বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মশার প্রজননক্ষেত্র: সরেজমিন খিলগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়

কাজী রফিক ও কৌশিক রায়
| আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২১, ১৪:৫৯ | প্রকাশিত : ২০ আগস্ট ২০২১, ১১:৪২

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাব বন্ধ। আর তাতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মশার প্রজননক্ষেত্র হয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ঢাকাটাইমস কেস স্টাডি হিসেবে রাজধানীর খিলগাঁও উচ্চবিদ্যালয় সরেজমিন পরিদর্শন করে এমন আশঙ্কারই প্রতিফলন পেয়েছে। বুধবার বিকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে এর বিভিন্ন স্থানে দেখা মেলে জমে থাকা পানি আর তাতে মশার লার্ভা।

স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকেও এ ব্যাপারে অভিযোগ আসে ঢাকা টাইমসের কাছে। বুধবার ঢাকাটাইমসের সংবাদকর্মীরা সরেজমিনে খিলগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। মূল ফটক পেরিয়ে মাঠে পা দিতেই দেখা মেলে সেখানে জমে আছে বৃষ্টির স্বচ্ছ পানি। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তাকর্মীকে নিয়ে দুই প্রতিবেদক ভেতরে যান। তারা দেখতে বিভিন্ন স্থানে রাখা পাত্রে পানি জমে আছে।

পাত্রগুলোর দিকে দৃষ্টি দিতেই একটি পাত্রে মশার লার্ভা শনাক্ত হয়। এই প্রতিবেদক লার্ভার ভিডিওচিত্র ধারণ করলে নিরাপত্তাকর্মী বারবার অনুরোধ করেন ভিডিও ডিলিট করার জন্য।

প্রতিবেদক ভিডিও ডিলিট করতে অস্বীকৃতি জানালে নিরাপত্তাকর্মী আফজাল ফোন করেন স্কুলের প্রধান অফিস সহকারী আতাউর রহমানকে। ফোন করেন আরও কয়েকজনকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই উপস্থিত হন আতাউর। গণমাধ্যমকর্মীদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে অফিস সহকারী দাবি করেন, প্রতিষ্ঠানটির আশপাশে প্রতিদিনই মশক নিধনের ওষুধ ছিটানো হয়।

এ সময় অফিস সহকারীকে স্কুলের ছাদে যেতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। তিনি ছাদে যাওয়ার অনুমতি দেন। অফিস সহকারী ও নিরাপত্তা কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ছাদে গিয়ে দেখা যায়, ছাদের বিভিন্ন অংশে পানি জমে আছে।

এ সময় অফিস সহকারী বারবার নিরপত্তাকর্মীকে উদ্দেশ করে বলতে থাকেন, ‘ভালো কইরা সব পরিষ্কার করবি, সব। নিজেরা না পারলে লেবার নিবে। আপারে (প্রধান শিক্ষক) বলবি।’

জমাটবদ্ধ পানির ছবি তুললে ও ভিডিওচিত্র ধারণ করলে অফিস সহকারী আতাউর এই প্রতিবেদককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘পরিষ্কার পানির ছবি তুলতেছেন ক্যান আপনি?’

এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির একটি নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন তলায় পানি জমে থাকার চিত্র দেখা যায়। এ ছাড়া পুরো স্কুল প্রাঙ্গণ স্যাঁতস্যাঁতে, যা মশক প্রজননের উপযোগী পরিবেশ হিসেবে বিবেচিত।

এরপর আরও একজন দেখা করেন ঢাকা টাইমসের সংবাদকর্মীদের সঙ্গে। তিনি নিজেকে স্কুলের শিক্ষক পরিচয় দেন। প্রতিবেদকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি বলেন, ‘আপনি লার্ভা চিনবেন না। আর আপনারা স্কুলে আসবেন, আমাদের জানিয়ে আসবেন না! আমাদের এখানে জনবল কম থাকার কারণে দুই-এক জায়গায় লিকেজ থাকতে পারে। এটা রিপোর্ট করার মতো কিছু না।’

এখানে বাইরের লোক অনুমতি ছাড়া আসতে পারে না বলে জানান ওই শিক্ষক। এ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মূল ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে বাইরের লোকজন ধূমপান করছে, অবাধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে যাতায়াত করছে। সেদিকে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি প্রসঙ্গান্তরে ভিডিও চিত্রটি ডিলিট করার জন্য এবং এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন।

এ বিষয়ে জানতে বুধবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেসার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। আজ বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেসা দাবি করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি অনেক বড়। এখানে মশক নিধনে সিটি করপোরেশন নিয়মিত ওষুধ ছিটায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষও কাজ করছে।

পাশের যে সিটি করপোরেশন অফিস, তারা সপ্তাহে দুবার এসে মশক নিধনের ওষুধ দিয়ে যায় উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘চার দশমিক দুই এক একর জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। এখন দুই-একটা জায়গায় আপনারা কিছু পেতে পারেন। আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে অনেক লোকজন থাকে। কিন্তু তারা কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়নি।’

সিটি করপোরেশন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পাশ দিয়ে যে রাস্তা নির্মাণ করেছে তার কারণে স্কুল মাঠের পানি সরছে না বলে জানান প্রধান শিক্ষক। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনো স্থির পানি নেই বলে দাবি করেন তিনি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরের অংশে বিভিন্ন পাত্র ও নির্মাণাধীন ভবনে পানি জমে থাকার বিষয়টি তাকে জানানো হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের আরও সচেতন হওয়া দরকার। আমরা আরও সচেতন হব। আমরা আমাদের লোকজনকে দায়িত্ব দিয়েছি। আজকেও তারা অনেক কাজ করেছে। নির্মাণাধীন ভবনের কন্টাক্টরের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, তারা এখন থেকে প্রতিদিন খেয়াল রাখবেন। আপনারা যদি কিছু পেয়ে থাকেন, আমরা সেটারও সমাধান করে ফেলেছি।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসের মাধ্যমে মশক নিধনের ওষুধ ছিটানো হয় বলে জানিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে জানতে ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাহবুবুল আলমকে বুধবার ও বৃহস্পতিবার একাধিকববার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এদিকে নগর ভবন বলছে, কোনো ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান বা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভেতরের অংশে মশক নিধনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের না।

সাম্প্রতিক ডেঙ্গু পরিস্থিতি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আরও ২৭০ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মোট ১ হাজার ২৩৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১ হাজার ১৪৫ জন ও অন্যান্য বিভাগে ৯৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।

এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ৭ হাজার ২৫১ জন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৮২ জন রোগী।

(ঢাকাটাইমস/২০আগস্ট/ মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :