যেসব ফ্যাট শরীরের জন্য উপকারী

প্রকাশ | ১৯ আগস্ট ২০২১, ১৪:২৮ | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২১, ১৪:৪০

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

পুষ্টির ছয়টি উপাদানের মধ্যে গুরত্বপূর্ণ এক উপাদানের নাম ফ্যাট বা চর্বি। ফ্যাট জাতীয় খাবার আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খুবই প্রয়োজন। মস্তিষ্কের শতকরা ৬০ শতাংশই ফ্যাট দিয়ে তৈরি। এই ফ্যাট দেহের তাপশক্তি উৎপাদন, মস্তিষ্কের বিকাশ, বিভিন্ন হরমোনের উৎপাদন, চর্বিযুক্ত দ্রবণীয় ভিটামিন শোষণ (এ, ডি, ই, কে) এবং ত্বক ও অন্যান্য অঙ্গের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। মূলত ফ্যাট দেহের সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য ইনসুলেটর বা অন্তরক হিসেবে কাজ করে থাকে।

 

পানি, কার্বোহাড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট এগুলো খাদ্যের সাথে খেতে হয় বিধায় এদের ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্ট বলে। ফ্যাট অন্যান্য ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টের মধ্যে সুষম খাদ্যের ফরমুলায় তুলনামুলক কম পরিমাণে খেতে হয়।

 

পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্যাট, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ছাড়া আমাদের শরীর কার্যত অচল। এগুলোর জন্যেই শরীর সুস্থ থাকে।

 

১ গ্রাম ফ্যাট থেকে ৯ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। খাদ্য হিসেবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন প্রায় ৫০ গ্রাম স্নেহ পদার্থের প্রয়োজন।

 

ফ্যাট সম্পর্কে আমাদের মধ্যে একটি বহুল প্রচলিত ধারণা হচ্ছে যে, ফ্যাট শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। কিন্তু এই বিবরণ কখনওই সম্পূর্ণতা পেতে পারে না। এমন বহু ধরনের ফ্যাট আছে, যা স্বাস্থ্যকর। বরং শুধুমাত্র সম্পৃক্ত ফ্যাট ছাড়া প্রায় কোনও ধরনের ফ্যাটই অস্বাস্থ্যকর নয়। ঠিক পরিমাণে এবং সময়মতো খেলে, ফ্যাট আপনার শরীর সুস্থ, সচল আর সক্রিয় করে রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের মধ্যে ভাল-মন্দ আছে। আপনি যদি অজ্ঞতাবশত: ধারাবাহিকভাবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন ফ্যাট খেতে থাকেন, তাহলে আপনার হৃদরোগ, স্ট্রোক থেকে শুরু করে অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। ফ্যাটযুক্ত খাদ্য যা আপনার খাদ্য তালিকায় থাকা যথেষ্ট প্রয়োজন-

 

মাছ

 

ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস হিসাবে মাছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। এই ফ্যাটি অ্যাসিডগুলোর কারণে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের আশঙ্কা কমে আসে। এ ছাড়াও, এই অ্যাসিডে প্রোটিন বা অন্যান্য পরিপোষকে সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বা বার্ধক্যের লক্ষণ কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

 

ডিম

 

ডিম ফ্যাটের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ডিমের কুসুমে ভিটামিন ডি, বি, আর কোলিনে পরিপূর্ণ। তা লিভার, মস্তিস্ক, বা পেশীর কর্মক্ষমতার জন্য উপযোগী। বলা হয় কুসুম খাওয়া উচিত নয়, কারণ ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুবই চড়া থাকে। কিন্তু এটি অত্যন্ত ভুল ধারণা। ডিমের কুসুমে শুধুমাত্র ২১২ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে, যা শরীরের দৈনন্দিন পর্যাপ্ত কোলেস্টেরলের চাহিদার ৭১ শতাংশ মাত্র।

 

বীজ জাতীয় খাদ্য

 

বিভিন্ন ধরনের বীজ, যেমন চিয়া বা সূর্যমুখীর বীজ, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিপূর্ণ। দুইচামচ এমন বীজ ডায়েটে থাকা অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য বা কোষ্টকাঠিন্য থামানোর জন্য এই অ্যাসিড সক্রিয় হয়ে ওঠে।

 

বাদাম

 

সব রকম বাদাম হার্টের জন্য ভীষণ স্বাস্থ্যকর। প্রত্যেক দিন বাদাম খেলে তা আপনার শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও বিভিন্ন ভিটামিনের প্রবেশ নিশ্চিত করে। হার্টের সুস্থতার জন্য সবচেয়ে ভাল বাদাম হল আখরোট। ২-৩টি আখরোট দিনে খেলে তা বিভিন্ন হার্টের অসুখ রুখতে সাহায্য করে।

 

বিনস

 

সয়াবিন, কিডনি বিনের মতো বিনগেলো ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিপূর্ণ। তা মেজাজ ভাল রাখার জন্য এবং তদুপরি কিডনির ভাল থাকার জন্যে দরকারি। আ্যন্টি-অক্সি়ড্যান্ট, আয়রন বা ফাইবারের জন্য এই সব বিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

ডার্ক চকোলেট

 

ফ্যাটের উৎস হিসাবে ডার্ক চকোলেট অত্যন্ত জরুরি। তাই মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হলে, কিন্তু পুষ্টিকর জিনিস খাওয়ার কথা মাথায় রাখা জরুরি। আপনি ডার্ক চকোলেট খেতেই পারেন। ৭০ শতাংশ কোকো থাকে এমন চকোলেট ক্যালসিয়াম বা পটাশিয়ামের মতো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট দিয়ে পরিপূর্ণ। ডার্ক চকোলেট হার্টের রোগ কমানোর আর মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

দুধ বা দই

 

দই বা দুধ পরিপোষকে পরিপূর্ণ। চিজও অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি১২, ফসফরাসের পরিমাণ এ রকম সমস্ত খাবারে অত্যন্ত বেশি। ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্যও ভাল দুধ বা দইয়ের মতো খাবার।

 

অলিভ অয়েল

 

হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই মূল্যবান একটি উপাদান হল অলিভ অয়েল। কোলেস্টেরল মাত্রা কমাতে সাহায্য করে ভিটামিন ই-তে পরিপূর্ণ অলিভ অয়েল। বাড়তি ওজন ঝরানোর বা রক্তচাপ কমানোর জন্যও অলিভ অয়েল খুব সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

 

(ঢাকাটাইমস/১৯আগস্ট/আরজেড/এজেড)