জলবায়ু পরিবর্তন: ‘অতি উচ্চ মাত্রার’ ঝুঁকিতে বাংলাদেশের শিশুরা

প্রকাশ | ২০ আগস্ট ২০২১, ১৬:৫০ | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২১, ১৮:৩৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশের শিশুরা ‘অতি উচ্চ মাত্রার’ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে শিশুদের উন্নতি ও নিরাপত্তায় কাজ করা জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ।

শিশুরা অতি ঝুঁকিতে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশ হলো- আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান।

এই অঞ্চলে খরা, বন্যা, বায়ু দূষণ ও নদী ভাঙনের কারণে লাখ লাখ শিশু গৃহহীন ও ক্ষুধার্ত এবং কোনো স্বাস্থ্যসেবা ও পানিবিহীন অবস্থায় রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯ মহামারি একসঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার শিশুদের জন্য একটি উদ্বেগজনক সঙ্কট তৈরি করেছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ।

সংস্থাটি বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনে এসব দেশের শিশু ও তরুণদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুরক্ষা হুমকির মুখে পড়েছে।

শুক্রবার ‘জলবায়ু সংকট কার্যত শিশু অধিকারের সংকট’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) প্রবর্তন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। এই সূচক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান শিশুদের জন্য ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশের তালিকায় পড়েছে। 

এই সূচকে ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ৩৩টি দেশে বসবাস করে প্রায় ১০০ কোটি শিশু।

জলবায়ু ও পরিবেশগত অবস্থা এবং তাতে শিশুদের ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে শূন্য থেকে ১০ ভিত্তিক স্কেলে ঝুঁকির মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই দুই নির্ণায়ক মিলিয়েই তৈরি হয়েছে শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকি সূচক।

তালিকায় পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও ভারত– দক্ষিণ এশিয়ার এই চার দেশ জলবায়ু সঙ্কটে শিশুদের জন্য ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকি’তে আছে। সূচকের ১৬৩ দেশের মধ্যে ঝুঁকির দিক দিয়ে পাকিস্তান আছে ১৪ নম্বরে। আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চদশ; আর ভারত ২৬ নম্বরে।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে নেপাল ৫১ এবং শ্রীলঙ্কা ৬১তম অবস্থানে রয়েছে ঝুঁকির বিচারে। আর ভুটান রয়েছে ১১১তম অবস্থানে, যেখানে শিশুরা কিছুটা কম ঝুঁকিতে।

এই সূচকে যে দেশের পয়েন্ট যত বেশি, সেই দেশের শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তত বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।

ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ১৮০ কোটি জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বয়স ২৪ বছরের নিচে জানিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক জর্জ লারিয়া-আদজেই বলেন, ‘প্রথমবারের মত দক্ষিণ এশিয়ার শিশুদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের স্পষ্ট প্রমাণ আমরা পেয়েছি।’

দক্ষিণ এশিয়ার শিশুরা বন্যা ও বায়ু দূষণের কারণে বিপদের মধ্যে রয়েছে জানিয়ে ইউনিসেফে এই প্রতিবেদন বলছে, একটি বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার আগেই তারা আরেকটি বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে, যা অর্জিত সব অগ্রগতিকে উল্টে দিচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত ৩৩টি দেশ বিশ্বজুড়ে নিঃসরিত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্র ৯ শতাংশের ভাগীদার। অন্যদিকে, মাত্র ১০টি দেশ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের ৭০ শতাংশের জন্য দায়ী।

জলবায়ু পরিবর্তনের এই সংকট থেকে সুরক্ষা দিতে শিশুদের সুরক্ষা দিতে মহামারি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া যেন পরিবেশবান্ধব, স্বল্প-কার্বন নির্ভর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় তা নিশ্চিত করতে সরকার, ব্যবসা খাত ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।

একইসঙ্গে শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও শিক্ষার পেছনে আরও বেশি বিনিয়োগ করা হলে তা জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শিশুদের সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

ঢাকাটাইমস/২০আগস্ট/ইএস