মনোস্পুল পেপার ও পেপার প্রসেসিং মূল মার্কেটে এসেই কারসাজি!

রহমান আজিজ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২১, ১১:০৩ | প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট ২০২১, ২২:১৮

পুঁজিবাজারে একগুচ্ছ অনিয়মে ২০০৯ সালে বিভিন্ন খাতের ৬৬টি কোম্পানিকে মার্কেট থেকে সরিয়ে (ওভার দ্য কাউন্টার) ওটিসি মার্কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানি লিমিটেড এবং পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। তবে মুনাফায় ফেরার পাশাপাশি সুশাসনে উন্নতি করায় গত ১৩ জুন ওটিসি মার্কেট থেকে এই দুটি কোম্পানিসহ চারটি কোম্পানিকে মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনা হয়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই দুটি কোম্পানিতে নেই কোনও সুশাসন। তাদের পরিচালনা পর্যদের চেয়ারম্যান, কোম্পানি সচিব, সিএফও, হেড অফ ইন্টার্নাল অডিট, ফ্যাক্টরি ও অফিসের ঠিকানাও একই। তাছাড়া এই কোম্পানির শেয়ার দর নিয়েও চলছে কারসাজি। কোম্পানি দুটির ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন ও ডিএসই সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ, বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করা, বিএসইসিকে আর্থিক প্রতিবেদন জমা না দেওয়া, লভ্যাংশ প্রদান না করা ও সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন না করাসহ একগুচ্ছ অনিয়মের কারণে ২০০৯ সালে মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানি লিমিটেড এবং পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডসহ ৬৬টি কোম্পানিকে ওটিসি মার্কেটে নিয়ে যাওয়া হয়।

১৯৮৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানি লিমিটেড। ১৯৯০ সালে তালিকাভুক্ত হয় পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডে। এ কোম্পানি দুটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিন।

উভয় প্রতিষ্ঠানে কোম্পানি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সিএফও হিসেবে নাইমুল ইসলাম, হেড অফ ইন্ট্রানাল অডিটর মো. সাখাওয়াত হোসেন দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিষ্ঠান দুটির ফ্যাক্টরি শ্রীরামপুর, ধামরাই দেখানো হয়েছে। এছাড়া নিবন্ধিত অফিসের ঠিকানা দেখানো হয়েছে প্লট নং- ৩১৪/এ, রোড নং- ১৮, ব্লক-ই, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা।

এদিকে কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোর্ড (৩ জুন ২০১৮) এর ৩ (১) (সি) ধারায় বলা আছে, কোনও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, কোম্পানি সচিব বা প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা একইসময় অন্য কোনও কোম্পানি, প্রতিষ্ঠানে একই পদে বা অন্য কোনও পদে নিযুক্ত থাকতে পারবেন না।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, এ দুটি প্রতিষ্ঠান কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোর্ডের কমপ্ল্যান্স না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোর্ড পরিপালন না করলে আইনে কি ব্যবস্থা আছে জানতে চাইলে বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে জানান, কেউ এটি পরিপালনে ব্যর্থ হলে প্রথমত বিএসইসি সেই কোম্পানিকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়। উত্তর সন্তোষজনক না এলে জরিমানা করা হয়। এছাড়া তাদেরকে যে কোনও একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

এদিকে চলতি বছরের ১৩ জুন থেকে মুল মার্কেটে লেনদেন শুরু করে কোম্পানি দুটি। এরপর থেকে কারসাজি শুরু করে শেয়ার দর বাড়াচ্ছে তারা। মনোস্পুল পেপারের শেয়ার দর গত ১৩ জুন ছিল ৫৫ টাকা, গত ৫ আগস্ট ১৭১.৯ টাকায় লেনদেন শেষ হয়। অর্থাৎ ২১২.৫৫ শতাংশ বা ১১৬.৯ টাকা বেড়েছে। পেপার প্রসেসিং ওটিসি থেকে মুল মার্কেটের লেনদেনের দিন শেষে ছিল ১৭.৬ টাকা, গত বৃহস্পতিবার শেয়ার দর দাঁড়ায় ১৫২.১ টাকা বা শেয়ার দর বেড়েছে ৭৬৪ শতাংশ বা ১৩৪.৫ টাকা।

কোম্পানি দুটি দীর্ঘদিন বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দিলেও এবং ইপিএস ভালো না থাকার পরও প্রতিনিয়ত শেয়ার দর বাড়াতে ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আব্দুস সালাম নামে এক বিনিয়োগকারী জানান, পুঁজিবাজারে আসার যে কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কোনও লভ্যাংশ দেয় না সে কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ার কোনও কারণই নেই। বুঝে নিতে হবে এখানে কারসাজি আছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মনোস্পুল পেপার ১৯৮৯ সালে তালিকাভুক্ত হলেও ১৯৯৬ সালে ১:৫ বোনাস লভ্যাংশ দেয়। এরপর ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ বোনাস দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের। সম্প্রতি ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে আসার জন্য ২০২০ সালে লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি। এসময় তারা ৯ শতাংশ নগদ ও ৮ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে।

অপরদিকে পেপার প্রসেসিং ১৯৯০ সালে পূঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও ২০১৯ সাল পর্যন্ত কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। তবে তারা মূল মার্কেটে আসার জন্য ২০২০ সালে ২২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোম্পানি দুটি বছরের পর বছর মুনাফা করলেও বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মনোস্পুল পেপারের নিট মুনাফা ছিল ৩ কোটি ৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৮ টাকা; ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ৩ কোটি ৮৬ লাখ ২২ হাজার ২৬১টাকা; ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ কোটি ৭৩ লাখ ১৭ হাজার ৭৮৬ টাকা; ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬ কোটি ৭৪ লাখ ৯০ হাজার ২৯৭ টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৭৬২ টাকা নিট মুনাফা করেছে কোম্পানিটি।

অপরদিকে একইভাবে পেপার প্রসেসিংও বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়েছে। কোম্পানিটি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার ১৫৭ টাকা; ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ কোটি ৫৯ কোটি লাখ ২৩ হাজার ৪৯৫ টাকা; ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬ কোটি ১৩ লাখ ১৬ হাজার ২৮৭ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ কোটি ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২০৮ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৪০ হাজার ৮২ টাকা নিট মুনাফা করেছে।

প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, মনোস্পুল পেপার শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ওটিসি মার্কেটে থাকাকালীন ছিল ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১০.১১ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১২.৬৭টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৮.৮০, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২২.১৪ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫.৫৬টাকা। কোম্পানিটির জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ০.১০ টাকা এবং গত ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ০.২৮ টাকা।

আর পেপার প্রসেসিংয়ের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৭.২৮ টাকা; ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭.৭২ টাকা; ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৮.২৫, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫.১৫ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭.১০ টাকা। কিন্তু গত ৯মাসে কোম্পানিটির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ০.৪৪ টাকা।

(ঢাকাটাইমস/০৮আগস্ট/এআর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

রং মাখানো তুলি কাগজ ছুঁলেই হয়ে উঠছে একেকটা তিমিরবিনাশি গল্প

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :