পাবনার বন্যা পরিস্থিতি নজরে নেই কর্তৃপক্ষের!

এম মাহফুজ আলম, পাবনা
 | প্রকাশিত : ৩০ আগস্ট ২০২১, ১৬:৩৯

পাবনায় চলমান বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। পদ্মায় পানি বৃদ্ধিতে পাবনা সদর উপজেলার বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী পাবনার বেড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা এখন পানিবন্দি। আর পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি হওয়ায় পাবনা সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।

পাবনা হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা নদীতে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছালেও গত কয়েকদিন নদীর পানি দ্রুত গতিতে কমছে।’

সোমবার পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহকারী পরিচালক মো. মোশারফ হোসেন এই প্রতিবেদককে জানান, পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, যমুনার মথুরাপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং বড়াল পয়েন্টেও উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

তবে পদ্মায় পানি কমলেও ঈশ্বরদী ও পাবনার চরাঞ্চলের পানিবন্দি এলাকাগুলো থেকে পানি নামতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানান পাউবোর সহকারী পরিচালক। পাবনার বন্যা কবলিতদের বিষয়ে কোনো হিসাব নেই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে।

জানতে চাইলে পাবনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘নদনদীতে পানি বাড়লেও বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির কোনো রিপোর্ট আমাদের কাছে আসেনি।’ বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে বলে তিনি দাবি করেন।

এদিকে ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের বন্যায় ঈশ্বরদীর নিচু এলাকা পানিতে ডুবে যায়। পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার লক্ষিকুন্ডা, সাঁড়া ও পাকশী ইউনিয়নের আংশিক এলাকায় ফসলের জমিতে পানি ঢুকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পদ্মার পানি প্রতিদিন প্রায় ১২ সেন্টিমিটার করে বাড়তে থাকে। এতে ১৭ আগস্ট থেকে পানি সাঁড়া ইউনিয়নের নদীর চরের চরধাপাড়ীর চর পানিতে ডুবে যায়।

পাশাপাশি নদীর বাম তীরের বাঁধের নিচু এলাকা দিয়ে বাঁধ উপচে পানি লোকালয় ও ফসলি জমিতে ঢুকে। লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের কামালপুর, বিলকাদা, চরকুড়ুলিয়া গ্রামের মূলা, কলা, মাসকালাই, মিষ্টি কুমড়া ও করলা ক্ষেতে পানি ঢুকে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল লতিফ জানান, এবারের বন্যায় ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী, লক্ষিকুন্ডা ও সাঁড়া ইউনিয়নে ৯২৬ হেক্টর জমির মরিচ, শাকসবজি ও মাসকালাইয়ের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এর মূল্য সরকারি হিসাব মতে ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

চলনবিল অধ্যুষিত পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পদ্মা ও যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে এ অঞ্চলের বড়াল, গুমানী, চিকনাই নদীর পানি বেড়েছে। গুমানী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বন্যাকবলিত নিচু এলাকাগুলোর মানুষ। উপজেলার নিমাইচড়া, হান্ডিয়াল, বিলচলন, হরিপুর ও ছাইকোলা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল এখন পানির নিচে। টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার একাধিক ফসলের মাঠ। পৌর এলাকার মহল্লায় মহল্লায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

বন্যায় গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে গেছে, ডুবে গেছে রোপা আমন ধান। গরুর চারণ ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে গরুর খাদ্যের তীব্র সংকট। চাটমোহর পৌরসভার নিচু এলাকায় বন্যার পানি ঢুকেছে। পৌর মেয়র সাখাওয়াত হোসেন সাখো শুক্রবার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে যমুনাসহ সবগুলো নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে এ এলাকার আমন ধান ও সবজি খেতসহ ফসলের মাঠ।

(ঢাকাটাইমস/৩০আগস্ট/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :