ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা: ২১৪ পরিবারের অসহায় জীবনযাপন

এস কে রঞ্জন, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
 | প্রকাশিত : ৩০ আগস্ট ২০২১, ১৮:৪০

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নে প্রক্রিয়াধীন পায়রা সমুদ্র বন্দরের ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতায় আটকে ২১৪ পরিবার স্থায়ী সম্পত্তি ও পৈত্রিক বসতবাড়ি হারিয়ে এখন অসহায়, মানবেতর জীবনযাপন করছে।

সরকারের সিদ্ধান্ত ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে একাত্মতা পোষণ করে শত বছরের পৈত্রিক সম্পত্তি ছেড়ে দিয়েছেন তারা। এখন ভূমি অধিগ্রহণের টাকা ও পুনর্বাসনের জন্য পটুয়াখালী ভূমি হুকুম দখল শাখা ও পায়রা বন্দর পুনর্বাসন প্রকল্প ডরপের পেছনে ঘুরে বেড়াচ্ছে আসহায় পরিবারগুলো। প্রায় ১০০ পরিবার বেড়িবাঁধের বাইরে খুপরি ঘর করে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়া গ্রামে একসময় যাদের গোলা ভরা ধান আর গোয়াল ভরা গরু ছিল। আজ তারা সব হারিয়ে বেড়িবাঁধের বাইরে খুপরি ঘর করে আশ্রয় নিয়েছেন। ভূমি হুকুম দখল শাখা পটুয়াখালী ও পায়রা বন্দর পুনর্বাসন প্রকল্প ডরপে এক শ্রেণির দালাল চক্রের কারণে বিভিন্ন মামলার জটিলতায় ভুক্তভোগী ২১৪ পরিবার।

এই পরিবারগুলো বসতবাড়ির টাকা পেলেও তাদের কপালে জোটেনি আবাসনের ঘর। এদের মধ্যে বেড়িবাঁধের বাইরে যারা বসবাস করছে তাদের করুন অবস্থা। নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ যখন অসহায় তখন বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাস করা মানুষগুলোর দুর্ভোগের শেষ নেই।

জোয়ারের পানি এলে খুপড়ি ঘর ডুবে যায়। তখন পরিবারের সদস্যরা চাড়িপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে আশ্রয় নেয়। বেশিরভাগ সময় অনাহারে দিন কাটায়। উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়া, নয়াকাটা, হাসনাপাড়া ও বানাতিপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে ভূমি অধিগ্রহণে সর্বস্বহারা মানুষগুলোর চিত্র একই রকম।

অধিগ্রহণে সব হারানো চান মিয়া, আকবর ফকির, বাবুল মিয়া, মোসারেফ হাওলাদার, রিমন হাওলাদারসহ আরও অনেকে বলেন, একটি দালাল চক্র মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের জমির টাকা আটকিয়ে রাখছেন। একদিন আমাদের সব ছিল এখন অমাদের কিছু নাই। আমরা বেশ কিছু পরিবার বেড়িবাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের মধ্যে আনেকের কাছ থেকে ডরপের মাঠকর্মীরা আবাসনে ঘর দেয়ার জন্য দুই বার কাগজপত্র জমা নিয়েছে। তবুও আমরা ঘর পাইনি।

অধিগ্রহণে সব হারানো রাহিমা বেগম, মলিনা বেগম, লাবলী বেগমসহ আরও অনেকে বলেন, দেখে যান আমাদের এই হলো বাদশাহী জীবনযাপন, বন্দরের লোক বলছে আবাসনে ঘর দিয়া আমাদেরকে নামাবে, ঘর না দিয়া রাতের আঁধারে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। ডরপের লোকজনকে যারা টাকা দিতে পারে তারাই ঘর পায়, আমরা টাকা দিতে পারি না তাই ঘর পাই না।

পরিবার নিয়ে এখন আমরা বেড়িবাঁধের বাইরে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের দাবি, তার কথায় আমরা সব দিয়েছি, এখন আমরা জমির টাকাও পাই না এবং আবাসনও পাই না। আমরা থাকবো কোথায়। খাবো কী?, সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রশ্ন এসব ভুক্তভোগীর।

লালুয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রবিউল ইসলাম বলেন, এই পরিবারগুলো খুব অসহায়, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যতুটুকু ত্রাণ পেয়েছি তা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা মানুষগুলোর একটা ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে আমি বিনীত অনুরোধ করছি।

পায়রা বন্দর পুনর্বাসন প্রকল্প ডরপের ডেপুটি টিম লিডার গোলাম সরোয়ার টিপু বলেন, ‘অধিগ্রহণকৃত পরিবারদের প্রতি আমার অনুরোধ- ডরপের কোনো মাঠকর্মী অথবা কর্মকর্তা অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে থাকলে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিন। যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’

লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, সংঘবদ্ধ দালালচক্র মিথ্যা বানোয়াট জালজালিয়াতি করে বিভিন্ন মামলা দিয়ে এই মানুষগুলোকে হয়রানি করে আসছে। বসতবাড়ির টাকা পেলেও মামলা থাকার কারণে তারা অধিগ্রহণের টাকা এবং পুনর্বাসনের ঘর পায়নি।

পটুয়াখালী ভূমি হুকুম দখল শাখা কর্মকর্তা মো. আল ইমরান বলেন, ‘মামলা চলমান থাকা অবস্থায় আমরা অধিগ্রহণকৃত টাকা দিতে পারি না।’

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) ও যুগ্ম সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ খান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মামলা জটিলতার কারণে যে পরিবারগুলো এখন পর্যন্ত আবাসন পায়নি তাদের মামলা দ্রুত সমাধান করে পুনর্বাসিত করা হবে।’

(ঢাকাটাইমস/৩০আগস্ট/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :