রাজনীতিতে দেশপ্রেমিক আর মহৎ মানুষেরা পুনর্বাসিত হোক

আজিজুল আম্বিয়া
 | প্রকাশিত : ২৪ আগস্ট ২০২১, ১৬:১৪

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান তেজস্বী কর্মে আজও ইতিহাসের মহানায়ক হয়ে আছেন। কর্মগুণে আজও তারা দেশপ্রেম ও রাজনীতির রোল মডেল হয়ে আছেন এবং থাকবেন আজীবন। তাদের কাছ থেকে রাজনীতি আর দেশপ্রেমের দীক্ষা গ্রহণ করার আছে আমাদের। সৃজনশীল ও মননশীলতা না থাকলে যেমন ভালো লেখক হওয়া যায় না, তেমনি রাজনীতিবিদরা জীবনে শিক্ষা, দেশপ্রেম, সততা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে একজন ভালো রাজনীতিবিদ হওয়া যায় না। আজকে এই বিষয়গুলোর অনুপস্থিতির কারণে রাজনীতির মাঠে যে নেতাদের বিচরণ তাদের নেতৃত্বগুণ প্রশ্নের মুখে পড়ে।

দেশপ্রেমের কারণে একজন বর্ণাঢ্য রাজনীতিবিদের ছেলে হয়েও শেখ কামাল গিয়েছিলেন স্বাধীনতার যুদ্ধে এবং এডিসি হয়েছিলেন জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর। এই বয়সে দেশের জন্য তার এই ত্যাগের কী কারণ ছিল? শুধুই দেশপ্রেম। আর আজকে সম্রাট, পাপিয়া, সাবরিনা, হেলেনাসহ অনেকের নাম আসে যারা রাজনীতির নামে আমাদের এক পাহাড় হতাশা উপহার দিয়েছেন। কিন্তু আশার কথা, এদের বিচরণ বেশি দিন টেকেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোরতায় এই আলো-আঁধারির খেলোয়াড়দের আমরা চিনতে পেরেছি। তারা রাজনীতির মাঠ থেকে বিতারিড়ত হয়েছেন।

আজকে বাংলাদেশে যে দুর্নীতি, দেশবিরোধী চক্রান্ত চলমান এটি একদিনে শেষ হওয়ার নয়। বর্তমান সরকার এ বিষয়ে অভিযান শুরু করেছে, তাই সাধুবাদ দিতে হয়। সত্যের কাছে মিথ্যা পরাজিত হয়, তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার দীর্ঘদিন পরে হলেও এর বিচার হয়েছে। আজকে তারই আদর্শের জয়গান শুনি চারদিকে।

কিন্তু দুঃখজনক হলো, আজ সেই আদর্শিক মানুষটি আমাদের মাঝে নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে হারাতে চাই না আমরা। বাংলাদেশকে আর অভিভাবকহীন দেখতে চায় না এ জাতি। মীর জাফর কিন্তু ঘরের লোকই হয়। আপনি যাদের নেতা বানানোর দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা কি শুনছেন আপনার সব কথা? তাহলে কেন পাপিয়া, সম্রাট, হেলেনা জাহাঙ্গীরের মতো মানুষকে আমরা আপনার দলে নেতার পরিচয়ে দেখতে পাই?

আজকে আপনার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা প্রিয় মুখ খুঁজতে কেন মাঝে মাঝে ব্যর্থতার পরিচয় দেন? কেন তাদের সময় হয় না সাধারণ নেতাকর্মীর কথা শোনার? কথা শুনলেও কেন গ্রুপিং-লবিংকে গুরুত্ব দিয়ে অনেক ত্যাগী নেতাকে অবমূল্যায়ন করা হয়?

আর পদবাণিজ্য তো একটা বহু পুরনো অভিযোগ, আড়ালে রয়েই যায়। বর্তমানে আরেকটি বড় রোগ হয়েছে অনেক নেতাদের, এ রোগের নাম চামচামি। এই রোগে অনেক বড় বড় নেতাও আসক্ত। যে কর্মীরা চামচামি করে, ওনারা মনে করেন সে-ই তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে, দলকে এখানে মুখ্য মনে করেন না। তাই দলের পদপদবি সহজে চামচারা নিয়ে নিতে সক্ষম হয়।

এই ভুল সিদ্ধান্তে চলে আসে দলের ওপর এক অনৈতিক নেতৃত্ব। মেনে না নিয়ে উপায় নেই তাই যোগ্যরা মূল্যায়নের অভাবে একসময় হারিয়ে যায়। আর চামচামি করে পদ পাওয়ারাই একদিন মোস্তাক হয়, হয় অহংকারী। কারণ যোগ্যতার চেয়ে তাদের প্রাপ্তি বেশি। তাই দলের স্বার্থে এসব আবর্জনাসম নেতাদের প্রত্যাহার করে দেশপ্রেমিক ও দলপ্রেমিক নেতাদের পুনর্বাসন করলে অভ্যন্তরীন ষড়যন্ত্র বন্ধের সুরাহা হতে পারে।

একজন রাজনীতিবিদকে অবশ্যই বুঝতে হবে একটি জাতির অধিকার, সংস্কৃতি, ধর্ম ও কৃষ্টি ও কালচার। আর এসবের কোথাও সমস্যা থাকলে সমাধান করার মতো সৎসাহস থাকতে হবে, করতে হবে সমাধান। আর এসবের সমাধান করতে পেরেছিলেন বলে শেখ মুজিবুর রহমান হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি মরে গিয়েও অমর।

একজন নেতাকে দেশের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে, নিজস্ব ক্ষমতার বলে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে এবং অবশ্যই তাকে এই দেশের জনগণের জন্য জনকল্যাণমূলক কাজ করে যেতে হবে ব্যক্তি উদ্যোগে। আমরা ভাগ্যবান যে তিতুমীরের মতো আমাদের আজকে বিদেশি বিরাট শক্তির বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে হচ্ছে না। আজকে আমরা সক্ষমতা অর্জন করেছি যেকোনো শক্তির মোকাবিলার, তাই সহজেই আমরা আক্রমণের প্রতিবাদ করতে পারি। এখন শুধু দরকার প্রকৃত দেশপ্রেমের।

কিন্তু এটির অভাবেও এত দিন অনেকটা পিছিয়ে ছিলাম। কিন্তু আজ দিন বদলেছে, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা এসেছে, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনার দেশ। দেশীয় উন্নয়নের পাশাপাশি আমরা মহামারিও মোকাবিলা করতে পারি নিজস্ব অর্থায়নে। বিশ্বব্যাংককেও আমরা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্মাণ করতে পেরেছি স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বকে জানিয়ে দিলাম মহাকাশে আমরাও আছি সহাবস্থানে। তাই এখন দেশপ্রেম হবে আমাদের প্রেরণার উৎস।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দুঃস্বপ্নের আগস্ট যেন বারবার না আসে, তাই নীতিহীন নেতাদের খুঁজে বের করতেই হবে? দখলদার অনেক নেতা এখনো বহাল, দল থেকে রাজনীতির নানান সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। তাই রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা আর থানা পর্যায়ে এদের চিহ্নিত করুন নিজস্ব এবং বিশ্বস্ত একটা বাহিনীর মাধ্যমে। এ ছাড়া দলের বৈদেশিক যত শাখা রয়েছে, সেখানেও অনেক আগাছা নেতা সেজে আছেন। ওনারা এখন খ্যাতির খাদক বনে গেছেন। তাই অন্যের অর্জনকে নিজেদের বলে পরিচয় দিতে দ্বিধাবোধ করেন না। তাই সময় এসেছে এসব মুখোশধারীর বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়ার। কারণ এখনো আল জাজিরার মতো মিডিয়াকে দেখি আপনার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যতিব্যস্ত।

কী তাদের স্বার্থ? বা কাদের হয়ে তারা লড়ছে? নতুবা আপনার সরকারের পজিটিভ খবর তারা করছেন না কেন? এই অবস্থার প্রতিরোধে কী ভূমিকা রাখছেন আপনার দলের নেতারা? যারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন লিখনীর মাধ্যমে তারা কলম সৈনিক, কিন্তু কালেভদ্রে হয়তো তারা সম্মানীত হতে পারেন। আজকে বিদেশে বসে ইলিয়াছ গংরা কী চায়? তারা আপনার সরকারের বিরুদ্ধে উঠে-পড়ে লেগেছে। কিন্তু তারা তো বিরোধী দল নয়? তবে কেন সরকারবিরোধী এই এজেন্ডা। কথিত নুর আজকে বিশ্বের মানুষের কাছে সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনায় আসছে, কিন্তু খোঁজ নিন তাদের উদ্দেশ্য কী? শুধুই সমালোচনা? নাকি অন্য কিছু?

বর্তমান অবস্থায় দেশবিরোধী যে কাজ চলছে এর মূল কারণ কী? কারণ একটাই- প্রকৃত দেশপ্রেমের অভাব। নতুবা আমরা কেন দেশের পজিটিভ বিষয় নিয়ে আসতে পারি না? তাই এই সময়ের বাস্তবতায় দেশপ্রেমিক নেতা ও দেশপ্রেমিক জনতার বিকল্প নেই।

বিশ্বনেতারা ভাবছেন বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। সেখানে আমরা কেন নিজেদের আরও এগিয়ে দেব না! তাই আসুন আমরা হাতে হাত রেখে শপথ করে এগিয়ে যাই স্বপ্নের চেয়ে বড় একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে। এগিয়ে আসতে হবে বুদ্ধিজীবীদেরও। আর সঙ্গে থাকতে হবে রাজনীতিবিদদের উদার মন-মানসিকতা।

লেখক: কলামিস্ট।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :