জালিয়াতি: ঠিকাদারের লাইসেন্স স্থগিতের সিদ্ধান্ত ভিত্তিহীন দাবি

গাইবান্ধা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩১ আগস্ট ২০২১, ১৯:০৩

সম্প্রতি জোহা অ্যান্ড সন্স ও নুহা ট্রেডার্স নামে দুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের প্রদত্ত শর্তাবলী ভঙ্গ করায় তাদের লাইসেন্স নবায়ন স্থগিত করে চিঠি দিয়েছে গাইবান্ধা পৌরসভা।

তবে এই দুই প্রতিষ্ঠান পৌর কর্তৃপক্ষের চিঠিকে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট দাবি করে পুনরায় লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পৌর মেয়র বরাবর আবেদন করেছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল হক।

এ বিষয়ে পৌরসভা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেলেও পৌর কর্তৃপক্ষ তা বিধিসম্মত নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

আবেদনে বলা হয়, পৌর কর্তৃপক্ষ আইন বহির্ভুত ভিত্তিহীন অজুহাত দেখিয়ে লাইসেন্স নবায়ন না করা সংক্রান্ত যে চিঠিটি পাঠিয়েছেন তা আইনের পরিপন্থি ও ব্যক্তিগত আক্রোশের জের প্রতিষ্ঠিত করার অভিপ্রায় মাত্র। ভিত্তিহীন যুক্তি প্রদর্শন করে প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন না করে চিঠি দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ বেআইনি। এতে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

এছাড়াও দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কৃতকার্য হওয়ার পর নির্মাণসামগ্রীর ল্যাব টেস্টসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার দায়িত্ব ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের। এবং কাজের গুণগতমান নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটিও প্রতিষ্ঠান দেখে থাকে। কাজ বাস্তবায়নে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম কিংবা সিডিউল বহির্ভুত কাজ পরিলক্ষিত হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। এমনকি চূড়ান্ত বিল দেয়ার আগে কাজ সমাপ্তির সার্টিফিকেট দেয়ার ক্ষমতাও সংরক্ষণ করেন।

অথচ ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কাজ বাস্তবায়ন করে চূড়ান্ত বিল নেয়ার পর ল্যাব টেস্ট ভুয়া হিসেবে দেখানোর বিষয়টি মিথ্যা ও বানোয়াট বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়। যেহেতু ল্যাব টেস্টের বিষয়টি ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান দেখে থাকে সেক্ষেত্রে ল্যাব টেস্টের ভুয়া কাগজ জমা দেওয়ার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কোনো সুযোগ নেই। পরিশেষে মিথ্যা বানোয়াট পত্রটি বাতিল করে লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য আবেদনে অনুরোধ করা হয়।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. রেজাউল হক বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ পূর্বের অনিয়ম ঘাঁটতে গিয়ে চারটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন জালিয়াতির প্রমাণ পায়। এর মধ্যে জোহা অ্যান্ড সন্স ও নুহা ট্রেডার্স নামে দুই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করে চিঠি দেয়া হয়। কারণ হিসেবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ল্যাব টেস্টের স্বাক্ষর জালিয়াতি, প্রতারণা ও কাজে অনিয়ম পাওয়ায় তাদের লাইসেন্স স্থগিত করে।

নির্মাণসামগ্রীর মান যাচাইয়ে ল্যাব টেস্টের রিপোর্টের বিষয়টি পৌরসভা দেখে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেকোন কাজের আগে ঠিকাদারের সঙ্গে একটি চুক্তিপত্র হয়। এই চুক্তিপত্রে ঠিকাদার এবং ক্রয়কারীর দায়িত্ব ও শর্ত উল্লেখ থাকে। কাজ অনুযায়ী এই চুক্তিপত্র বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। সাধারণত আইন অনুযায়ী ল্যাব টেস্টের বিষয়টি ঠিকাদার দেখে থাকে।

২০১৯-২০ অর্থ বছরের এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের কাজের নুহা ট্রেডাসের সঙ্গে পৌরসভার চুক্তি অনুযায়ী চুক্তিপত্রের ১৬ নম্বর ক্রমিকের ১/২ ধারায় উল্লেখিত শর্ত অনুযায়ী প্রকল্প ব্যবস্থাপকের দ্বারা নির্ধারিত মানসম্মত পদ্ধতি অনুযায়ী সম্পন্ন কাজের মান নিশ্চিত করতে ঠিকাদার কর্মক্ষেত্রের অগ্রগতির উপর ভিত্তি করে উপকরণ এবং কাজের বহিরাগত পরীক্ষা করবে বলে উল্লেখ করা হয়।

এমনকি যদি প্রজেক্ট ম্যানেজার ঠিকাদারকে নির্দিষ্ট করে কাজের কোনো অংশে ত্রুটি আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখানোর নির্দেশ দেয় তবে ঠিকাদার সেই পরীক্ষা এবং নমুনা গ্রহণের জন্য টাকা দেবেন।

তিনি বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই চুক্তিপত্র বলে দেয় ল্যাব টেস্টের বিল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ট্রেজারি চালানমূলে ব্যাংকের মাধ্যমে নিজেই পরিশোধ করে থাকেন। অফিস থেকে শুধু আমরা একটি চিঠি ল্যাবে দিয়ে থাকি। এক্ষেত্রে প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে টেস্টের বিল দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই।

পৌর মেয়র মতলুবর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ২০২১-২২ অর্থ বছরে পৌরসভা যাদের পূর্বের কাজের মান সন্তোষজনক ছিলো শুধু সেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্স নবায়নের সুযোগ দিয়েছে। জালিয়াতি কিংবা প্রতারণা বা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এবার লাইসেন্স দেওয়া হয়নি।

দুই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ণের ক্ষেত্রে আবেদনের বিষয়ে মেয়র বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রতিটি কাজের গুণগতমান যাচেইয়ের জন্য ল্যাব টেস্টের বিল ঠিকাদার নিজ দায়িত্বে ট্রেজারি চালান কিংবা ব্যাংকের টাকা জমা রশিদ মূলে পরিশোধ করে পৌর প্রকৌশলীর কাছে জমা ও এক কপি নিজে সংরক্ষণ করবে। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে বুয়েটের নির্ধারিত ব্যাংকে ল্যাব টেস্টের টাকা জমার রশিদ চাইলেও তারা তা দেখাতে ব্যর্থ হন।

হাইকোর্টে রিটের বিষয়ে মেয়র বলেন, মহামান্য হাইকোর্ট ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ঠিকাদারী দুই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স আবেদনের বিষয়টি সমাধানের নির্দেশ দেয়। পরে সেই দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বুয়েটের স্বাক্ষর জালিয়াতি ও প্রতারণার প্রমাণ পাওয়ায় পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের লাইসেন্স নবায়ণ স্খগিত করে চিঠি পাঠায়।

(ঢাকাটাইমস/৩১আগস্ট/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :