রংপুরের মৃত তিস্তা ফিরে পেল প্রাণ

নিশাত ইসলাম, রংপুর
| আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২১, ১৩:২৪ | প্রকাশিত : ২৮ আগস্ট ২০২১, ১৩:২২

প্রায় দুইশ বছর পর প্রাণ ফিরে পেল রংপুরের তিস্তা নদী। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া নদীটি উদ্ধার করেছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। জলের আঁধার, পানির উৎস এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদীটি ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর নদী গবেষকরা বলছেন, দেশে নদী উদ্ধারে মরা তিস্তা দৃষ্টান্ত হতে পারে।

স্থানীয় কৃষক জামাল উদ্দিন জানান, নদীটির কোন প্রবাহ ছিলনা। পুরোটাই দখলে চলে গিয়েছিল। খননের ফলে এখন প্রবাহ ফিরেছে। নদীর দুই পারে বনজ ও ফলজ গাছ লাগানোর কাজ চলছে। বর্ষায় পানিতে ফুলে ফেপে উঠেছে নদীটি। নদীটি হারিয়ে যাওয়ায় এখানকার শতাধিক জেলে সম্প্রদায় পেশা পাল্টেছে। তবে এখন তারা খুশি। এখন মাছ ধরেই জীবিকা চালাতে পারবেন তারা। আবার অনেকেই হাঁস পালন করছে নদীটিকে ঘিরে।

১৭৭৬ সালের রেনেল মানচিত্রে প্রদর্শিত তিস্তার একটি শাখা পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার দক্ষিণাংশ থেকে প্রবাহিত হয়ে বর্তমান নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। নদীটি নীলফামারী জেলা অতিক্রম করে রংপুর জেলার তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মিঠাপুকুর উপজেলার শেষভাগে করতোয়া নদীর সঙ্গে মিলিত হতো। রেনেল মানচিত্রে এ নদীকে তিস্তা নামেই উল্লেখ করা হয়েছে। ১৭৮৭ সালে ভূমিকম্প ও ভয়াবহ বন্যার ফলে তিস্তা তার গতিপথ পরিবর্তন করে। এ শাখা নদীটিও তিস্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কালের বিবর্তনে শাখা নদীটির তিস্তা নামটি বিলুপ্ত হয়ে এলাকাভিত্তিক দেওনাই, চাড়ালকাটা ও যমুনেশ্বরী নামে পরিচিতি পায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দখল হতে থাকে নদীটি। এক সময় মানুষের বসতভিটা, পুকুর, ধানী জমি, গো-চারণভূমিতে পরিণত হয়। আগে বন্যার সময় এটি চিকলী ও যমুনেশ্বরী নদীপ্রবাহের সমতা বজায় রাখত। সে প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতি বছর উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধতা ও বন্যাকবলিত হয়। এছাড়াও বন্যার সময় চিকলী নদীর পানি নিষ্কাশনের অভাবে বদরগঞ্জ উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে মানুষের বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করে।

বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের (ইআইআরপি) মাধ্যমে খাল, ছোট নদী খনন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বদরগঞ্জের হারিয়ে যাওয়া মরা তিস্তা নদীর প্রবাহ এলাকা শনাক্ত করে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাস ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ নদীটি খনন করা হয়। উৎসমুখ চিকলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত করে বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ, সর্দারপাড়া, বানিয়াপাড়া, কুমারপাড়া, শংকরপুর, ঝাড়পাড়া, সরকারপাড়া, কালুপাড়া ও বৈরামপুর অতিক্রম করে কুতুবপুর ইউনিয়নের কাঁচাবাড়ীর পূর্বদিকে কুঠিপাড়া ঘাটের কাছে যমুনেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়। এতেই প্রাণ ফিরে পায় মরা তিস্তা নদী।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বলেন, মরা তিস্তা খননের ফলে ওই এলাকা কৃষিসহ আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। পাঁচ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। ফলে দারিদ্র্যতা অনেকটা কমে যাবে।

নদী গবেষক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, দখলে যাওয়া নদী যে উদ্ধার করা যায় মরা তিস্তা হলো তার উজ্বল উদাহরণ। এছাড়াও নদীতে প্রাণ ফিরে পাবার মধ্য দিয়ে ওই এলাকার জীব বৈচিত্র্য, প্রকৃতির ভারসাম্য এমনকি অর্থনৈতিকভাবেও সমৃদ্ধি আসবে।

(ঢাকাটাইমস/২৮আগস্ট/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :