবে যা বলতে চাও নিজের থেকে বলবে। তুমি যা বলবে সেটিই ঠিক হবে।’

অতঃপর নির্দিষ্ট সময়ে রেসকোর্সের জনসমুদ্রের সভামঞ্চে এসে উপস্থিত হলেন বঙ্গবন্ধু। বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের কথা মতো তিনি যেন নিজের কথাটিই বললেন, যা মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত সমগ্র বাঙালিরও মনের কথা- '... ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে ... এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।'

বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধুর স্ত্রীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একই সঙ্গে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ রাজনীতি-সচেতন এক মহীয়সী নারী। আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে নিভৃতচারীর বেশে বঙ্গবন্ধুকে তিনি যুগিয়েছেন সর্বপ্রকার সাহস, শক্তি, প্রেরণা। ৭৫-এর ১৫ই আগস্ট ঘাতকের বুলেট শুধু জাতির পিতার জীবনকেই কেড়ে নেয়নি, বিদীর্ণ করে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের দেহও। নিষ্পাপ শিশু রাসেলসহ সেদিন প্রাণে রক্ষা পায়নি ঐতিহাসিক ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাসায় উপস্থিত পরিবারের কোনো সদস্যই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গমাতার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত (বঙ্গবন্ধুর) পাশে ছিলেন, যখন ঘাতকরা আমার বাবাকে হত্যা করল তিনি তো বাঁচার আকুতি করেননি। তিনি বলেছেন, 'ওনাকে যখন মেরে ফেলেছ, আমাকেও মেরে ফেল।' এভাবে নিজের জীবনটা উনি দিয়ে গেছেন।’

এভাবেই বঙ্গবন্ধুর জীবনের সুখ-দুঃখের সাথী হয়েই শুধু নয়, মৃত্যুতেও সাথী হয়ে রইলেন তাঁর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। এই মহীয়সী জন্মদিনে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :