ডিভোর্স, দুধে গোসল ও চাঁদের কথা

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
 | প্রকাশিত : ২২ আগস্ট ২০২১, ২০:১৬

স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর্দা টেনেছেন এক ব্যক্তি। টানতেই পারেন। আইনে তো বাধা নেই। প্রেমের বিয়ে ছিল। তাতেও ক্ষতি কী? প্রেমের বিয়ে বলে কি অক্ষয়? তা নয়। যুগলজীবনে সুখ ছিল না। না-ই থাকতে পারে। তা ছাড়া সুখ-দুঃখ আপেক্ষিক। কারো কাছে আহার সুখের। কারো জন্য দুঃখেরও। মৃত্যুও কারণ হতে পারে।

নাম তার অমিত রাজ। ভালো। নামে কী আসে যায়। স্ত্রীর নাম টুম্পা। মিষ্টি তো! অমিত রাজনীতি করেন। যুবলীগের। করতেই পারেন। মানুষ রাজনৈতিক জীব। রাজনীতি করলে অপরাধ কী? অমিতের বাড়ি মির্জাপুর, টাঙ্গাইলের। বাহ্! মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ, রণদা প্রসাদ সাহা, শামছুল হক, নরেশ গুহের বিখ্যাত টাঙ্গাইল। সেই জেলার সন্তান হওয়া তো গর্বেরই। টুম্পার বাড়ি সখিপুরে্। তাও টাঙ্গাইলে। বেশ তো।

ঘটনা কী? ওই যে বললাম, বিচ্ছেদ। আরে এ আর নতুন কী? নতুন? আছে। বাঁশতৈল ইউনিয়নে অমিত রাজ তো ভাইরাল। কীভাবে? ফেসবুকে। ঘুরঘুর করছে ছবি, ভিডিও। কেন? সেটাই তো ঘটনা। দুধ দিয়ে গোসল করেছেন। মানে? হ্যাঁ, হাতিবান্ধা ইউনিয়নের টুম্পাকে ছেড়ে নাকি উদ্ধার হয়েছেন। উদ্ধার হয়েছেন? কী থেকে? বিপদ থেকে। অমিত নাকি একা নন। পরিবারসহ বিপদ থেকে বেঁচেছেন! পাপমুক্ত হয়েছেন! তাই গো-দুধে গোসল সেরে ঘরে ওঠা! গোসলের সেই ভিডিও, ছবি ভাইরাল। দাদি তার মাথা ঢালছে দুধ। খুশি আছে অমিত। বলছে তার হাসি।

সংবাদে প্রকাশ, চার বছর আগে এভাবে হেসেছিল অমিত। ঘরে তুলেছিল টুম্পাকে। নাতবধূ বরণও করেছিলেন দাদি! (সম্ভবত। কারণ গ্রামে মুরব্বিরা এই কাজে বরাবরই প্রথম সারিতে)। সেই দাদি এবার নাতিকে বরণ করছেন। নাতবউকে বিদায় করায়!

এমনি এমনি ডিভোর্স হলো? না। তিন লাখ নাকি গুনে নিয়েছেন টুম্পা। বিনিময়ে টুটে গেছে বাঁধন। কিন্তু! হ্যাঁ, একটা কিন্তু আছে এখানে। বলছি।

বউকে বিদায় করেছেন অমিতি। ‘পাপমুক্ত হয়েছেন’, তার ভাষায়, ‘বিপদ কেটেছে’। তাই খুশি। টুম্পা? তিনি কেমন? তার ছবি তো ভাইরাল হয়নি। তাই বলাও যাচ্ছে না। তিনিও নিশ্চয় খুশিই হবেন। অমিতদের ভাষায়, যা চেয়েছেন। তাই পেয়েছেন।

চাঁদ কী খুশি? কোন চাঁদ? আকাশের? না। তাহলে? অমিত-টুম্পার শিশুটা। তারিয়ান চাঁদ। মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে নিয়েছে বাবা। আইনের বলে, বাবা পেয়েছেন চাঁদকে। মা গেছেন শূন্য হাতে।

খেয়াল করুন, ‘বিপদ’ বিদায় করে অমিতের মন প্রফুল্ল। হয়তো টুম্পাও বেঁচেছেন কোনো ‘বিপদ’ থেকে। চাঁদ? ওর কী হলো? ওর কথা কি কেউ ভেবেছে? ওর শিশুমন? কী হচ্ছে সেখানে? কী চাচ্ছে? একবার জানতে চেয়েছে কেউ? একদিকে মা, অন্যদিকে বাবা। কে প্রিয়? কে আপন? কে কাছের? কে দূরের?

কল্পনা করুন তো, একটা অনন্তকালের দেয়াল উঠল অরণ্যে। আকাশ ছোঁয়া। হঠাৎ করেই। আকাশটাও দুভাগ হলো। বাবার সঙ্গে উড়ে উড়ে দূরে আসা একটা পাখির ছানা। আটকে গেল দেয়ালের এপাশে। ওপাশে তার মা। দেয়াল কি বোঝে পাখি? ও তো ব্যাকুল হবেই মায়ের কোলে ফিরতে। বাবা-মায়ের ডানায় আগলে রাখা বাসাটায় যেতে। ছটফট করা পাখিটা যদি চাঁদ হয়?

বাবার বুকে থাকলে মা তার দূর অস্ত। আবার মায়ের ‍বুকে ফিরলে পাবে না বাবার ঘ্রাণ। যুগল জীবনের বিচ্ছেদ মানা যায়। অমিত-টুম্পা মেনেও নেবেন তাই। চাঁদ? মায়া-মমতার বিচ্ছেদ ওর শিশুমন সইবে কী করে? মাতৃক্রোড় হারানোর বেদনা কি অমিত জানেন? আর টুম্পা?

জীবনের গোড়াতেই সন্তানে কোমলমনটাকে দুমড়ে মুচড়ে দিলেন বাবা-মা? বলবেন, সমাজে তো হরহামেশাই ঘটছে। এ আর এমন কী! হ্যাঁ, ঘটছে। অমিত-টুম্পা একা নন। অসংখ্য। কিন্তু চাঁদের মতো শিশুমনের অনন্ত আকাশটা? তার কী হয়? টুকরো টুকরো হয়। নেমে আসে মাথার কাছে। ছোট হয়ে আসে শিশুর পৃথিবী। এই দায় কি জন্মদাতা-জন্মদাত্রীর নয়?

........................

২২ আগস্ট ২০২১

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :