কেউ প্রয়োজনের অতিরিক্ত ‘নাপা’ কিনছে আর কেউ পাচ্ছেই না

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১০ আগস্ট ২০২১, ২২:৩১

মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে জ্বরের ওষুধের চাহিদা বেড়েছে। তবে প্যারাসিটামল জাতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওষুধের মধ্যে অতিপরিচিত ‘নাপা’ নিয়ে চলছে কৃত্রিম সংকট। বেক্সিমকো ফার্মার তৈরি এই ওষুধটি দোকান ঘুরেও মেলাতে পারছেন না বলে ক্রেতারা অভিযোগ করছেন।

তবে দেশের স্বনামখ্যাত অন্যতম ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিটি বলছে, গত তিন মাসে করোনাভাইরাস আর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘিরে তাদের প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সরবরাহ বাজারে ত্রিশ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। যেই কারণে তাদের পক্ষ থেকে এই জাতীয় ওষুধের কোনো সংকট নেই।

বাংলাদেশে জ্বর-ঠান্ডাজনিত উপসর্গে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ নেন। এর মধ্যে কয়েকটি ব্র্যান্ডের উল্লেখযোগ্য প্যারাসিটামল ওষুধের মধ্যে রয়েছে নাপা, এইস, রিসেট, রেনোভা, টামেন, ফাস্ট, টেমিনো, এসিটা, ক্যাপেনল, ইত্যাদি। তবে বেক্সিমকো ফার্মার তৈরি নাপাই বেশি চলে বলে বিক্রেতাদের ভাষ্য।

অভিযোগ উঠেছে, ক্রেতার এই চাহিদা ঘিরেই অসাধু ব্যবসায়ীরা নাপার কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। প্রতিটি ৫০০ মিলিগ্রামের ১০টি ট্যাবলেট সম্বলিত এক পাতা নাপা ওষুধের দোকনে ১০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে বেশ কিছুদিন ধরে ওষুধের দোকানদাররা ১০ টাকার পরিবর্তে ১৫ থেকে ২০ টাকায় এক পাতা নাপা বিক্রি করছেন।

ঢাকার মিরপুর-১ নম্বর এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী সাব্বির হোসেন জানান, সোমবার তার এলাকার অন্তত ১০টি দোকান ঘুরে তিনি এক পাতা নাপা কিনতে পারেননি। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর জ্বর। জ্বরের জন্য নাপা ভাল। কিন্তু কোথাও পাইনি।’

সাব্বিরের মতো বক্তব্য আদাবর এলাকার বাসিন্দা নাইমুল ইসলামের। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘পুরো আদাবর, শেখেরটেক ঘুরছি। কোথাও নাপা নাকি নাই। পরে বাধ্য হয়ে অন্য প্যারাসিটামল নিছি।’

ঢাকার শাহবাগে রয়েছে পাইকারি পর্যায়ের ওষুধের কারবার। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ও বারডেম হাসপাতালের আশপাশেই রয়েছে খুচরা পর্যায়ের এক গাদা ওষুধের দোকান। মঙ্গলবার এসব দোকান ঘুরে প্রতিবেদক নাপা পাননি।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ওষুধের দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করে ঢাকা টাইমস। বিক্রেতাদের অধিকাংশেরই ভাষ্য, সরবরাহ নেই, যে কারণে তাদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে।

শাহবাগের সিটি মেডিকেল হল নামে একটি দোকানের বিক্রয়কর্মীরা জানান, তিন মাস ধরে বাজারে নাপার সংকট। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে তাদের ভাষ্য। কোনো কোনো ক্রেতা প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত কিনে নিচ্ছেন বলেও তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। আর এই কারণে অনেক ক্রেতাকে খালি হাতে ফেরত দিতে হচ্ছে তাদের।

যদিও ওষুধ বিক্রেতাদের এমন দাবির সত্যতা মিলছে না নাপা প্রস্তুতকারক বেক্সিমকো ফার্মার চিপ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজার বক্তব্যে। ঢাকা টাইমসকে তিনি জানান, মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ প্যারাসিটামল তারা সরবরাহ করছেন। জুলাই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি উৎপাদন করেছে ওষুধটি।

রাব্বুর রেজা বলেন, ‘বাজারে নাপার চাহিদা বেড়েছে, আমাদের সরবরাহও বেড়েছে। যে কারণে উৎপাদন কমেনি বরং বেড়েছে। এই মাসে আমরা আরও উৎপাদন বাড়িয়েছি। চলতি আগস্টের উৎপাদন জুলাইয়ের উৎপাদনকেও ছাড়িয়ে যাবে।’

শাহবাগের দোকানদারের মতোই ভাষ্য মোহাম্মদপুর এলাকার ফৌজিয়া ফার্মেসির মালিক ফৌজিয়া আফরিনের। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। বেড়েছে চাহিদা। আগে যে পরিমাণ নাপা রাখতাম, এখন তার চাইতে বেশি রাখি। তবুও অনেক কাস্টমারকে ফেরত দিতে হয়। চাহিদা অনেক।’

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, অনেকে ওষুধটা কিনে বাসায় রেখে দিচ্ছেন। তাই আমি কাউকে এক পাতার বেশি দিচ্ছি না। যেহেতু চাহিদা বেড়েছে, তাই একজনকে সব না দিয়ে, সবাইকে অল্প অল্প করে দিচ্ছি। আমার কথা হচ্ছে, সবাই যেন পায়।’

ক্রেতাদের একটি অংশ অপ্রয়োজনে ওষুধ মজুদ করলে কৃত্রিম সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা। প্রয়োজন না থাকার পরও এভাবে অতিরিক্ত ওষুধ কিনে অন্যদের অসুবিধায় না ফেলতে সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

ঢাকা টাইমসকে ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘ওষুধের একটি এক্সপায়ার ডেট থাকে। এক্ষেত্রে বাসায় মজুদ করে রাখলে যেমন বাজারে কৃত্রিম সংকট দেখা দেবে, একইভাবে ওষুধের মেয়াদও শেষ হয়ে যাবে। ফলে যার যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকুই কেবল কেনা উচিত।’

(ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/কারই/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :