জনবলের অভাব: চার মাসেও চালু হয়নি ভোলার ছয়টি আইসিইউ বেড

প্রকাশ | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০১ | আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০৬

ইকরামুল আলম, ভোলা

ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ছয়টি আইসিইউ বেড থাকলেও প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে গত চার মাসেও তা চালু করা সম্ভব হয়নি। চালু না করেই করোনা আক্রান্ত গুরুতর রোগীদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার  জন্য গত কয়েক মাস ধরে সাধারণ ওয়ার্ড থেকে আইসিইউ বেডে এনে সাধারণ বেডের মতো অক্সিজেন দেয়া হয়।

আইসিইউ ওয়ার্ডে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও নার্স থাকার কথা থাকলেও দিনে দুয়েকবার শুধু নার্স এসে সেখানে থাকা রোগীদেরকে ওষুধ দিয়ে যান। এ অবস্থায় কিছু রোগী ভোলা থেকে ঢাকা-বরিশাল গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারলেও বেশিরভাগ রোগীই আইসিইউ সাপোর্টের অভাবে মারা যায়। 

করোনা শুরুর প্রথম দিকে দেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলার মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য বিভাগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ১০টি আইসিইউ বেডের প্রস্তাব পাঠায়। এর আলোকে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) থেকে তিনটি আইসিইউ বেড, তিনটি ভেন্টিলেটর ও তিনটি হাই ফ্লো নেজাল ক্যানুলা দেয়া হয়। এরপর গত জুলাই মাসে সিএমএসডি থেকে আরও তিনটি আইসিইউ বেড দেয়া হয়। এতে ভোলার অসহায় মানুষের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে।

কিন্তু আইসিইউ বেড আসার চার মাসেও তা চালু না হওয়ায় মানুষের মনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকে বুকভরা আশা নিয়ে করোনা আক্রান্ত গুরুতর রোগীদেরকে আইসিইউ সাপোর্টের জন্য ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলেও নিরাশ হয়েই ফিরে যেতে হয় তাদেরকে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা করোনা আক্রান্ত রোগীর স্বজন মো. মোশারফ হোসেন জানান, তিনি এক সপ্তাহ আগে তার করোনা আক্রান্ত বাবাকে আইসিইউ সাপোর্ট ও হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিতে না পেরে হারাতে হয়েছে। বর্তমানে তার মাও করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। আইসিইউ ওয়ার্ডে ভর্তি থাকলেও সেখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ছাড়া কোনো কার্যক্রম নেই। মূলত করোনা আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের সান্ত্বনা দেয়ার জন্য আইসিইউ বেডে শুইয়ে রাখে।

আরেক রোগীর স্বজন মো. সুমন বলেন, ‘ভোলা হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডে আইসিইউর কোনো কার্যক্রম তো নেই। উল্টো এখানে রোগী রাখলে সাধারণ সেবাও পাওয়া যায় না। এমনকি আইসিইউ ওয়ার্ডটি সঠিকভাবে পরিষ্কারও করা হয় না। এরকম আইসিইউ না রেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এটি বন্ধ করে দেয়া উচিত।’

ভোলার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভোলার নতুন ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ১২টি আইসিইউ বেড স্থাপনের সক্ষমতা রয়েছে।  ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) দুই ধাপে ছয়টি আইসিইউ বেড এসেছে। তা আইসিইউ ওয়ার্ডে স্থাপন করা হয়েছে। তবে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম ও জনবল না থাকায় পরিপূর্ণভাবে এটি চালু করা যায়নি। তবে গুরুতর রোগীদের ছয়টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়ে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হয়ে থাকে।

ভোলার সিভিল সার্জন ডা. কে.এম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে আইসিইউ চালুর ব্যাপারে আলাপ করেছি।  তিনি আমাকে জানিয়েছেন, আইসিইউর সঙ্গে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও জনবল না পাওয়ায় সেটি চালু করা যাচ্ছে না।

সিভিল সার্জন বলেন, ‘তবে তার (তত্ত্বাবধায়ক) কাছ থেকে আইসিইউ চালুর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও জনবলের চাহিদা নিয়ে ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।  আশা করি সেগুলো পেলে দ্রুত আইসিইউগুলো চালু করা হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২সেপ্টেম্বর/কেএম)